এলার্জি লাখ লাখ মানুষের কাছে এক অসহনীয় ব্যাধি, এলার্জি হাঁচি থেকে শুরু করে খাদ্য ও  ঔসুধের ভীষণ প্রতিক্রিয়া কিংবা শ্বাসকষ্ট হতে পারে, কারো ক্ষেত্রে এলার্জি সামান্য তম অসুবিধা করে, আবার কারো ক্ষেত্রে জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। ঘরের ধুলা-বালি পরিষ্কার করছেন? হঠাৎ করে হাঁচি এবং পরে শ্বাসকষ্ট অথবা ফুলের গন্ধ নিচ্ছেন বা গরুর মাংস, চিংড়ি, ইলিশ কিংবা গরুর দুধ খেলে শুরু হলো গা চুলকানি বা চামড়ায় লাল লাল চাকা হয়ে ফুলে ওঠা। এগুলি হলে আপনার এলার্জি আছে ধরে নিতে হবে। চলুন জেনে নেই এলার্জি থেকে মুক্তির উপায়: বিছানা ও আসবাবপত্রে অ্যালার্জি  বিছানার চাদর, বালিশের কভার, বালিশ, লেপ, তোষক, মেট্রেস, কম্বল, মশারিতে প্রতিদিন আক্রমণ করে ধুলোবালি, জীবাণু ও ঘরোয়া জীবাণু মাইট ডাস্ট। ডাস্ট মাইটগুলো মাকড়সা জাতীয় ক্ষুদ্র কীট। লম্বায় এই কিটগুলো এক মিলিমিটারের তিন ভাগের এক ভাগেরও কম। আমাদের শরীরের ত্বক থেকে প্রতিনিয়ত ঝরে যাওয়া অসংখ্য মৃত কোষ খেয়ে বেঁচে থাকে এই জীবাণু। এরা প্রতিনিয়ত প্রচুর বিষ্ঠা ত্যাগ করে। ঘরদোর, বিছানা যখন ঝাট দেয়া হয় তখন এই বিষ্ঠাগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। ডাস্ট মাইটের বিষ্ঠাই আমাদের অনেকের শরীরে অ্যালার্জি আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ। টিপস বিছানার ডাস্ট মাইট থেকে পরিত্রাণ পেতে বিছানার চাদর, বালিশের কভার, লেপের কভার, মশারি ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এছাড়া ঘরের চারপাশে ঝাট দিয়ে মেঝে পানি ও ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করলে অ্যালার্জেন থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। তাছাড়া প্রতিদিন উঠোনে বা বেলকনিতে আসা রোদে লেপ, কম্পল, কাঁথা, তোষক মেট্রেস শুকিয়ে নেয়া উচিত। রোদের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মিতে হাউজ ডাস্ট মাইট মরে যায়। বাসাবাড়িতে চেয়ার, টেবিল, সোফা, খাট, আলমারি, ওয়ারড্রোব, কাঠের বিভিন্ন আসবাবপত্রের ফাঁকে ফাঁকে ধুলোবালি ও ডাস্ট মাইট থাকে। অ্যালার্জি থেকে বাঁচতে প্রতিদিন এইসব আসবাবপত্র ঝাড়া-মোছা করা প্রয়োজন। বই পুস্তক সবাই বাসায় অনেক যত করে সেলফে প্রিয় লেখকের বই সাজিয়ে রাখে। এই কারণে প্রতিদিন ঘর পরিষ্কার করার সময় কিছু ময়লা বইয়ের সেলফে জমে থাকে এবং জমে থাকা ময়লা সৃষ্টি করে অ্যালার্জেন। এই থেকে রেহাই পেতে এক-দু দিন পর পর বইগুলো নাড়াচাড়া করা প্রয়োজন। এই নাড়াচাড়ার কারণে সেলফে থাকা ডাস্ট চলে যাবে। কার্পেট, ম্যাট ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে এবং শীতের সময় ঘর উষ্ণ রাখতে মেঝেতে নামীদামী কার্পেট ও ম্যাট বিছিয়ে রাখেন অনেকে। কিন্তু এই কার্পেট ও ম্যাটে প্রতিদিন প্রচুর ধুলাবালি ও ময়লা জমে। এই ময়লা থেকে জন্ম নেয়া ডাস্ট মাইট বিশেষ করে শিশুরা ম্যাটে ও কার্পেটে বসে থাকে, খেলাধুলা করে, যে কারণে তারা অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয় এবং বাঁধিয়ে ফেলে নানান অসুখ। টিপস কার্পেট ও ম্যাট থেকে ডাস্ট মাইট দূর করতে হলে প্রায় প্রতিদিনই ভ্যাকুয়াস ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করা দরকার। যদি ভ্যাকুয়াস ক্লিনার হাতের কাছে না থাকে তাহলে ছাদে নিয়ে ম্যাট ও কার্পেট ঝাট দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন। পরিষ্কার করা ম্যাট ও কার্পেট মেঝেতে বিছানোর আগে মেঝে ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নিন। দরজা, জানালা ও পর্দা বাসাবাড়িতে দরজা, জানালায় প্রতিদিন প্রচুর ময়লা জমে। এই ময়লার মধ্যে থাকে মাকড়সার জাল, মরা পোকামাকড় ও ডাস্ট মাইট। সেইসাথে দরজা, জানালার পর্দার ভাঁজে ভাঁজে জমা হতে থাকে ডাস্ট মাইট। পর্দা নাড়াচাড়া করার পরই এই মাইট নাকে-মুখে প্রবেশ করে মানুষের মধ্যে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে। টিপস প্রায় প্রতিদিনই দরজা, জানালা পরিষ্কার করা প্রয়োজন। এক সপ্তাহ পর পর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নেয়া দরকার। সেইসঙ্গে মোটাকাপড়ে তৈরি পর্দা মাঝে মধ্যে ধুয়ে নেয়া দরকার এবং প্রতিদিন ঝেড়ে নেয়া প্রয়োজন। তাহলে অনাহুত অ্যালার্জি থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যাবে। রান্নাঘরে রান্নাঘর এমনিতে স্যাঁতস্যাতে হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে মাছ, মাংস, তরকারি, পেঁয়াজ, মরিচসহ রান্নার নানা উপকরণের ময়লা রান্না ঘরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। রাতের অন্ধকারে সেই ময়লায় হানা দেয় পোকামাকড় ও ইঁদুর। এই অবস্থায় রান্না ঘরে তৈরি হয় ছত্রাক ও ডাস্ট মাইট। তাছাড়া ময়লা-আবর্জনায় পুরো রান্না ঘরে হয়ে যায় দুর্গন্ধময়। টিপস: রান্না ঘরের এই ময়লা-আবর্জনা থেকে মুক্ত হতে প্রয়োজন প্রতিদিন পরিষ্কার করা। ফ্লোর ক্লিনার ও গরম পানি দিয়ে রান্না ঘর পরিষ্কার করা প্রয়োজন। তাছাড়া রান্না ঘরে রাখা বিভিন্ন মসলার কৌটা, হাঁড়ি-পাতিল, জার ও গ্যাস চুলা প্রতিদিন পরিষ্কার করা প্রয়োজন। তা না হলে ধুলাবালি, ছত্রাক ও মাইট ডাস্ট প্রচুর অ্যালার্জি সৃষ্টি করবে।

অ্যালার্জি থেকে মুক্তির উপায়ঃ আধুনিক আলোপ্যাথিক চিকিৎসায় এন্টি হিস্টামিন বা এন্টি এলার্জিক ওষুধ দিয়ে এটি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করা হয়। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে অ্যালার্জির উপসর্গ দমানো যায় কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ করা যায় না কিন্তু এলার্জির সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে তা পরিহার করে চলা ও নিয়ন্ত্রণ রাখা৷ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ এলার্জি নিয়ন্ত্রণের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে আধুনিক চিকিৎসায় ব্যাবহৃত এসব এন্টি হিস্টামিন ওষুধ সারা জীবন খেতে হয়৷ তার পরও স্থায়ীভাবে সুস্থ হওয়া যায় না, অন্যদিকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় এটি স্থায়ীভাবে আরোগ্যের জন্য খুবই কার্যকরী চিকিৎসা রয়েছে। যদিও লক্ষনভেদে ঔষধ নির্বাচন করবেন আপনার চিকিৎসক তবে নিম্নলিখিত ঔষধগুলো এলার্জি নিরাময়ে প্রায়ই সফলতার সাথে ব্যবহৃত হয়-Nux Vom, Cal Carb, Hep Sulph, Teucrium, Lac Can, Thuja, Nat Ars, Sabadila, Tuberculinum ও Lem minor প্রভৃতি৷ এলার্জিক রাইনাইটিসে সর্দি সহ হাঁচি থাকলে Kali bich-12 দেয়া যেতে পারে৷ সাথে বায়োকেমিক Nat Sulph-12X ও Nat Mur-12X দেয়া যেতে পারে। ব্যাক্তিগত চিকিৎসায় এসব ঔষধ প্রয়োগে অনেক রোগীকেই এলার্জির সমস্যা থেকে সম্পূর্নরুপে আরোগ্য হতে দেখেছি৷