আমার প্রশ্ন! ইসলাম ধর্ম যদি হয় আল্লাহ দায়ালার প্রদত্ত এবং রাসূল (স.) এর প্রদর্শিত জীবন বিধান বাস্তবায়িত করা এবং মানুষকে সত্যের ধর্ম জানানু এবং মানুষের মাঝে ধর্ম প্রচার করা। তাহলে কেন বিভিন্ন যুদ্ধের সময় কাফের নারীদের কে গনিমতের মাল হিসাবে যৌনদাসি করে রাখা হত? এখন কি দাসি এর প্রচলন আছে? বর্তমানে দাসিতের সাথে সহবাস করা ইসলামে জায়েয নাকী নিষিদ্ধ? কোরআন এবং হাদিস দিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিন ধন্যবাদ
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

তোমরা যা পরিধান করো দাস-দাসীদেরও তাই পরিধান করাও। তোমরা যা খাও তাদেরকেও তাই খাওয়াও এবং মহামহিম আল্লাহর সৃষ্টিকে কষ্ট দিও না। অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর ও কোন কিছুকে তার অংশী করো না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার কর। (সূরা নিসাঃ ৩৬) এখন আর দাসী প্রথার প্রচলন নেই। ইসলামে বর্তমানে দাসীদের সাথে সহবাস করা নিষিদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ হে নবী! নিশ্চয় আমি তোমার জন্য তোমার স্ত্রীগণকে বৈধ করেছি যাদেরকে তুমি মোহরানা প্রদান করেছ এবং বৈধ করেছি তোমার অধিকারভুক্ত দাসিগণকে যাদেরকে আমি যুদ্ধবন্দিনীরূপে দান করেছিএবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি তোমার চাচাতো ভগিনী, ফুফাতো ভগিনী, মামাতো ভগিনী ও খালাতো ভগিনীকে যারা তোমার সঙ্গে দেশ ত্যাগ করেছে এবং কোন বিশ্বাসীনী নবীর নিকট নিজেকে নিবেদন করলে এবং নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে (সেও তোমার জন্য বৈধ।) এ (বিধান) বিশেষ করে তোমারই জন্য অন্য বিশ্বাসীদের জন্য নয়! বিশ্বাসীদের স্ত্রী এবং তাদের দাসীগণ সম্বন্ধে যা নির্ধারিত করেছি তা আমি জানি। (এ বিধান এ জন্য) যাতে তোমার কোন অসুবিধা না হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (আল আহযাবঃ ৫০) এ আয়াতদ্বয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিবাহের কিছু বিধি-বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যেগুলো কেবল তার নিজের জন্যই নির্দিষ্ট, অন্য কোন মুমিন ব্যক্তিবর্গের জন্য নয়। আমি তোমার জন্য তোমার‎ সেই স্ত্রীদেরকে হালাল করেছি যাদের মাহর তুমি প্রদান করেছ অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সকল স্ত্রীদেরকে মাহর দিয়ে বিবাহ করেছেন তারা সকলেই তার জন্য বৈধ। যদিও এ বিধান সকল মুমিনদের জন্য কিন্তু মুমিনরা মাহর দিয়েও চারের অধিক স্ত্রী একত্রে রাখতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যত স্ত্রীকে মাহর দিয়েছিলেন সকলেই তার জন্য বৈধ ছিল। কেননা এ বিধান যখন অবতীর্ণ হয় তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী চারের অধিক ছিল। আর এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্যই নির্দিষ্ট। সেই নারীদেরকেও যাদেরকে আল্লাহ তোমার‎ মালিকানাধীন করেছেন গণিমতরূপে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অধীনে যে সকল দাসী রয়েছে তারা সকলেই তার জন্য বৈধ। যদিও এখানে ‘‘ফাই” এর মাল হিসেবে যে দাসী হস্তগত হয় তার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ”ফাই” এর মাল ছাড়াও তার অধিনস্ত যে কোন দাসী তার জন্য বৈধ করা হয়েছে। এটা শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য নির্দিষ্ট নয় বরং সকল মুমিনদের জন্যই এটা বৈধ যে, তাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক করা। এমনকি সাধারণ লোকদের দাসী অন্যের হস্তগত হলে সে তার সঙ্গে সহবাস করতে পারবে, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীরা যেমন অন্যের জন্য বৈধ নয় তদ্রপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাসীরাও অন্যের জন্য বৈধ নয়। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে অনেকে চুক্তিভিত্তিক কাজের মেয়েদের তৎকালীন দাসীদের সাথে তুলনা করে এদের সাথেও ঐরুপ আচরণ করতে চায় যা কখনোই সঠিক হবেনা, কারণ তাদের অধিকাংশই মুসলিম স্বাধীন নারী যারা অভাবের তাড়নায় অন্যের বাড়ীতে কাজ করে জিবিকা নির্বাহ করে তারা যেকোন মূহুর্তে কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে কিন্তু তৎকালীন দাসীদের এ ক্ষমতা ছিলনা। বিধায় বর্তমানে কাজের মেয়ে হিসেবে যারা অন্যের বাড়ীতে কাজ করে তারা দাসী নয় এবং তাদের সাথে দাসীদের আচরণও করা যাবেনা। তবে অবশ্যই বিবাহের মাধ্যমে তাদের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলে কোন সমস্যা নেই। অর্থাৎ হে নাবী! যেসকল স্ত্রীদেরকে মাহর দিয়েছ ও যারা দাসী হিসেবে তোমার অধিনস্থ হয়েছে তাদের ন্যায় তোমার চাচা, ফুফু এবং মামা ও খালার কন্যাদেরকে বিবাহ করা বৈধ করা হয়েছে। এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আলাদা কোন বিশেষত্ব নেই, কারণ সাধারণ মুমিনরাও তো তাদের বিবাহ করতে পারবে। বিশেষত্ব হল এসব নারীদের মধ্যে যারা মদীনাতে হিজরত করে এসেছে তাদেরকেই বিবাহ করতে পারবে। সারকথা এই যে, সাধারণ উম্মাতের জন্য পিতৃ ও মাতৃকুলের এসব কন্যা কোন শর্ত ছাড়াই বিবাহ করা বৈধ হিজরত করুক আর না-ই করুক। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য কেবল তারাই হালাল যারা তার সাথে হিজরত করেছে। সাথে হিজরত করার জন্য সফরের সঙ্গে থাকা অথবা একই সাথে হিজরত করা জরুরী নয়। বরং যে কোন প্রকারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ন্যায় হিজরত করাই উদ্দেশ্য। ফলে এসব কন্যার মধ্যে যারা কোন কারণে হিজরত করেনি তাদেরকে বিবাহ করার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য বৈধ নয়। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার আল মায়সারাহ আল কাওয়ারীরী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়ন এর যুদ্ধের সময় একটি দল আওত্বাস এর দিকে পাঠান। তারা শক্র দলের মুখোমুখী হয়ে তাদের সাথে যুদ্ধ করে জয়লাভ করে এবং তাদের অনেক কয়েদী তাদের হস্তগত হয়। এদের মধ্য থেকে দাসীদের সাথে যৌন সঙ্গম করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কয়েকজন সাহাবা যেন নাজায়েয মনে করলেন, তাদের মুশরিক স্বামী বর্তমান থাকার কারণে। আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন এবং নারীর মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ অর্থাৎ তারা তোমাদের জন্য হালাল, যখন তারা তাদের ইদ্দত পূর্ণ করে নিবে। তাদের স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্র ব্যতীত এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। (মাআরিজঃ ৩০) অর্থাৎ, মানুষের যৌন-ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য দুটি বৈধ মাধ্যম রেখেছেন। একটি হল স্ত্রী আর দ্বিতীয়টি হল অধিকারভুক্ত যুদ্ধবন্দিনী অথবা ক্রীতদাসী। বর্তমানে এই অধিকারভুক্ত দাসীর ব্যাপারটা ইসলামের নির্দেশিত কৌশল অনুসারে প্রায় শেষই হয়ে গেছে।