বোবায় ধরা (ইংরেজি: Sleep paralysis) হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যখন একজন ব্যক্তি ঘুমিয়ে পড়া বা ঘুম থেকে জেগে উঠার সময়ে শরীরের কোন অংগ-প্রত্যংগ নাড়াতে না পারার একটি অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যায়। অন্যভাবে, যখন কাউকে বোবায় ধরে, তখন সে তার শরীরের কোন অংগ-প্রত্যংগ নাড়াতে পারে না, অসাড়তা অনুভব করে। এটি ঘটে একজন ব্যক্তির ঘুমিয়ে পড়া বা জেগে উঠার আগমুহুর্তে। বোবায় ধরা হচ্ছে ঘুমন্ত অবস্থা এবং জাগরণের মধ্যবর্তী একটি অবস্থান। এটি ঘুমোনর মুহুর্তে অথবা ঘুম থেকে জেগে উঠার আগমুহুর্তে হতে পারে। বোবায় ধরা ব্যক্তিটি প্রায়ই একটি ভয়ের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যায়, ভয়ের কোন দৃশ্য দেখতে পারে (যেমন, ঘরের ভেতরে কারো অনাকাংখিত উপস্থিতি)।এবং সেই মুহুর্তে বোবায় ধরা ব্যক্তিটি নড়তে পারে না। ধরে নেওয়া হয় REM sleep এ বিঘ্ন ঘটার কারণে বোবায় ধরা ব্যপারটি ঘটে। বোবায় ধরার সাথে কিছু মানসিক রোগ যেমন narcolepsy, migraine, anxiety disorder, এবং obstructive sleep apnea এর যোগসুত্র আছে বলে ধরা হয়। তবে, এসব মানসিক রোগ না থাকলেও একজন ব্যক্তি বোবায় ধরা এ আক্রান্ত হতে পারে। [১][২] যখন অন্য কোন রোগের সাথে যোগসূত্র থাকে, বোবায় ধরা সাধারণত স্নায়বিক ব্যাধি narcolepsy এর কারণে হতে পারে।
আসলে মস্তিস্ক তখন স্বপ্নের মত দৃশ্য তৈরি করে রেম ঘুমে পতিত হওয়ার কয়েক সেকেন্ড আগে – সেই ফাঁকে অনেকে ভুত-প্রেতও দেখে ফেলতে পারেন বা বুকে চাপ দিয়েকিছু মেরে ফেলছে ইত্যাদি নানান ধরনের স্ক্যেরি জাতীয় বিষয় দেখতে পারেন ! এর মূলকারণ হলো মস্তিষ্কের মধ্যভাগে হাইপার ভিজিলেন্স স্টেট একটিভ্যাশনের কারণে। ভিজিলেন্স সিস্টেম সাধারণত শরীরকে রক্ষাকারী এক ধরণের মেকানিজম যা বিভিন্ন বিপদের মাত্রাকে আলাদা করে। অনেকেই মনে করেন অলৌকিক কিছু এই অবস্থার সৃষ্টি করে। কিন্তু আসলে এটি সম্পূর্ণই শারীরবৃত্তীয় একটি ব্যপার ।অন্যদিকে শ্বাস নিতে না পারার কারণে বুকের উপর চড়ে বসে থাকে কি যেন একটা মনে করেন তার মুল কারন, মূলত ভিজিলেন্স সিস্টেমের অতি সতর্কতা এবং সেইসব মাসলের প্যারালাইসিস ভাব হওয়া, যা কিনা সাময়িক ভাবে নিঃশ্বাস বন্ধের কারণ ঘটায়। আরআইএম এর বিভিন্ন নিঃশ্বাস প্রক্রিয়াও এর সাথে জড়িত।( ফিজিও-বায়োক্যামিস্ট্রি ও প্যাথলজিক্যাল কিছু সুত্র )এর মুল কারন হছছে আমাদের এই জেগে থাকা সম্পর্কে মস্তিষ্ক কিছু সময় অবগত না থাকায় নার্ভ রিসিপ্টর গ্লিসিন ( এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার ) এবং মেটাবট্রপিক গাবা (gamma-aminobutyric acid ) সেন্সর অনুভূতিকে ব্লক করে রাখে এবং কিছুটা অক্সিজেনের ও অভাব হয় এবং সে কারনেই আমরা অস্বাভাবিকঅনেক কিছু দেখতে পাই। মুলত একেই বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস বলা হয়ে হয় ।অন্য দিকে – অটো-ইমিউনিটি সিস্টেম শরীরের উৎপন্ন প্রোটিন থেকে মস্তিষ্ক কোষে হাইপোসারটিন বা অরেক্সিন( অরেক্সিন হচ্ছে এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার, যার কাজ হল শরীরের- উত্তেজনা, অনিদ্রা, এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করা এবং সারা শরীরের মাংসপেশির সাথে স্নায়ুবিক স্পর্শকাতা সোমাটো সেন্সুরি কারটেক্সে পৌঁছে দেওয়া – এর অন্য নাম নিউরো- অপেপ্টাইড হরমোন – মানব মস্তিষ্কে কয়েক মিলিয়ন স্পর্শকাতর কোষের মধ্যে মাত্র কয়েকশ কোষ এই অরেক্সিন উৎপাদন করে )উৎপাদন করতে পারেনা বিধায় ক্ষেন্দ্রিয় স্নায়ু তন্ত্র গভীর ঘুমের সময় শরীরের অন্যান্য অংশের খবর রাখতে পারেনা ঠিক সে সময়কেই আমরা বোবায় ধরে বলে থাকি বা নার্ভ রিফ্লেক্স কে ভৌতিক কিছু দেখিয়ে থাকে । অবশ্য সে সময় মেলাটোনিন হরমোনের মাত্রা ও সর্ব নিম্ন স্থরে পৌঁছে যায় ।যদি ও এইসব নিউরোট্রান্সমিটার সমুহ ঘুমুতে যাবার সময় কিংবা ঘুম থেকে জেগে উঠবার সময় যে কোন সময়েই হতে পারে- তারপর ও ঘুমের দ্বিতীয় স্থরেই বেশী হয় । যাকে রেম স্লিপের বিঘ্ন ঘটার কারন মনে করা হয় । ঘুমানোর পর যখন আমাদের মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় অনুভূতি তন্ত্রে গ্লিসিন এবং মেটাবট্রপিক গাবার স্বল্পতায়সিগন্যাল পাসিং কমে যায় বা বন্ধ করে দেয় ( রেম স্লিপে ) – কারও কারও ক্ষেত্রেঘুম ভাঙার পরও মস্তিষ্ক সাথে সাথে মাসল সমুহে সিগন্যাল পাসিং শুরু করে না, যত সময় করবেনা ঠিক তথ সময় বোবায় ধরে থাকে ।