শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

 ভয় হচ্ছে মস্তিষ্কের একটি রাসায়নিক চেইন রিএকশন। এর শুরুটা হয় চাপ উদ্দীপক জাতীয় কোনোকিছু দ্বারা এবং শেষ হয় কিছু রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ দ্বারা। নিঃসৃত এই রাসায়নিক পদার্থগুলোর কারণেই হার্টবিট বেড়ে যায়, শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়, মাংশপেশী শক্ত হয়ে যায়, হাতের তালু ঘেমে যায়, পাকস্থলী খালি মনে হয়। দেহের এই ঘটনাকে fight to flight response-ও বলা হয়। ভয় পাবার জন্য একটি উদ্দীপক প্রয়োজন। এটি হতে পারে একটি মাকড়সা, আপনার গলায় ধরা চাকু, অডিটরিয়াম ভর্তি লোকজনের সামনে স্টেজে কথা বলা বা হঠাৎ দরজা খুলে গিয়ে ফ্রেমের সাথে ধাক্কা খাওয়া। অনেকের ক্ষেত্রে হরর মুভিও হতে পারে উদ্দীপক। ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ভয় একইভাবে কাজ করে। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির মনোবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক লিডক্স বলেন, “প্রতিটি মানুষের মস্তিষ্কের গঠন যেহেতু একইরকম তাই ধারণা করা যায়, ভয় পেলে আমার যে অভিজ্ঞতা হবে আপনারও সেই একই অভিজ্ঞতা হবে।” তিনি আরো বলেন- কীভাবে আমাদের ভয় পেতে হবে তা আমরা জন্মগতভাবে জেনেই আসি এবং আমাদের মস্তিষ্ক সেভাবেই বিকশিত হয়। লক্ষ্য করে দেখা গেছে, মানুষ যেভাবে ভয়ে সাড়া দেয় এবং ইঁদুর যেভাবে ভয়ে সাড়া দেয়, তা প্রায় একইরকম। যদিও ইঁদুরের ক্ষেত্রে ভয়ের ধরণটাই সম্পূর্ণ আলাদা। মানে ধরুন, ইঁদুর ভয় পেলো বিড়াল দেখে। আপনি ভয় পেলেন ইঁদুর দেখে। ইঁদুর ভয় পাবে কারণ বিড়ালটা তার প্রাণনাশ করে তাকে কাবাব বানিয়ে খেয়ে ফেলতে পারে। তাই দৌড় দেবে। আর আপনি ইঁদুরকে ভয় পেলেন কারণ সে আপনার শখের কাপড়চোপড় বা বইপত্র তার তীক্ষ্ণধার দাঁত দিয়ে কেটে ফেলতে পারে। তাই ইঁদুর তাড়াবেন। এখানে ভয়ের ধরণাটা আলাদা হলেও প্রতিক্রিয়াটা কিন্তু একই হচ্ছে। কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ভয় পুরোপুরি একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। কিছু মানুষ হয়তো ভয় পায় হরর মুভি দেখে আবার কিছু মানুষ হয়তো ভয় পায় হরর মুভি দেখার পর নির্জন রাস্তায় হেঁটে আসার সময়। এখানে মূল সীমাবদ্ধতাটি হচ্ছে ভয় বা অন্য কোনো আবেগকে পরিমাপ করার কোন আদর্শ মাপকাঠি নেই। রবার্টউড জনসন মেডিকেল স্কুলের পরিচালক মাইকেল লুইসের কথা থেকে ভয় সম্পর্কে কিছু নতুন তথ্য পাওয়া যায়। তার মতে, আমাদের আশেপাশের লোকজনের আচরণ আমাদের ভয়ে সাড়া দেয়াকে প্রভাবিত করে। আমরা ভয় পেতে শিখি ভীতিকর অভিজ্ঞতা থেকে কিংবা আমাদের চারপাশের লোকজন থেকে। ভয় সংক্রামক, কাজেই অন্যদের ভয় আমাদের মধ্যেও প্রকাশিত হতে পারে। মস্তিষ্কে কয়েক ডজন অঞ্চল আছে যারা একটু হলেও ভয়ে সাড়া দেয়ার সাথে জড়িত। তবে গবেষণায় দেখা গেছে মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু অঞ্চল এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে। সেগুলো হলো- ১. থ্যালামাস: এই অঞ্চল নির্ধারণ করে দেহের কোন অংশ থেকে তথ্য মস্তিষ্কে পাঠাতে হবে। যেমন- চোখ, কান, ত্বক ইত্যাদি। ২. সেন্সরি কর্টেক্স: প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে। ৩. হিপ্পোক্যাম্পাস: সচেতন স্মৃতি জমা রাখে এবং প্রয়োজনে তা পুনরুদ্ধার করে। ৪. অ্যামিগডালা: আবেগকে ডিকোড করে, সম্ভাব্য ভীতি নির্ণয় করে, ভয়ের স্মৃতিগুলো জমা রাখে। ৫. হাইপোথ্যালামাস: fight to flight response কে সক্রিয় করে। তবে টেম্পোরাল লোবের নীচে অবস্থিত অ্যামিগডালাই মস্তিষ্কের ভয়ের কেন্দ্রবিন্দু। অ্যামিগডালাই প্রথম ভয়ে সাড়া দেয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ