লেবুর শরবত কেন খাবেন-আমাদের দেশে বিভিন্ন লোকালয়ের পাশে, মার্কেটে লেবুর শরবত বিক্রি করতে দেখা যায়। গরমের সিজনে প্রচুর পরিমানের লেবুর চাহিদা থাকে। গরম থেকে এসে বাসার অনেকে লেবুর শরবত খেয়ে থাকেন। অনেকে ধারণা করে থাকেন লেবুর শরবত খেলে একটু স্বস্তি পাওয়া যাবে। 

আমাদের দেশে নানান জাতের লেবু পাওয়া যায়। যেমন-কমলা লেবু, পাতি লেবু, বাতাবি লেবু, কাগজী লেবু ইত্যাদি। লেবুতে প্রচুর পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাবার। এতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান সমূহ (যেমন- ফ্ল্যাভনয়েডস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন বি, ফলিক এসিড, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও ফসফরাস) যাহা আমাদের হৃদপিন্ড, ফুসফুস, দাঁত, ত্বক প্রভৃতির জন্য খুবই উপকারী। তবে আমরা লেবুর শরবত কেন খাবো এমন প্রশ্নের উত্তরে নিম্নের বিষয়গুলো বর্ণণা করা হল:

লেবুর শরবতের উপকারীতা:

  • দেহের ওজন কমায়:

আমাদের দেশের বেশীর ভাগ মানুষই মোটা। শরীরের গঠন ও কাঠামো অনুযায়ী ওজন বেশী থাকে। আর বাড়তি ওজনের জন্য নানান প্রকার রোগ-ব্যাধি শরীরের বাসা বাধে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়তি ওজন কমাতে নানা প্রকার ঔষধ সেবন করে থাকে। এতে অনেকে উপকৃত হন আবার অনেকে প্রচন্ড ক্ষতির সম্মুখীন হন। কিন্তু লেবু যে আমাদের ওজন কমাতে ঔষধের চেয়েও বেশী কার্যকরী তাহা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। তাই বাড়তি ওজন কমাতে ঔষধের চেয়ে লেবুকে বেশী প্রাধান্য দিতে হবে। লেবু শরীরের অতিরিক্ত চর্বি জমতে দেয় না। তাছাড়া লেবুতে প্রচুর পরিমানে আঁশ জাতীয় পদার্থ প্যাকটিন থাকে, যাহা ক্ষদা কমায়। আর ক্ষুদা কম থাকলে খাওয়াও কম হবে আর ওজন কমবে। তাই প্রতিবারে খাবারের প্লেটে লেবু রাখতে হবে। অথবা লেবুর শরবত করে খেতে হবে। কুসুম কুসুম গরম পানিতে লেবু চিবিয়ে শররব করে তার সাথে সামান্য পরিমানে মধু মিশ্রিত করে খেতে পারলে বেশী উপকার পাওয়া যাবে।

  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:

আঁশ জাতীয় খাবার ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে। ভিটামিনের মধ্যে এ, সি, ই, বিটা ক্যারোটিন জাতীয় খাবার পাকস্থলি, মলদ্বার, জরায়ু, লিভার, স্তন, প্রোস্টেট, ফুসফুস ও অগ্নাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি জাতীয় উপাদান। আর ভিটামিন সি এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যাহা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। লেবুর শরবত ক্যান্সারের কোষ গুলোকে ধ্বংস করে।

  • পিত্তথলীর পাথর দুর করে।

পিত্তরস খাবার হজমে বিশেষ করে চর্বি জাতীয় খাবার হজমে সাহায্য করে। আর লেবুর রসে রয়েছে চর্বি বিরোধী উপাদান, যাহা চর্বিকে গলাতে সাহায্য করে। তাছাড়া পিত্তথলির পাথর দূর করতে দরকার উচ্চ ফাইবার বা অাঁশযুক্ত খাবার। যাহা লেবুর মধ্যে প্রচুর পরিমানে রয়েছে।

  • ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধি উপশম করে:

শীতকালে বেশীরভাগ মানুষেরই জ্বর, সর্দি-কাশি, গলাব্যাথা, টনসিল, শ্বাসযন্ত্রের ইনফেকশন ইত্যাদি রোগ হয়ে থাকে। কুসুম কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে চায়ের মত খেলে পারলে বেশ উপকার পাওয়া যাবে। অল্পতেই সর্দি কাশি ও গলাব্যাথা দূর হয়ে যাবে। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি যাহা সর্দি কাশি দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী। তাছাড়া লেবু স্নায়ু ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। ফুসফুস পরিস্কার করে এ্যাজমা সমস্যার উপশম করে।

  • ক্লান্তি দূর করে:

বেশীক্ষণ গরমে বা রোধে থাকলে মানুষ খুব ক্লান্তিবোধ করে। তখন একগ্লাস লেবুর শরবত পান করলেই নিমিষেই ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তাছাড়া মানসিক চাপ ও দুশ্চিতা দূর করে লেবু। কারণ লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি। মানসিক চাপের কারণে ভিটামিন সি এর ঘাটতি দেখা দেয়। লেবু তা নিমিষেই পূরণ করে দেয়। ফলে পুনরায় দেহ ও মন চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

  • রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও ফসফরাস,ফলিক এসিড, অ্যাসকরবিক এসিড ইত্যাদি। ভিটামিন সি ও আয়রন জ্বর ভাল করে, পটাসিয়াম মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকোষকে সক্রিয় রাখে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। অ্যাসকরভিক এসিড শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ, যাবতীয় ব্যাথা জনিত অসুবিধা দূর করে। তাজা লেবুর রস দাঁতের ব্যাথার উপশম করে। দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপড়া বন্ধ করে। মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।

লেবুর শরবতের অন্যান্য উপকারিতার মধ্যে রয়েছে-

  • কৃমির আক্রমণ হতে রক্ষা করে।
  • লিভার ইনফেকশন দূর করে।
  • হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
  • বদহজম, বুক জ্বালার সমস্যার সমাধান করে।
  • গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান করে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • ত্বকের উজ্জলতা বাড়ায়।
  • ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।


তথ্যসূত্রঃ নলেজ.কম

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

লেবুর সরবত খেলে যা যা উপকার পাবেন তা হলো : ১. পেট পরিষ্কার রাখে।২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।৩. ত্বকের দাগ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।৪. ওজন কমাতে সাহায্য করে।৫. শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

লেবুর শরবত একটি আদর্শ স্বাস্থ্যসম্মত পানীয়। মাত্র একটি মাঝারি আকৃতির লেবু থেকে চল্লিশ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি বা এসকরবিক এসিড পাওয়া যা একজন মানুষের দৈনিক চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট। ভিটামিন ‘সি’ দেহের রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে বা ক্ষত হলে দ্রুতগতিতে কোলাজেন কোষ উপাদান তৈরি করে ক্ষত নিরাময়েও সাহায্য করে এই ভিটামিন ‘সি’। লেবুতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সাইট্রিক এসিড বিদ্যমান যা ক্যালসিয়াম নির্গমন হ্রাস করে পাথুরী রোগ প্রতিহত করতে পারে। লেবুর খোসার ভেতরের অংশে ‘রুটিন’ নামের বিশেষ ফ্ল্যাভানয়েড উপাদান আছে যা শিরা এবং রক্তজালিকার প্রাচীরকে যথেষ্ট শক্তিশালী এবং সুরক্ষা দেয়। ফলে স্বভাবতই হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে। লেবুর অন্যান্য ব্যবহারও কম নয়। রান্নায় বা আহারে লেবুর ব্যবহার বিজ্ঞানসম্মতভাবেই স্বাস্থ্যপ্রদ। ত্বক বা রূপচর্চায় লেবুর ব্যবহার ঐতিহ্যগত ভাবেই সুপ্রচলিত। বয়সজনিত মুখের স্পট বা দাগ সারাতে লেবুর রস যথেষ্ট কার্যকরী। লেবুর রস ব্যবহারে মুখের ব্রণও দ্রুত সারে। বাজারের ভেজাল মিশ্রিত পানীয় না খেয়ে টাটকা লেবুর রসের সাথে সামান্য চিনি বা মধু মিশিয়ে লেমোনেড তৈরি করা হয় যা একই সাথে তৃষ্ণা মেটায়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ