শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

মৃগীরোগের লক্ষণগুলো এর শ্রেণীবিন্যাস অনুসারে ভিন্নতর হয়ে থাকে। যেমন ক) গ্রান্ডমল বা টনিক ক্লনিক এপিলেপসির লক্ষণগুলো কয়েকটি ধাপে প্রকাশ পেয়ে থাকে ০১. পূর্ব সূচনারূপ উপসগৃ (গড়্রান্ডমাল স্টেজ): কয়েক ঘন্টা এমনকি কয়েক দিন আগ থেকে রোগরি মেজাজের পরিবর্তন দেখা দেয়। এ সময় কোনো কোনো রোগী রোগের উপস্থিতি আসন্নপ্রায় বলে বুঝতে পারে। ০২. অলৌকিক আভা রোগী বুঝতে পারে যে, এখনই খিঁচুনি বা রোগের আক্রমণ শুরু হবে এবং সাথে সাথে পেটের ভেতর অদ্ভুদ অনুভূতি অনুভব হয়। এ অবস্থা অর্থ্যাৎ ‘অরা স্টেজ’ গ্রান্ডমল মৃগীরোগীর তুলনায় সাইকো মোটর মৃগীরোগীতে বেশি দেখা দেয়। ০৩. অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাংসপেশির অস্বাভাবিক অবস্থা (টনিক স্টেজ): এ অবস্থায় রোগী হঠাৎ অবচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। দেহের মাংসপেশি সঙ্কুচিত হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণে সহায়ক মাংসপেশির হঠাৎ সঙ্কোচনের ফলে প্রবল বেগে শ্বাসনালী দিয়ে বাতাস বেরোনোর সময় জোর ক্রন্দনের শব্দ হয়। এ ধাপটি ২০-৩০ সেকেন্ড থাকে। ০৪. খিঁচুনি অবস্থা (ক্লনিক ফেজ): রোগী শুয়ে প্রচন্ডভাবে খিঁচতে থাকে। জিহ্বা বা চোয়ালের খিঁচুনির জন্য এবং প্রবল নাড়াচড়ার জন্য মুখে ফেনা দেখা দেয়। তাছাড়া, এ অবস্থায় দাঁত দ্বারা জিহ্বা কেটেও যায়। প্রবল খিঁচুনির জন্য রোগী প্র¯্রাব করে দিতে পারে। এর স্থায়ীকাল প্রায় ৩০ সেকেন্ডের মতো। ০৫. শরীর-মান শিথিল অবস্থা খিঁচুন থেমে যায় এবং রোগী অচেতন অবস্থায় কিংবা ঘুমানো অবস্থায় থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অদ্ভুদ আচরণও করে থাকে। একে স্বয়ংক্রিয় আচরণ বলে। এ অবস্থা কয়েক মিনিট থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত থাকতে পারে। জ্ঞান ফেরার পরও রোগীর চেতনার গোলমাল কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যমান থাকতে পারে এবং পরে মাথাধরা ও খারাপ লাগা ইত্যাদির অভিযোগ করতে পারে। খ) সাইকোমেটির বা কমপ্লেক্স পারশিয়াল মৃগীরোগের লক্ষণগুলো হলো মানসিক।  স্নায়ু ও মাংসপেশির রোগের লক্ষণগুলোর সমষ্টি। যেমন মানসিক লক্ষণগুলো হলো রোগীর চেতনা আচ্ছন্ন থাকা, অলৌকিক আভা তৎসহ গন্ধাগত অনীক প্রত্যক্ষণ (হ্যালুসিনেশন) উদাহরণস্বরূপ ‘রাবার পোড়া গন্ধ’ পাওয়া। তা ছাড়া শ্রবণগত, দৃষ্টিগত ও স্বাদগত অলীক প্রত্যক্ষণও হতে পারে। আবার পরিচিত কাউকে অপরিচিত এবং অপরিচিত কাউকে পরিচিত মনে হতে পারে। প্রকৃত জিনিসকে ছোট বড় দেখতে পারে। স্নায়ু ও মাংসপেশির লক্ষণগুলো হলো হঠাৎ এবং জোরের সাথে মিলিত দুই ঠোঁট আলাদা করার শব্দ অর্থ্যাৎ ঠোঁট দিয়ে চুক চুক শব্দ করা, খামাখা ঢোক গেলা, উদ্দেশ্যবিহীন হাঁটাচলা করা। স্বত:স্ফূর্ত ক্রিয়াকলাপ যেমন- গাড়ি চালানোর সময় অভিনয় করা, অন্যের পরিধানের কাপড় টানতে থাকা, কোনো বিশেষ ধরণের কাজের ভান করা, ক্ষিপ্ত হওয়া বা অসামাজিক কাজ করা ইত্যাদি।

মৃগীরোগীর মধ্যে নিম্নলিখিত যে কোনো একটি বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে: * হঠাৎ শরীরের কোনো অংশে খিঁচুনি শুরু হওয়া ও পর্যায়ক্রমে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়া। *  হঠাৎ নমনীয়ভাবে ঢলে পড়া।  শরীর শক্ত হয়ে গিয়ে হঠাৎ পড়ে যাওয়া। * হঠাৎ জ্ঞান হারানো।  ঘন ঘন কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়া। *  ছোট বাচ্চাদের শরীর হঠাৎ ঝাঁকি খাওয়া। *  হঠাৎ মাথা বা পিঠ কিংবা পুরো শরীর সামনে ঝুঁকে আসা। *  হাত থেকে হঠাৎ করে কিছু ছিটকে পড়া। *  হঠাৎ করে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করা এবং হাত, পা ও মুখের অস্বাভাবিক নড়াচড়া শুরু হওয়া। *  হঠাৎ শরীরের কোনো অংশে ভিন্ন ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি।