শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

শবে বরাতের নামাজ এবং নিয়ম কানুন: প্রকৃত অর্থে শবে বরাতের নামাজ বলে আলাদা কিছু নেই, যেহেতু এই রাতটি ইবাদত বন্দেগি করে কাটাতে হবে তাই হাদিসেই এই সমাধান দেয়া হয়েছে। আর বিশ্ব মুসলিম এই বিশেষ কিছু ইবাদত পালন করে থাকেন। হাদিসের আলোকে আমি সেগুলোর কথাই নিম্নে উল্লেখ করছি: সন্ধ্যায়: এই রাতে মাগরিব নামাজের পর হায়াতের বরকত, ঈমানের হেফাযত এবং অন্যের মুখাপেক্ষী না হওয়ার জন্য দুই রকাত করে মোট ৬ রকাত নফল নামায পড়া উত্তম। এই ৬ রাকাত নফল নামাজের নিয়ম: প্রতি রকাতে সূরা ফাতিহা এরপর যে কোন একটি সূরা পড়তে হবে। দু রকাত নামায শেষে করে সূরা ইয়াছিন বা সূরা ইফলাছ শরীফ ২১ বার তিলায়াত করতে হবে। শবে বরাতের নফল নামাজ: ১। দুই রকাত তহিয়াতুল অযুর নামায। নিয়মঃ প্রতি রকাতে আল হামদুলিল্লাহ ( সূরা ফাতিহা) পড়ার পর , ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং তিন বার ক্বুলহু আল্লাহ শরীফ ( সূরা এখলাছ) । ফযীলতঃ প্রতি ফোটা পানির বদলে সাতশত নেকী লিখা হবে। ২। দুই রকাত নফল নামায। নিয়মঃ ১নং নামাযের মত, প্রতি রকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর, ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং ১৫ বার করে সূরা এখলাছ শরীফ, অতপর সালাম ফিরানোর পর ১২ বার দুরূদ শরীফ। ফযীলতঃ রুজিতে রবকত, দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি লাভ করবে, গুনাহ হতে মাগফিরাতের বখসিস পাওয়া যাবে। ৩। ৮ রকাত নফল নামায , দু রকাত করে পড়তে হবে। নিয়মঃ প্রতি রকাতে সূরা ফাতিহার পর , সূরা এখলাছ ৫ বার করে। একই নিয়মে বাকি সব। ফযীলতঃ গুনাহ থেকে পাক হবে , দু’আ কবুল হবে এবং বেশী বেশী নেকী পাওয়া যাবে। ৪। ১২ রকাত নফল নামায , দু রকাত করে। নিয়মঃ প্রতি রকাতে সূরা ফাতিহার পর, ১০ বার সূরা এখলাছ এবং এই নিয়মে বাকি নামায শেষ করে , ১০ বার কলমা তওহীদ, ১০ বার কলমা তামজীদ এবং ১০ বার দুরূদ শরীফ। ৫। ১৪ রকাত নফল নামায, দু রকাত করে। নিয়মঃপ্রতি রকাত সূরা ফাতিহার পর যে কোন একটি সূরা পড়ুন। ফযীলতঃ যে কোন দু’আ চাইলে তা কবুল হবে। ৬। চার রকাত নফল নামায, ১ সালামে পড়তে হবে। নিয়মঃ প্রতি রকাতে সূরা ফাতিহা পর ৫০ বার সূরা এখলাছ শরীফ। ফযীলতঃ গুনাহ থেকে এমনভাবে পাক হবে যে সদ্য মায়ের গর্ভ হতে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। ৭। ৮ রকাত নফল নামায, ১ সালামে। নিয়মঃ প্রতি রকাতে সূরা ফাতিহার পর ১১ বার সূরা এখলাছ শরীফ।

আজ পবিত্র শব-ই-বরাত বা লাইলাতুল বরাত। শাবান মাসের ১৫ তারিখে শবে বরাতের রাত্রী বলে ঘোষনা করা হয়। শব শব্দটি ফার্সি যার অর্থ রাত আর বরাত শব্দের অর্থ ভাগ্য। বিশেষ এ রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা আগামী এক বছরের জন্য মানুষের রিজিক, জন্ম-মৃত্যু ইত্যাদি বিষয় নির্ধারণসহ তার সৃষ্ট জীবের ওপর অসীম রহমত নাজিল করে থাকেন বলে এ রাতকে শবেবরাত বা ভাগ্যরজনী বলা হয়। এক হাদিসে উল্লেখ আছে, ব্যাভিচারী ও মুশরিক ছাড়া আর সবার মনোবাসনা এই রাতে পূরণ করা হবে। তাই এই সৌভাগ্যের রাতে আমরা যেন একটু কষ্ট করে আল্লাহর দরবারে হাত উঠাই। রহমত চাই, মাগফেরাত চাই, উন্নতি চাই আমাদের দেশ, দেশের মানুষ, নিজের পরিবার, আত্বীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের জন্য। এই রাত্রী হল ক্ষমা প্রার্থনার জন্য এক উত্তম রাত্রী, যার ফজীলত হাজার রাতের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। এ রাতে বান্দা তার সকল পাপ কাজের ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহর আরশ উন্মুক্ত পাবে। তাই আমাদের উচিত এই রাতে বেশী বেশী ইবাদত করা, নফল নামাজ পড়া, জিকির করা, কুরআন পাঠ করা। এই দিনে সূর্য অস্তমিত হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহ পাকের নূর সর্বনিম্ন আকাশে অবতীর্ণ হয় এবং বলা হয়- কে আছ গুনাহ মাফ করাতে চাও? কে আছ তার মনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করাতে চাও? কে আছ তার রুজী বৃদ্ধি করাতে চাও? কে আছ তার রোগ, শোক, দুঃখ কষ্ট দূর করাতে চাও? এরূপ ঘোষণার সময় যদি কোন বান্দা হাত তুলে মুনাজাত কর। শব-ই-বরাতের নামাজ: সাধারণ নফল নামাজের মতই এই নামাজ। যা দুই রাকাত বিশিষ্ট। যত খুশি পড়া যায়। এশার নামাজ শেষ করে বেতের নামাজ পড়ার আগে এই নামাজ পড়া শুরু করা হয়। সূরা ফাতিহার সাথে যে কোন সূরা মিলিয়ে এই নামাজ পড়া যায়। অনেকে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা ইখলাস বেজোড় সংখ্যক বার মিলিয়ে পড়েন। ৩, ৫, ৭, ৯, ১১ বার ইত্যাদি। পড়তে পারেন কিন্তু লক্ষ্য রাখবেন ভুল যেন না হয়। তবে সূরা ফাতিহার সাথে সাধারণ ছোট ছোট সূরা মিলিয়ে পড়াই উত্তম। শব-ই-বরাতের নামাজের নিয়ত: আপনি যে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে দাড়িয়েছেন মনের মধ্যে এমন ভাব আনলেই আপনার নিয়ত হয়ে যাবে। আরবি, বাংলা যে কোন ভাষাতেই নিয়ত করতে পারেন। বাংলায় নিয়ত করলে এই ভাবে করতে পারেনঃ ‘শব-ই-বরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ কিবলামুখী হয়ে পড়ছি, আল্লাহু আকবর।’ সতর্কতা: মনে রাখতে হবে ফরজ নফলের চেয়ে অনেক বড়। শব-ই-বরাতের নামাজ যেহেতু নফল সেহেতু নফল পড়তে পড়তে ফরজ পড়া ভুলে গেলে বা ঘুমের কারণে পড়তে না পারলে কিন্তু সবই শেষ। অর্থাৎ নফল নামাজ পড়ে পড়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন আর এই দিকে ফজরের নামাজ পড়তে পারলেন না। সাবধান এ যেন না হয়। ভাল হয় শব-ই-বরাতের নফল শেষ করে বেতের নামাজ পড়ে এরপর ফজর পড়া। যাই করেন নামাজ পড়েন আর ঘুমান সমস্যা নেই, ঠিক সময় মত উঠে ফজর নামাজ যেন পড়তে পারেন সেই দিকে খেয়াল রাখবেন।