শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

মার্কিনপত্রিকা পলিটিকো সম্প্রতি বৈশ্বিকভাবে করোনাভাইরাস মহামারির প্রেক্ষাপটে ৩০ জনেরবেশি বুদ্ধিজীবীর মত নিয়েছে। তাঁদের দেওয়া মতের সারসংক্ষেপ তুলে ধরাহলো— ১. স্পর্শ না করাটা রেওয়াজে পরিণত হতে পারে, যা সমাজ ও সংস্কৃতিতে বড়প্রভাব ফেলবে। অনলাইন যোগাযোগের সঙ্গে বাড়বে মানুষে মানুষে দূরত্বও। ২. বর্তমানে চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাকোনো আগ্নেয়াস্ত্র না উঁচিয়েই মানুষের জীবন রক্ষায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করছেন, যার মধ্য দিয়ে দেশপ্রেমধারণার বেসামরিকীকরণ ঘটতে পারে। ৩. রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মেরুকরণ কমে আসবে। ৪. নতুন করোনাভাইরাসের মতো ‘অভিন্ন শত্রুর’ বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে দলীয় ওমতাদর্শিক বিভাজনের বদলে মানুষ ঐক্য ও সংহতির গুরুত্ব অনুধাবন করবে। ৫. বিশেষায়িত জ্ঞানের প্রতি মানুষকে উদাসীন করে তোলা বর্তমানবিশ্বব্যবস্থা বদলে এমন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে যেখানে বিশেষায়িত জ্ঞানের প্রতিজন-আস্থা বাড়বে। ৬. করোনাভাইরাস মহামারি বাজার-সংস্কৃতি ও অতিমাত্রায়ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদের সঙ্গে আমাদের প্রণয়ের অবসান ঘটাতে পারে। ৭. কর্তৃত্ববাদী ও চরম নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রের বিষয়টি এখন বাস্তব; নাগরিকের ব্যক্তিগতজীবনে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বাড়বে। ৮. ধনী-গরিবনির্বিশেষে সারা বিশ্বের মানুষের অস্তিত্ব একসূত্রেগাঁথা—এমন উপলব্ধি মানুষকে যূথবদ্ধতার শক্তি অনুধাবনে সহায়তা করবে। ৯. কোয়ারিন্টিনের এই সময় ধর্মের উপাসনার রীতি ও উপাস্য দুইধারণাকেই চ্যালেঞ্জ করবে। ১০. ধ্যানচর্চা বা মেডিটেশনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার মঙ্গল চান—এমন ব্যক্তিদের সামাজিক মর্যাদা বাড়বে। ১১. বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় থাকা ত্রুটিগুলো প্রকাশহয়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী এক নতুন সংস্কার আন্দোলনের জন্ম হতে পারে, যা এমনকি বিভিন্ন দেশেসরকার পরিবর্তনের আন্দোলনেও রূপ নিতে পারে। ১২. শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন জরুরি বিষয়কে অনলাইনভিত্তিক করার চাপবাড়বে প্রশাসনগুলোর ওপর। ১৩. ঘরে বসে কাজ করার যে রেওয়াজ এই সময়ে তৈরি হচ্ছে, তা অক্ষুণ্ন রাখার চাপতৈরি হবে প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। ১৪. স্বাস্থ্যকর ডিজিটাল জীবনযাপনের বিষয়ে মানুষের সচেতনতাবাড়বে। ১৫. বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যয় সংকোচন এবং তাৎক্ষণিক ও উচ্চ মাত্রারসেবার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হওয়া টেলিমেডিসিনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। ১৬. শ্রেণি-পেশানির্বিশেষে নাগরিকদের জন্য কার্যকর সুরক্ষা বলয়তৈরির চাপ বাড়বে রাষ্ট্রের ওপর। ১৭. মুনাফাকেন্দ্রিক ওষুধনীতির বদলে স্বাস্থ্যসেবা এবং ওষুধেরউন্নয়ন ও উৎপাদনে আরও সরাসরি ও কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য সরকারগুলোর ওপর চাপবাড়বে। ১৮. জনস্বাস্থ্য ও মহামারির মতো বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের দক্ষতা ওবিজ্ঞানের প্রতি জন-আস্থা বাড়বে। ১৯. ভার্চ্যুয়াল আইন প্রণয়নের কাজ শুরু হতে পারে, যা তদবিরের সংস্কৃতিরোধে কার্যকর হয়ে উঠবে। ২০. বর্তমান পরিস্থিতি কেটে যাওয়ার পর দরকার হবে আরও বৃহৎ ওবিজ্ঞ সরকার ব্যবস্থা। ২১. জলবায়ু পরিবর্তন ও ঐতিহাসিক বৈষম্যের এ যুগকে অর্থনৈতিকঅন্তর্ভুক্তির যুগে রূপান্তরের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। ২২. বিদ্যমান বহু আইন ও নীতি অকার্যকর প্রমাণিত হওয়ায় নতুনসামাজিক চুক্তির আলোকে সার্বিক পরিবর্তনের দাবি জোরদার হবে। ২৩. বহুপক্ষীয় কূটনীতি শুধু নয়, বৈশ্বিক সমস্যামোকাবিলায় শত্রু-মিত্র সবার সঙ্গে সহযোগিতার গুরুত্ব নতুন করে উপলব্ধি করবেনবিশ্বনেতারা। ২৪. তথ্য গোপন বা বিকৃত না করে জনগণকে আস্থায় নেওয়ার গুরুত্বঅনুধাবন করবে রাষ্ট্র। ২৫. মূলধারায় আসবে ইলেকট্রনিক ভোটিং ব্যবস্থা। ২৬. ঝুঁকি কমাতে চিঠির মাধ্যমে ভোট দেওয়া বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। ২৭. বৈশ্বিক মহামারির আতঙ্ক সমাজকে বাধ্য করবে ভোগের সংস্কৃতিথেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টিকে মেনে নিতে। ২৮. গণহারে বিচ্ছিন্ন থাকার অবধারিত ফল হিসেবে সামনে চলে আসবেমানুষে মানুষে সংসর্গের উচ্চ চাহিদা এবং ছোট পরিসরে হলেও উচ্চ জন্মহারের মতো বিষয়। ২৯. অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থা শক্তিশালী হবে। ৩০. ভোক্তা ও করপোরেশন উভয়েরই ব্যয় বাড়বে। ৩১. সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন শ্রেণির মধ্যে ব্যবধান বৃদ্ধিই শুধু নয়, মধ্যবর্তী শ্রেণিগুলোরমধ্যেও বৈষম্য বাড়বে। ৩২. এই মহামারি শেষে মানুষ নানা দিক থেকে মুক্তি চাইবে; বাড়িয়ে দেবে পারস্পরিকযোগাযোগ। ৩৩. বাইরে খাওয়া ও পার্টি করার প্রবণতা কমে ঘরে রান্নার ঝোঁকবাড়বে। ৩৪. মহামারি শেষে শপিংমলকেন্দ্রিক সংস্কৃতির বদলে উদ্যানসহবিভিন্ন উন্মুক্ত জনপরিসরের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়বে। ৩৫. রক্ষণশীল ও উদারনৈতিক ধারণার পাল্টাপাল্টি বিন্যাসে আটকেথাকা ‘পরিবর্তন’ ধারণায় বদল আসবে মূলগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। ৩৬. দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে সু-অভ্যাস শেখানো প্ল্যাটফর্মগুলোঅকেজো প্রমাণিত হওয়ায় মানুষ আবার তার সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তির ওপর আস্থা রাখতেশিখবে। ৩৭. কাজ, কাজ এবং কাজ—সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে স্বীকৃত এই প্রচার থেকে মুখ ফিরিয়েমানুষ নিজের ও নিজ পরিবারের দিকে আরও বেশি মনোযোগী হবে।