শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

শীত আসে। প্রতিবছর শীত অনেক রকম আনন্দ বার্তা নিয়ে আসে। এর মাঝেও কারো কারো জন্য শীত বিভীষিকা হয়ে দেখা দেয়। কারণ, তারা প্রায়ই ঠাণ্ডা জ্বর বা সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হতে থাকেন। যতই উষ্ণতর কাপড়-চোপড়, লেপ-কম্বল ব্যবহার করা হোক না কেন। তাদের অবধারিতভাবে ভুগতেই হয়। রোগ পরবর্তী এ সব ব্যবস্থার চেয়ে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করাটাই শ্রেয় হবে। এ কাজে সহায়তা করতে পারে কিছু ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যা আমাদের খাদ্যে উপস্থিত থাকে। আমরা যা কিছুই খাই না কেন, তা আমাদের দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করতে পারতে হবে। এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আক্রমণকারী ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করবে। কিন্তু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সেনাসদস্য কোষগুলো কয়েকদিন পর পরই প্রতিস্থাপিত হয় নতুন কোষ দ্বারা। কোনটি বা একদিনও বাঁচে। আর ভাইরাস দেহে প্রবেশ করলে তাকে কোণঠাসা করতে ১০ মিলিয়ন পর্যন্ত এ্যান্টিবড়ি দেহে রক্তে ঘোরা ফেরা করতে পারে। প্রায় প্রতিটি ভিটামিন ও খনিজ পদার্থই কিছু না কিছু অংশগ্রহণ করলেও ৫টি জরুরি রোগ প্রতিরোধে সহায়ক উপাদান ও তাদের উৎস সম্পর্কে এখানে জানানো হচ্ছে। ‘ফ্লু’ প্রতিরোধী কপার রক্তের অন্যতম উপাদান, শ্বেত কণিকা, যারা জীবাণু প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অন্যতম যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে। দেহকে রক্ষা করতে হলে তাদেরও প্রয়োজনমত পুষ্টি দিতে হবে। এ তালিকায় প্রথমে আসবে কপার, যা কণিকাগুলোর বৃদ্ধিতে ব্যাপক সহায়তা করবে। কপার সহজসমৃদ্ধ খাদ্যের মধ্যে আছে শিমাই, মুড়ি, শিম, ডাল, মটরশুঁটি, কেশর আলু, ঢেঁপ, ওলকচু, শামুক, মানকচু ও চকোলেট। ‘ফ্লু’ প্রতিরোধী ভিটামিন ই অন্যান্য ক্ষেত্রের মতই বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। ৬৫ বছরের পর সুস্থ বৃদ্ধরাও খুব কম সাইটোকাহল নামক জীবাণু রোধের রাসায়নিক মাধ্যমটি উৎপাদন করতে পারে। দেহে প্রবেশকারী জীবাণু গলাধারণকারী ম্যাক্রোদেহ কম থাকে; ন্যাচারাল কিলার কোষও কমে যায়। আর অতিরিক্ত ভিটামিন ই দিলে প্রয়োজনীয় সাইটোকাইন উৎপাদন দ্বিগুণ পর্যন্ত হতে পারে। অন্য কথায় ভিটামিন ই রোগ প্রতিরোধের কিছু কিছু ব্যবস্থাকে দ্বিগুণ হারে কাজে লাগায়। ভিটামিন ই-র উত্তম উৎস হচ্ছে, সুর্যমুখী ফুলের বীজ, তিল, চীনা বাদাম, গম, লেটুস পাতা, জব, ভুট্টা, উদ্ভিজ তেল, মৎস ও মৎস চর্বি, ডিম ও মুরগির মাংশ। ‘ফ্লু’ প্রতিরোধী ফলিক এসিড ও ভিটামিন বি-১২ জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে যখন কোষের সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়তে থাকে তখন ফলিক এসিড ও ভিটামিন বি-১২, খুব প্রয়োজন হয়ে পড়ে। জিংকের মতই এ ভিটামিনগুলো (বি ভিটামিন) হাঁড়ের ভিতরে প্রচুর পরিমাণে থাকে। আর হাঁড়ের ভিতরে অস্থিমজ্জায়ই এসব কোষ তৈরির কারখানাটি অবস্থিত। লেটুস পাতা, বাঁধা কপি, বৃক্ক, শিম, কমলা, সবুজ পাতাওয়ালা শাক, বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ, জব, ভুট্টা ইত্যাদিতে প্রচুর ফলিক এসিড থাকে। ভিটামিন বি-১২ শুধু প্রাণিজ খাদ্য যেমন, কলিজা, ডিম ও দুধে থাকে। ‘ফ্লু’ প্রতিরোধী জিংক দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে সজীব রাখতে জিংক অপরিহার্য। জিংকের অসংখ্য কাজের মধ্যে অন্যতম ছিল অন্থিমজ্জার জীবাণু বিধ্বংসী কোষগুলোর উৎপাদন তদারকি করা। এটি থাইমাস গ্রন্থিরও খোঁজ খবর রাখে। থাইমাসে শ্বেত কণিকরা বিশেষভাবে পরিবর্তিত হয়ে ‘টি’ কোষ তৈরি করে। জিংকের অন্যতম উৎস হল বিভিন্ন রকম কপি, মটরশুঁটি, তিল, তিসি, শস্যদানা, গো মাংস ও সামুদ্রিক উদ্ভিদ। ‘ফ্লু’ প্রতিরোধী কোয়ার্সেটিন দেহে আক্রমণকারী ভাইরাসসমূহ দেহকোষকে ধ্বংস করার পর দেহে বেশ কিছু ‘যুক্তমৌল’ (ফ্রি র্যাডিকেল) জমা হয় যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে যে কোন সময় উড়িয়ে দিতে পারে। কোয়ার্সেটিন, এক ধরনের প্রাকৃতিক উদ্ভিজ রাসায়নিক পদার্থ যা শাকসবজি ও ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে জমা থাকে, ওই সব যুক্ত মৌলকে নিষ্ক্রিয় করে প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সচল রাখে। (কায়াসেটিনের অন্যতম উৎস হল পেঁয়াজ, আপেল। বিশেষ করে আপেলের ত্বক), কালো চা, রসুন, মরিচ, জাম ও জাম জাতীয় ফল, আঙুর ও টমেটো।