প্রশ্নের দুটি দিক রয়েছে, এক কারো সম্মানার্থে মাথা অবনত করা; দুই কদমবুসি করে সালাম করা। এবার আসি প্রথম যে বিষয়টি; কারো সম্মানার্থে মাথা অবনত করা। যাকে আরবিতে সিজদা করা বলে। আর বাংলায় মাথা ঝুকানো বা অবনত করা বলে। ইসলামে কোনো অবস্থাতেই আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য সিজদা করা বৈধ নয়। চাই তা সম্মান প্রদর্শনের জন্য হোক বা ইবাদতের উদ্দেশ্যে হোক। যদি তা ইবাদতের উদ্দেশ্যে হয় তাহলে তা স্পষ্ট শিরক হবে। যা আল্লাহ কখনোই ক্ষমা করবেন না। অবশ্য তওবা করলে তিনি চাইলে ক্ষমা করতে পারেন ইহা তার ইচ্ছাধীন। আর যদি সম্মান প্রদর্শনের জন্য হয় ইহারও অনুমতি ইসলামে নেই। হাদিস শরীফে ঘটনা বর্ণিত আছে; হযরত কায়েস ইবনে সা’দ রাযি. বলেন আমি হিরাতে (একটি প্রাচীন শহর) এসে দেখলাম তারা তাদের ‘মারযুবানকে’ (বীর বাহাদুরদেরকে) সিজদা করছে। আমি মনে মনে বললাম, রাসূল বেশি অধিকার রাখেন যে তাঁকে সিজদা করা হবে। এরপর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললাম, আমি হিরাতে এসে দেখলাম তারা তাদের ‘মারযুবানকে’ (বীর বাহাদুরদেরকে) সিজদা করছে।ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি বেশি অধিকার রাখেন যে, আমরা আপনাকে সিজদা করবো! তখন তিনি বললেন, তুমি আমাকে বলো, যদি আমার কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করো তাহলে কি তাতে সিজদা করবে? সাহবি বলেন আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তোমরা এমন করো না। যদি আমি কোন ব্যক্তিকে অন্য কাউকে সেজদা করার আদেশ দিতাম, তাহলে আমি স্ত্রীদের আদেশ দিতাম তাদের স্বামীকে সেজদা দিতে। [কিন্তু সেজদা আল্লাহ ছাড়া কাউকে দেয়া জায়েজ নয়, তাই এ আদেশ দেয়া হয়নি’।]সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৪০, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৫০৪. এখান থেকে এ কথা দিবালোকের ন্যয় স্পষ্ট যে, সম্মান প্রদর্শনের জন্যও কাউকে সিজদা করা যাবে না। তিনি যত বড়ই মুরুব্বী হন না কেন। কেননা বিশ্ব নবীর চেয়ে বড় সম্মানী ও মুরুব্বি পৃথিবীতে দ্বিতীয়জন জন্মেনি ভবিষ্যতেও জন্মিবে না। তারঁ জীবদ্দশায় কোনো সাহাবি তাঁকে সিজদা করার কথা কোনো কিতাবে বর্ণিত হয় নি। অথচ তাঁদের কেউ কেউ শতশতবার হাজার হাজর বার নবীজির দরবারে এসেছেন।এরপরেও যদি কেউ কোনো কারণে করে ফেলে তা স্পষ্ট শিরক হবে না। কিন্তু অন্য কারেণে তা শিরকের সাদৃশ্য হবে যা নিষিদ্ধ। তাই ইহা থেকেও বিরত থাকাই শ্রেয়। সম্মান প্রদর্শনের আরো অনেক বৈধ পদ্ধতি আছে তা অবলম্বন করা যেতে পারে। এবার আসি দ্বিতীয় বিষয় সালাম সম্পর্কে। সালাম তো আমাদের কাছে খুবই স্পষ্ট বিষয়, যা ওহির মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে। এটি কারো তৈরি করা বিষয় না। বরং আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা যখন আদম আ. কে সৃষ্টি করেছেন, সর্বপ্রথম আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ সালাম শিক্ষা দিয়েছেন এবং এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন যে এটি কেয়ামত পর্যন্ত আগত তোমার সন্তানদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি অভিবাদন। সুতরাং এ সালামের শব্দ যেমন নির্দিষ তেমনি এর পদ্ধতিও নির্ধারিত। এর মধ্যে বৃদ্ধি করাও জায়েজ নেই, নতুন করে তৈরি করাও জায়েজ নেই। এর পদ্ধতি হলো একজন মুসলমান অপর মুসলমানের সাথে সাক্ষাৎকালে প্রথমে একে অপরকে সালাম বলবে। এবং চাইলে পরস্পর হাত মিলিয়ে মুসাফাহা করবে যা সুন্নাত। এরও বেশি চাইলে মুরব্বীদের যেমন মা-বাবা, বা উস্তাদ, গুরুজনদের হাতে অথবা কপালে চুমু দেয়ার কথাও হাদিসে আছে এবং এগুলোও সুন্নাহ সম্মত। কিন্তু পা ছুঁয়ে আপনি যেটাকে সালাম বলছেন, এটি সালামই না। ইসলামী পরিভাষায় এটিকে সালাম বলা হয় না। এটাতো কদমবুসি। আর এ কাজ মূলত একেবারেই গর্হিত কাজ। হয়তো এটা আমরা নিজেরাই আবিষ্কার করে একটা অবস্থা তৈরি করে নিয়েছি। অথবা আমরা কারো অনুকরণ, অনুসরণ করছি। বিভিন্ন সংস্কৃতি থেকে অনুসরণ করছি। এটা কোনো অবস্থাতেই বৈধ নয়। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, এমন একটি পর্যায় রয়েছে যে পর্যায়ে নিজেকে অনেকটা কোনো ব্যক্তির কাছে অবনত করা অথবা সিজদাহ করার মতো অবস্থা তৈরি হয়, যা একটি অসম অবস্থা। একজনের পা একজনের হাত। যেটি সত্যিকার অর্থে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নিষিদ্ধ কাজ। কেউ যদি না জেনে কদমবুচি করে অথবা কোন পরিবেশ পরিস্থিতির বাধ্য হয়ে করে তাঁর গুনাহ হবে। সেজন্য তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে তওবা করবেন। আল্লাহ হয়তো পরিস্থিতি বিবেচনায় মাফ করতে পারেন। যদি তিনি এ ধরনের কোনো অবস্থার মুখোমুখি হন আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা তাঁকে যেন ক্ষমা করেন।