খানিকটা যুক্তিবাদী দার্শনিক উত্তর দিই: ঈশ্বর সর্বশক্তিমান এবং সর্বগুণের আধার। তিনি সর্বজ্ঞ এবং তিনি জানেন কখন কী করতে হবে। তিনি ইচ্ছা করলে নিজেকে প্রকাশ করেন, ইচ্ছা না করলে না। কিন্তু এই বর্তমানে তিনি করবেন না। কেন করবেন না? তিনি মানবজাতির পরীক্ষা নিচ্ছেন। এই পরীক্ষা যে কে তাঁকে বিশ্বাস করে আর কে নয়। তিনি সবাইকে পরীক্ষা নিচ্ছেন। নাস্তিকরা বিশ্বাস করে স্রষ্টা নেই। এর কারণ হিসেবে বিবর্তনবাদ দেখায়, সবার ব্যাকগ্রাউন্ড দেখায় ইত্যাদি। বিজ্ঞানকে (বিবর্তনবাদ) তার জায়গায় রাখলাম। কিন্তু বিজ্ঞান তো এত শক্তিশালী না যে এটার কথা মানতেই হবে। সময়ের সাথে সাথে এটা চেঞ্জ হয়। তাহলে বিজ্ঞান মানব কেন? ১০,০০০ বছর আগের বিজ্ঞান, বর্তমানের বিজ্ঞান একেবারে গ্রহ-নক্ষত্রের পার্থক্যের মতো। ৫০০ বছরের মধ্যে বর্তমানের বিজ্ঞান চেঞ্জ হবে না এটা কে বলেছে? সুতরাং বিশ্বাস বারবার চেঞ করনেওয়ালা বিজ্ঞানবাদ-ই কি ধর্ম হবে? খাঁটি বুদ্ধিমানদের কাছে এটা বুলশিট। তাই বিজ্ঞানবাদ আমি মানি না, তবে বিজ্ঞান মানি (কিন্তু অন্ধভাবে না)। আর ব্যাকগ্রাউন্ড? এটা তো মানুষের আবিষ্কার!!! নিজেদের স্বার্থ অর্জনের (হাসিল/কেড়ে নেয়া) জন্যে। এরপর মনে হয় না যে আমার (আর যারা যারা বুঝেছে) আস্তিক হতে কোনো সমস্যা আছে। আচ্ছা… উনার অবস্থান? নিশ্চয়ই আল্লাহই হচ্ছেন তোমাদের রাব্ব, যিনি আসমানসমূহকে এবং যমীনকে সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হলেন, তিনি প্রত্যেক কাজ পরিচালনা করে থাকেন। তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করার কেহ নেই; এমন আল্লাহ হচ্ছেন তোমাদের রাব্ব। অতএব তোমরা তাঁর ইবাদাত কর; তবুও কি তোমরা বুঝছনা? [সূরা ইউনুস, আয়াত ৩] নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি আসমান সমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপর উঠেছেন। [সূরা আরাফ, আয়াত ৫৪] উল্লেখিত আয়াতগুলো দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তায়ালা আরশে সমুন্নত আছেন। কিভাবে সমুন্নত আছেন, এ কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। ইমাম মালেক রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ “কাইফিয়াত বা (সমুন্নত হওয়ার) পদ্ধতি অজ্ঞাত আর ইসতাওয়া বা সমুন্নত হওয়াটা জ্ঞাত। এর প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব এবং এ বিষয়ে প্রশ্ন করা বিদআত (নিষিদ্ধ)”। [ইমাম বাইহাক্বীর আল আসমা ওয়াস সিফাত, পৃষ্ঠা ৪০৮ ।। তামহীদ ৭/১৫১] মু’আবিয়া বিন আল হাকাম আস সুলামী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমার এক দাসী ছিল। সে উহুদ ও জাওওয়ানিয়্যাহ এলাকায় আমার বকরীপাল চড়াতো। একদিন আমি হঠাৎ সেখানে গিয়ে দেখলাম তার বকরীপাল থেকে বাঘে একটি বকরী নিয়ে গিয়েছে। আমি তো অন্যান্য আদম সন্তানের মত একজন মানুষ। তাদের মত আমিও ক্ষোভ ও চপেটাঘাত করলাম। এরপর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আসলাম (এবং সব কথা বললাম) কেননা বিষয়টি আমার কাছে খুবই গুরুতর মনে হলো। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল, আমি কি তাকে মুক্ত করে দিবো? তিনি বললেনঃ তাকে আমার কাছে নিয়ে আসো। সুতরাং আমি তাকে এনে রসূলুল্লাহর কাছে হাজির করলাম। তিনি তাকে (দাসীকে) জিজ্ঞেস করলেনঃ আল্লাহ কোথায়? সে বললঃ আকাশে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি কে? সে বললঃ আপনি আল্লাহর রসূল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ তুমি তাকে মুক্ত করে দাও, সে একজন মুমিনাহ নারী। [সহীহ মুসলিম, অনুচ্ছেদঃ মসজিদ ও সালাতের স্থান সমূহ, হাদিস নং ১০৮৬] . আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ যয়নব (রাদিয়াল্লাহু আনহা) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অন্যান্য স্ত্রীগণের উপর গর্ব করে বলতেন যে, তাঁদের বিয়ে তাঁদের পরিবার দিয়েছে আর আমার বিয়ে আল্লাহ সপ্তম আসমানের উপর থেকে সম্পাদন করেছেন। [সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ তাওহীদ, হাদিস নং ৭৪২০] . আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যমীনে যারা আছে তাদের প্রতি দয়া করা, আকাশে যিনি আছেন (আল্লাহ) তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। [তিরমিযী, হাদিস নং ১৮৪৭ ।। আবু দাউদ, হাদিস নং ৪২০৯] . ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ যে ব্যক্তি বলবে আল্লাহ আসমানে আছেন নাকি যমীনে আছেন আমি তা জানি না, সে কুফরী করবে। অনুরূপভাবে যে বলবে আল্লাহ আরশে আছেন কিন্তু তাঁর আরশ আসমানে নাকি যমীনে আমি তা জানি না, সেও কুফরী করবে। [আল ফিকহুল আবসাত, পৃষ্ঠা ৪৬ ।। মাজমুউ ফাতওয়া ইবনু তাইমিয়্যাহ, ৫/৪৮ পৃষ্ঠা] . ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ আরো বলেনঃ আল্লাহ তায়ালা উপর থেকে বান্দার আহ্বানে সাড়া দেন, নিচ থেকে নয়। কেননা নিচ রুবুবিয়্যাহ ও উলুহিয়্যাতের কোন গুণের মধ্যে পড়ে না। [আল ফিকহুল আবসাত, পৃষ্ঠা ৫১]