পা ছুয়ে ছালাম করা মুসলিমদের কোন রিতি না এটা হচ্ছে হিন্দু ঠাকুরদের পা ছুয়ে প্রণাম করার অনুকরন। তবে বয়োজেষ্ঠ কাউকে শ্রদ্ধা প্রকাশের জন্য পা ছুয়ে ছালাম করলে সেটা অবৈধ কিছু না, এমন কোন দলিল কোথাও নেই। নিশ্চই অাল্লাহ মানুষের অন্তরের উদ্দেশ্য দেখে বিচার করেন তাই অাপনার উদ্দেশ্য যদি হয় মুরুব্বি কাউকে সন্মান করা তাহলে সমস্যার কিছু নেই। তবে এটা নিয়ে অনেকেই কূতর্ক করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। বিনয় প্রকাশের জন্য বয়োজেষ্ঠ কাউকে পা ছুয়ে ছালাম করা অার কারো পায়ে মাথা নত করে সিজদাহ করা যে এক কথা না এটা নিশ্চই পরিষ্কার তবে অমুসলিমদের কোন রীতি অনুস্বরন না করাই উত্তম। পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশে বিভিন্ন ধরনের ভঙ্গিতে সালামের প্রচলন আছে যেগুলোর শরিয়তের সাথে মিল নেই কিন্তু এগুলো নিয়ে তারা কখনও অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি বা যুক্তিতর্কে লিপ্ত হয় না।

মুখে সালাম করার কথা হাদিসে রয়েছে,পায়ে হাত দিয়ে মাথা নতজানু হয়ে সালাম করা ইসলামের কোন বিধান নয়। বরং বলা হয়েছে যে, মুসলমান নত হবে একমাত্র আল্লহ রব্বুল আলামীনের কাছে। সে আর কারও কাছে মাথা নত করবেনা। এবিষয়ে হাদিসে রসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে, “আমি যদি কাউকে সেজদা করার অনুমতি দিতাম, তাহলে সেটা হত স্ত্রীর জন্য তার স্বামীকে সেজদা করা”। এধরনের প্রচলিত সালাম পদ্ধতিটা পুরোপুরি হিন্দু সংস্কৃতি। হিন্দুরা তাদের দেবতার পায়ে মাথা রেখে কুর্ণিশ করে। ঠিক যে পদ্ধতিতে তারা দেবতাকে কুর্ণিশ করে, সে একই রকমের হাতের ভঙ্গিতে তারা কোন গুরুজন বা শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে কুর্ণিশ করে। তাদের মধ্যে বিশেষ শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিদেরকে পায়ে হাত দিয়ে মাথা নত করে সালাম করে। অনেক সময় আবার দাঁড়িয়ে থেকেই দেহটা নত করে হাত সে ব্যক্তির পায়ে ছুঁয়ায়ে নিজের হাতটা মাথার উপর দিয়ে বুলিয়ে দেয় ইত্যাদি। মুসলমানদের জন্য আল্লহ রব্বুল আলামীন বলেছেন, “তোমদের জন্য যারা দোয়া করে, তাদের জন্য তোমরা দোয়া কর তদপেক্ষা উত্তম অথবা তদনুরূপ”। সে হিসাবে ইসলামে সালামের ব্যবস্থা আছে সরাসরি মুখের মাধ্যমে আওয়াজ করে। অথচ হিন্দুদের সে কুর্ণিশ পদ্ধতি-ই আমাদের বর্তমান ইসলামী সমাজের একটা বিশেষ আদবের বিষয়।

Manik Raj

Call

পা ধরে সালাম বা কদমবুসি করা শরী‘আত সম্মত নয়। আনাস (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যখন তার কোন ভাই বা বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাত করবে, তখন সে কি মাথা ঝুঁকাবে বা তাকে জড়িয়ে ধরবে বা চুমু খাবে? তিনি বললেন, না। লোকটি বলল, তাহ’লে কি কেবল হাত ধরবে ও মুছাফাহা করবে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬৮০ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়, মুছাফাহা ও মু‘আনাক্বা অনুচ্ছেদ-৩) । কদমবুসি সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ যঈফ (আদাবুল মুফা্যদ হা/৯৭৫-৭৬; ঐ, ইফাবা হা/৯৮৭-৮৮) ।

Call

পা ছুয়ে সালাম করা অমুসলিমদের কাজ। আর তা সালাম নয়, তা আসলে প্রনাম। সুতরাং তা মুসলিমদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহ ছাড়া কারও জন্য মাথা নত করা বৈধ নয়। সালাম ও মুসাফাহাহ করার সময় মাথা নত করা বৈধ নয়। সালামের পর বিশেষ শ্রদ্ধাভাজনের দুই চোখের মাঝে কপালে চুম্বন করা বৈধ। জাফর (রাঃ) হাবশা থেকে ফিরে এলে রাসুল (সাঃ) তার সাথে মুআনাকা করে তার দুই চোখের মাঝে কপালে চুম্বন দিয়েছিলেন। ***ইবনে উসাইমিন; সিলসিলাহ সহিহাহঃ ৬/১/৩৩৮। "মুসলিমদের সালামের রীতি-নীতি" মুসলিমদের সালামের রীতি-নীতি হলঃ "সালামুন আলাইকুম বা আসসালামু আলাইকুম" এবং তার উত্তরে অনুরুপ করার বিধান আল্লাহই দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেনঃ "আর যখন তারা আপনার কাছে আসবে যারা আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করে, তখন আপনি বলে দিনঃ তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের পালনকর্তা রহমত করা নিজ দায়িত্বে লিখে নিয়েছেন যে, তোমাদের মধ্যে যে কেউ অজ্ঞতাবশতঃ কোন মন্দ কাজ করে, অনন্তর এরপরে তওবা করে নেয় এবং সৎ হয়ে যায়, তবে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, করুণাময়"। ***সুরা আল- আনআমঃ আয়াত-৫৪। সালাম একটি প্রাচীন সুন্নাত যা আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু হয়ে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হওয়া অবধি বিদ্যমান থাকবে। ইহাই জান্নাত বাসীদের শুভেচ্ছা। আর জান্নাতে তাদের শুভেচ্ছা হবে সালাম-শান্তি। ইহা নবী-আম্বিয়াদের সুন্নাত, মুত্তাকীদের স্বভাবগত গুণ, খাঁটি মুমিনদের বৈশিষ্ট্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না মুমিন না হওয়া পর্যন্ত। আর তোমরা মুমিন হবে না যতক্ষণ না পরস্পরকে না ভালবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন পদ্ধতির কথা বলে দিব না যা করলে তোমরা পরস্পরকে ভালবাসতে পারবে? তা হল, তোমাদের মধ্যে বেশী বেশী করে সালাম প্রচার ও প্রসার করবে।” ***মুসলিম।