শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

এক. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, আলহামদুলিল্লাহ, আপনি চূড়ান্তভাবে এ থেকে মুক্তি চান জেনে আমরা খুশি হয়েছি। আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করি তিনি যেন, আপনাকে সে তাওফিক দেন। এটা যে জঘন্য হারাম এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিধা নেই। এর জন্য এইটুকুই যথেষ্ট যে, পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তি এটা অনুভব করে যে, সে ভুল কাজ করছে এবং মানুষের কাছ থেকে এটাকে লুকিয়ে রাখে, মানুষের সামনে এটাকে প্রকাশ করতে পারে না। এ ধরণের কাজ হারাম হওয়ার দলিল হিসেবে এটাই যথেষ্ট। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, الْإِثْمُ مَا حَاكَ فِي صَدْرِكَ وَكَرِهْتَ أَنْ يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ গুনাহ হল যা তোমার অন্তরে খটকা তৈরী করে এবং মানুষ সেটা জেনে যাওয়াকে তুমি অপছন্দ কর। (সহিহ মুসলিম ২৫৫৩) পর্ণগ্রাফির অনেক অপকারিতা রয়েছে; যেমন— — এগুলো নিয়মিত দেখার ফলে অন্তরের ওপর প্রভাব ফেলে। আপনি যতক্ষণ এটি দেখতে থাকেন, ততক্ষণের প্রতিটি সেকেন্ডে সেকেন্ডে আপনার অন্তরে একের পর এক অব্যাহতভাবে কালো ফোঁটা পড়তে থাকে এবং এভাবে অন্তর একেবারে কালো হয়ে যায় এবং ঈমান দুর্বল হয়ে যায়। যার ফলে নেক আমলের প্রতি অনীহা চলে আসে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا أَخْطَأَ خَطِيئَةً نُكِتَتْ فِي قَلْبِهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ ، فَإِذَا هُوَ نَزَعَ وَاسْتَغْفَرَ وَتَابَ سُقِلَ قَلْبُهُ ، وَإِنْ عَادَ زِيدَ فِيهَا حَتَّى تَعْلُوَ قَلْبَهُ وَهُوَ الرَّانُ الَّذِي ذَكَرَ اللَّهُ : كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো চিহ্ন পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহর কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তাওবাহ করে তার অন্তর তখন পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটাই সেই মরিচা আল্লাহ তা’আলা যার বর্ণনা করেছেন, কখনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনে জং (মরিচা) ধরিয়েছে— (সূরা মুত্বাফফিফীন ১৪)। (তিরমিযী ৩৫৭ ইবনু মাজাহ ৪২৩৪) — এগুলো নিয়মিত দেখার ফলে যৌনশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। — পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তির মস্তিষ্ক সব সময় নারীর দেহ নিয়ে চিন্তা করে ফলে তার ব্রেনের স্বাভাবিক প্রখরতা নষ্ট হয়ে যায়। ডিপ্রেশন তৈরী করে। — পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক দায়িত্ববোধ হারিয়ে ফেলে। দুনিয়ার আর কোন চিন্তা তার মাথায় থাকে না পর্ণগ্রাফি ছাড়া। ফলে তার স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হয়। অন্য দশটা মানুষের মত সে আর স্বাভাবিক থাকতে পারে না। — পর্ণগ্রাফি আসক্ত ব্যক্তির স্বাভাবিক রুচিবোধ নষ্ট হয়ে যায়। সে যেমন কুরুচিপূর্ণ দৃশ্য দেখেছে তেমনি দৃশ্য সে তার বউয়ের কাছ থেকে আশা করে যা কখনই কাংখিত নয়। — পর্ণগ্রাফি এমন নেশা যা না দেখলে ঘুম হবে না। প্রতিদিনই ইন্টারনেট ক্রয় করে তাকে এসব দেখতে হয়। তাই এটি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি করে। — সময়ের অপর নাম জীবন। সেকেন্ড, মিনিট আর ঘন্টার যোগ ফলই হলো আমাদের জীবন। সেই সময়কে আমরা হেলায় ফেলায় নষ্ট করে ফেলি। পর্ণ ছবি দেখার পর নিজের খায়েশ মিটে গেলে মনে হয় কেন আমি এই জিনিসটা দেখলাম আমার সময়টা নষ্ট হলো। কিন্তু তখন আর কিছুই করার থাকে না। সময় হলো এমন এক ধারালো তলোয়ার যদি আপনি তাকে সময় মতো কাটাতে না পারেন তবে সে নিশ্চিত আপনাকে কেটে ফেলবে। — এ যদি এ ধরণের পাপ ফাঁস হয়ে যায় তাহলে তার এমন দুর্নাম হয় যে এতে তার ভাল গুণগুলোও ঢাকা পড়ে যায়। মানুষের কাছে তখন শুধু এ দুর্নামগুলোই আলোচিত হয়। — যে চোখ দিয়ে আপনি নারীর দেহ দেখবেন সেই চোখ দিয়ে কখনো আল্লাহর ভয়ে পানি বের হবে না। কারণ আপনার অন্তর মরে যাবে। কোন ইবাদতেই আপনি মজা পাবেন না। সুতরাং সময় থাকতে নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, আপনি একা ঘরে কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোনের সামনে বসে যা করছেন তা আর কেউ না দেখলেও আল্লাহ্‌ দেখছেন, আর ফেরেশতারা তা লিখে রাখছে এক পরিষ্কার গ্রন্থে। আল্লাহ্‌ যদি এখনো আপনার কুকর্ম মানুষের সামনে প্রকাশ না করে দিয়ে থাকেন তাহলে বুঝবেন আপনাকে আল্লাহ্‌ তাওবা করার জন্য সুযোগ দিচ্ছেন। আপনি যদি তাওবা না করে মারা যান, তাহলে এই গ্রন্থের সবকিছু একদিন আপনার সামনে তুলে ধরা হবে, আপনার মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান, বন্ধু সবাই আপনার আমলনামা দেখতে পাবে। নিজেকে প্রশ্ন করুন, সেদিনের সেই লজ্জার সম্মুখীন কি আপনি হতে পারবেন? এ জঘন্য হারাম থেকে তাওবা করার জন্য কোন ক্রমধারা অবলম্বনের প্রয়োজন নেই। এ ধরণের চিন্তা হতে পারে শয়তানের ধোঁকা। বরং একজন মুমিন যখনই জানবে এটি হারাম তখনই তার সামনে এটি ত্যাগ করা ছাড়া আর কোন পথ নেই। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْراً أَنْ يَكُونَ لَهُمْ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلالاً مُبِيناً আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত দিলে কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে বিষয়ে তাদের কোন (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) ইখতিয়ার সংগত নয়। আর যে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হলো। (সূরা আহ্‌যাব ৩৬) আমরা আল্লাহ্‌ তাআলার কাছে দোয়া করি, তিনি যেন আপনাকে তাওবা করার তাওফিক দেন এবং আপনার তাওবা কবুল করেন। দুই. নিয়মিত নামায আদায় করুন এবং আল্লাহ্‌র কাছে মুনাজাত করে, তাঁকে স্মরণ করে, তাঁর কিতাব তেলাওয়াত করে স্বাদ অনুভব করুন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামায কায়েম করুন। নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর। (সূরা আনকাবুত ৪৫) একবার সাহাবারা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলল, অমুক সাহাবী বিভিন্ন ধরনের খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, সে কি এখনো নামাজ পড়ে? সবাই বলল, হ্যাঁ, পড়ে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সে যদি নামাজ পড়তে থাকে তাহলে নামাজ তাকে অবশ্যই একদিন খারাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। (মুসনাদে আহমাদ ২/৪৪৭) তিন. একাকী থাকবেন না। বিশেষ করে একাকী রাত কাটাবেন না। হাদিসে এসেছে নবী ﷺ কোন পুরুষকে একাকী রাত কাটাতে নিষেধ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ ২/৯১) ঘুমানোর সময় ইসলামী আদবগুলো মেনে চলুন। যেমন ঘুমানোর দোয়াগুলো পড়া, ডান পার্শ্বে কাত হয়ে শোয়া, পেটের উপর ভর দিয়ে না-ঘুমানো; যেহেতু এ সম্পর্কে নবী ﷺ-এর নিষেধ আছে। পাশাপাশি নবী নবী ﷺ-এর নির্দেশিত প্রতিকার পদ্ধতি গ্রহণ করুন। সেটা হচ্ছে– রোযা রাখা। কেননা রোযা যৌন চাহিদাকে পরিশীলিত করে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ