অনেকেই ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতাকে ফ্রাস্ট্রেশন বা হতাশার সমার্থক বলে মনে করেন। তাই আসুন, প্রথমেই দেখে নেই, ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা জিনিসটা কি। ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা হচ্ছে এমন একটা মানসিক অবস্থা যে অবস্থায় একজন মানুষের কোনো কিছুর প্রতি কোনো আগ্রহ থাকে না এবং নিজেকে অসহায় মনে হয়। বিষণ্নতাগ্রস্ত মানুষের কোনো কাজ করতে ভালো লাগে না। খেতে ভালো লাগে না। বেড়াতে ভালো লাগে না । এমনকি গল্প করতেও ভালো লাগে না। বস্তুত তাঁরা জীবনের কোনো অর্থই খুঁজে পায় না। অন্যদিকে, হতাশা? মানুষ কিছু পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে গিয়ে যখন পায় না বা পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে করতে পারে না, তখন মানুষের যে মানসিক অবস্থা তৈরি হয় তা-ই হলো হতাশা । হতাশাগ্রস্ত মানুষের রাগ, ঈর্ষা, লোভ থাকতেও পারে। কিন্তু বিষণ্নতাগ্রস্ত মানুষের এসব কিছুই নেই। হতাশাগ্রস্ত মানুষ কোনো কিছু হারালে দুঃখ পান। কিন্তু বিষণ্নতাগ্রস্ত মানুষের যেন কিছুই যায় আসে না। সুতরাং হতাশা ও বিষণ্নতা দুটি সম্পূর্ণই পৃথক জিনিস। একজন হতাশাগ্রস্ত মানুষ ক্রমান্বয়ে বিষণ্নতাগ্রস্ত হতে পারেন। তবে, একজন বিষণ্নতাগ্রস্ত মানুষ কখনোই হতাশাগ্রস্ত হন না । কারণ পাওয়া বা না-পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বিষণ্নতাগ্রস্ত মানুষের মধ্যে কাজ করে না। চলুন দেখা যাক বিষণ্নতাগ্রস্ত মানুষের কিছু কমন লক্ষণ ১. আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষ করবেন বিষণ্নতাগ্রস্ত মানুষের কিছুই ভালো না লাগলেও তাঁরা যে জিনিসটা খুবই ভালোবাসেন তা হলো তাঁরা কিছুই না করে বসে/শুয়ে থাকতে চান। ২. বিষণ্নতাগ্রস্ত মানুষদের যতই হাসিখুশি থাকতে বলেন না কেন, তাঁরা তাতে আগ্রহ পান না। ৩. আপনি এমন কোনো বিষণ্নতাগ্রস্ত মানুষ খুঁজে পাবেন না যে/যারা নাচছে বা দৌড়াচ্ছে। ৪. শারীরিক দিকে বিষণ্নতা একটা খুবই বড় অবসাদ যেখানে বিষণ্নতাগ্রস্ত মানুষ শুধু বিশ্রাম আর বিশ্রামকেই ভালোবাসেন। তাই, আপনি যদি আপনার পরিবার বা বন্ধুমহলে কোনো বিষণ্নতাগ্রস্ত মানুষ দেখেন তবে ১. অবস্থা খুবই খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি করুন। ২. তাকে হাসিখুশি থাকতে উপদেশ দেবেন না। কারণ এটাতে তিনি আগ্রহ পাবেন না। ৩. তাদের সঙ্গে বিষণ্নতার বিষয় নিয়ে কোনো যুক্তি-তর্ক করবেন না। ৪. তাদের নিয়ে বাইরে ঘুরে বেড়ালে বা নাচলে, গাইলে তাদের বিষণ্নতা কমবে - এটা বলবেন না। কারণ তারা তাতে একমত হবেন না। ৫. বিষণ্নতা সম্পর্কে তাদের কিছু না বলে, অন্য কোনো কৌশলে তাদের কোনো নাচে/ গানে/ দৌড়ে নিয়ে যান। স্বাভাবিকভাবেই তাদের বিষণ্নতা কমবে। ৬. তাদের বিষণ্নতা কমার পরেও তাঁদের জিজ্ঞাসা করবেন না !“নাচে/গানে/দৌড়ে কী বিষণ্নতা কমেছে?” কারণ তারা তাতে রাজি হবেন না। ৭. এ পদ্ধতি পুনরাবৃত্তি করেও যদি তাদের বিষণ্নতা না কমে তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আর, আপনি যদি নিজেই বিষণ্নতাগ্রস্ত হন, তবে ১. আপনার জীবনের লক্ষ্যের দিকে আবার একটু তাকান। ২. আপনার যা ভালো লাগে সেসব স্বাস্থ্যকর খাবার খান। ৩. পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান। ৪. নিজের সঙ্গে নিজেই প্রতিযোগিতা করুন। ৫. বিশ্রাম নিতে নিতে মজার কিছু কৌতুক দেখুন এবং ৬. আপনার পরিবার বা বন্ধুমহলে অন্য কোনো বিষণ্নতাগ্রস্ত মানুষ থাকলে তাদের সাহায্য করতে উপরে বর্ণিত পদ্ধতিগুলো আবার পড়ুন।