শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

আপনারা জানেন, পৃথিবীতে সৃষ্টিকুলের মধ্যে যেমন দৃশ্যমান মানবজাতি এবং জীব-জন্তু রয়েছে, তেমনি রয়েছে অদৃশ্যমান জ্বীনজাতি ও ফেরেশতাকুল। জ্বীন সম্প্রদায়ের মধ্যেও মানুষের মতো বোবার অস্তিত্ব আছে। সেইসব বোবা জ্বীনদের মধ্য থেকে কতিপয় জ্বীন যখন মানব সমাজে চলে আসে বা বিচরণ করে, তারা অন্যান্য স্বাভাবিক জ্বীনের মতো মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারে না, আর পারে না অন্যান্য জ্বীনদের সাথেও তাদের মতামত আদান-প্রদান করতে। তাই তারা কখনও কখনও তাদের ইচ্ছেমত মানুষকে বিরক্ত করে। অন্য সময় পারে না বলে ঘুমের সময়টাকেই তারা বেছে নেয়। কখনও কখনও এই সব বোবা জ্বীন তাদের পছন্দমত মানুষের কাছে আসে এবং ঘুমের মধ্যে তার উপর ভর করে। পছন্দমত বলছি এ কারণে, যেহেতু তারা দুনিয়ার সকল মানুষকেই ধরে না। ফলে অনেক মানুষই বলে থাকে যে, “আমাকে তো কখনই বোবায় ধরে না?” যাই হোক, বোবা জ্বীনরা কখনও দুষ্টামী করেই কারও উপর ভর করে, আবার কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে ভয় দেখানোর জন্য কিংবা বিরক্ত হয়েই তার উপর ভর করে। তবে ঠিক কি কারণে তারা এমনটি করে, তা জানা সম্ভব হয় না এ কারণে যে, তারা বোবা (হাজারবার জিজ্ঞেস করলেও এরা আপনাকে উত্তর দিতে পারবে না) । তাই শুধু অনুমান করা যায় মাত্র। এমনও ঘটেছে যে, সারা জীবনে কোনো কোনো মানুষকে মাত্র একবার বোবায় ধরে, আবার কেউ কেউ বহুবার তাকে বোবায় ধরেছে বলেও স্বীকার করে। এর সঠিক কারণ জানা যায় না যে, কেন কারো ক্ষেত্রে কম আর কারো ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে ঘটে থাকে? আল্লাহ পাক এবং তাঁর রসূলই এর অধিক ভাল জানেন।

Call

বোবায় ধরা যে জ্বীন দ্বারা ঘটিত একটি ঘটনা (বিজ্ঞানতার ব্যাখ্যা করতে পারুক না না-ইপারুক) তা বুঝা যায়,কোন দরূদ শরীফ বা সূরা ইত্যাদি পড়লে বোবায় ধরারপ্রভাবটা আর থাকে না এবং মুহূর্তের মধ্যেই চলে যায়।অনেকের ক্ষেত্রে সাথে সাথে চলে যায়, আবার অনেকেরক্ষেত্রে দোয়া-কালাম পাঠ শুরু করার কিছুক্ষণ পর চলেযায়। এরপর অনেক ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাপ্রাপ্তব্যাক্তিউঠে বসে, আবার অনেকেই ঘামতে থাকে, অনেকে আবারভয়ে হাঁপাতে থাকে। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরাযদি বিশ্বাস করি যে, আমরা আশরাফুল মাখলুকাত, ওরাআমাদের কিছুই করতে পারবে না এবং এক আল্লাহর উপরনির্ভর করি, তাহলে এরকম ঘটনা আমাদের জন্য কোনব্যাপারই না।এমনও দেখা গেছে যে, অভিজ্ঞতাপ্রাপ্তব্যক্তিবিছানায় শয়ন করার দু’-এক মিনিটেরমধ্যেই (অর্থাৎ, তখনওসে সম্পূর্ণ সচেতন) তার উপর কোনো কিছু এসে ভর করেছে।অর্থাৎ, বৈজ্ঞানিক পরিভাষা স্লিপিং প্যারালাইসিস,যা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেলে ঘটতে পারে, এমন যুক্তিএ ক্ষেত্রে অচল হয়ে যায়। আর হ্যাঁ, এ ক্ষেত্রেঅভিজ্ঞতাপ্রাপ্তব্যক্তি কর্তৃক বোবা জ্বীনকে দেখেফেলার সম্ভাবনাই তুলনামূলক বেশি, কেননা পুরোপুরিঘুমিয়ে যায় নি এমন ব্যক্তির উপরে blood bending করাজ্বীনের জন্য দুষ্করই বটে।আবার এমনও দেখা গেছে যে, অভিজ্ঞতাপ্রাপ্তব্যক্তিপুরোপুরি উপুড় হয়ে শয়ন করে নি, বরং এককাত হয়ে ডান বাবাম দিকে হয়ে শুয়ে আছে, এই অবস্থায়ও বোবা এসে ভরকরে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের অথর্ব পরিভাষাস্লিপিং প্যারালাইসিস, যার মূল যুক্তিই হচ্ছে, ঘুমন্তব্যক্তি লম্বালম্বিভাবে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকে বলে তারঅঙ্গ-প্রত্যঙ্গেরক্ত জমাট বেঁধে যায়, তাই ঐ অনুভূতি হয়,এমন যুক্তি নিতান্তই খোঁড়া ও অচল।এছাড়াও কোনো কোনো অভিজ্ঞতাপ্রাপ্তব্যক্তিরস্বীকারোক্তিতে জানা গেছে, বোবায় ধরার (জ্বীনআসার) আগে বা (জ্বীন চলে যাওয়ার) পরে তারা যদিআধো-ঘুমন্ত অবস্থায় থাকেন, তবে ঘরে শব্দ শুনতে পান।অর্থাৎ বোবা ধরার আগে, জানালা দিয়ে কোনো কিছুআসার শব্দ আর চলে যাওয়ার পর একইভাবে জানালা দিয়েকোনো কিছু চলে যাওয়ার শব্দ শুনে থাকেন। তবে এইঅভিজ্ঞতা সবাই লাভ করেন না। আর এই শব্দওবৈজ্ঞানিক যুক্তি স্লিপিং প্যারালাইসিসকে সমর্থনকরে না, বরং কোনো অতিপ্রাকৃতিক কিছুর অস্তিত্বইস্বীকার করে।বোবা ধরার সময়, বা চলে যাওয়ার মুহূর্তে কেউ কেউ উক্তবোবা জ্বীনকে দেখে ফেলতে পারেন।এমন হয়েছে যে,জ্বীনের আকৃতি-প্রকৃতি পরিষ্কার বুঝা যায় নি, শুধু কালোবিকট এক আকৃতির অস্তিত্ব উপলব্ধি করা গিয়েছে। আবারএমনও হয়েছে যে, জ্বীনটি তার আসল রূপ বা কোনোকুৎসিত চেহারা নিয়ে অভিজ্ঞতাপ্রাপ্তব্যক্তিকেদেখা দিয়েই উধাও হয়ে গিয়েছে। তবে জ্বীন দেখাদিয়েছে, এমন ঘটনা দুর্লভ।