হানাফী ফিকাহ্‌ কি ভাবে সংকলিত হয়?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
mahfuz08

Call
ইসলামের ইতিহাসে ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) সর্বপ্রথম আলাদাভাবে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ফিকাহ সংকলন করেছিলেন।তিনি ফিকাহকে কুরআন-সুন্নাহের আলোকে সাজাতে আরম্ভ শুরু করলেন।
।তার চল্লিশ জন ছাত্রকে নিয়ে তিনি একটি বোর্ড গঠন করে তা ফিকাহসমূহকে তিনি সংকলিত করেন। তার ছাত্রদের ভিতর ইয়াহইয়া বিন আবী যায়দ, আবূ ইউসুফ,ইমাম মুহাম্মদ, হাফস বিন গিয়াস ছিলেন বিখ্যাত।মুহাদ্দিস ওয়াকী ইবন জুররাহ বলেন,
কি করে ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) ভুল করতে পারেন যেখানের তার সাথে তার সাথে ইমাম মুহাম্মদ,আবূ ইউসুফ,যুফার এর মত দক্ষ ফকীহ, হাফস বিন গিয়াস, মেন্দাল ও হাব্বানের মত দক্ষ মুহাদ্দিস ছিলেন, কাসিম বিন মান এবং ফুযয়েল বিন আইয়ায(রঃ) এর মত মুত্তাকী ব্যক্তি ছিলেন।সেখানে কোন ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে না এবং তা হলে তারা তার বিরুদ্বে প্রতিবাদ করত।
 সুদীর্ঘ ২২ বছর পরিশ্রন করে তিনি কুতুবী হানীফা নামক একটি গ্রন্থ সংকলন করেছিলেন। এত সর্বমোট তিরাশি হাজার মাসালা লিপিবদ্ব করা যায় যার ভিতর প্রায় ৩৮ হাজার মাসালা ইবাদত সংক্রান এবং ৪৫ হাজার মাসালা সামাজিক বিধান ও দণ্ডবিধি সংক্রান্ত। এটি ছিল ইতিহাসের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকীহ গ্রন্থ। এর জন্য তিনি সেই সময়ে ইমামে আযম বা শ্রেষ্ঠ ইমাম হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন।
আল-মুওয়াফফিক মাক্কী(রঃ) বলেন,
ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) এর ফিকহী মাসালা পরস্পর আলোচনা এবং পরামর্শের ভিত্তিতে রচনা হত। মজলিশে শূরার সাথে আলোচনা ছাড়া তিনি নিজে একা কিছুই করতেন না।
ফিকাহ সংকলনের পদ্বতি
তিনি যেভাবে তার মাসালাসমূহের সমাধান দিতেন তা ছিল এমন যে, তিনি কোন সমস্যার সমাধান দেওয়ার জন্য তিনি প্রথমে কুরআন ঘাটাঘাটি করতেন। তিনি কুরআনের প্রত্যক্ষ,পরোক্ষ,সুপ্ত,ইশারা-ইঙ্গীতে যেকোনভাবে প্রাপ্ত ইলমের দ্বারা সমাধান দিতেন। যদি তা কুরআনে পাওয়া না যেত তাহলে তা হাদীসের দ্বারা দেওয়া হত। যদি তা তিনি হাদীসের ভিতর না পেতেন তাহলে তিনি তার সমাধান সাহাবাদের ফাতওয়া এবং তা না হলে তাবিঈদের ফাতওয়ার আলোকে প্রদান করতেন। তা না হলে তিনি ইজমার উপর নির্ভর করতেন।সেখানেও যদি তিনি তার ফয়সালা না পেতেন তাহলে তিনি কুরআন,হাদীস ও ইজমার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কিয়াস বা ইসতিহসানের মাধ্যমে ফাতওয়া প্রদান করতেন।যেসকল বিষয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয় নাই সেইসকল ব্যাপারে তিনি সমাধান দিয়ে গিয়েছেন। তার মাসালা পরবর্তীতে বাড়তে বাড়তে ৫ লক্ষ হয়। তার এই ফিকহ সংকলন মানুষের ঈমান-আকীদা, আমল আখলাক, কাজ-কারবার, ব্যবসা-বাণিজ্য,আইন –আদালতের জন্য বিশেষভাবে সাহায্য করেছে।
তিনি ফিকহের ব্যাপারে যেই অবদান রেখে গেছেন সেই ব্যাপারে ইমাম শাফিঈ(রঃ) বলেন,
মানবজাতি ইলমে ফিকহে আবূ হানীফার সন্তান।
আল্লামা মাক্কী বলেন,
ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) ই সর্বপ্রথম ইলমে ফিকহ সংকলন করেছিলেন
আব্দুল্লাহ বিন মুবারাক বলেন,
তিনি ছিলেন ইলমের খাটি নির্যাস।
ইমাম আমাশ,আনাস বিন মালিক,ইমাম মালিক(রঃ) সকলে এই কথায় নির্ধিধায় বলেছেন যে, তিনি একজন বড় ফকীহ ছিলেন।
হাফিয যাহাবী বলেন,
ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) যদিও হিফযে হাদীসের একটি বিরাট কৃতিত্বের অধিকারী ছিলেন। তারপরও তিনি অনেক স্বল্প সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেছেন। এর কারণ ছিল এই যে, তিনি হাদীস রিওয়াতের পরিবর্তে সেখান থেকে ফিকহী মাসালা বের করা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।
অনেকে তার বিরুদ্বে এই অভিযোগ করেন যে, তিনি মাসালা প্রণয়নে হাদীস এড়িয়ে চলতেন।কিন্তু এই অভিযোগকারীদের অভিযোগ সত্য নয় তা তার এই বক্তব্যের দ্বারা প্রামাণিত হয়। এছাড়াও ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) বলেন,
ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহর লানত, যে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর কথার বিরুদ্বারাচণ করল। তার বদৌলতে আল্লাহ আমাদের ঈমানের মর্যাদা দান করেছেন এবং আমাদেরকে ধ্বংসের হাতে থেকে রক্ষা করেছে।

তিনি দূর্বল হাদীস ছাড়া কোন ক্ষেত্রে হাদীসকে বর্জন করতেন না।তিনি রায়কে কখনও হাদীসের উপর প্রাধান্য দিতেন না।

 

সূত্রঃ http://islamithink.blogspot.com/2013/08/blog-post_9911.html

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ