শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

আপনি কর্মক্ষম ব্যক্তিতে পরিণত হবার ‘আগে’ এবং ‘পরে’ দুটোই পুরোপুরিভাবে জীবনের ভিন্ন অধ্যায়। মানবজীবনের যাবতীয় কার্যাবলী অর্থনীতি কেন্দ্রিক। ছাত্রজীবনে নিজের ভরণ-পোষণ এর জন্য নিজ পরিবারের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকেন। কিন্তু চাকরী জীবনে প্রবেশের সাথে সাথে নিজের ও পরিবারের প্রতি বাড়তি দায়িত্ব নিতে হয়। তাই ছাত্রজীবন একপ্রকার প্রস্তুতিমুলক সময় আর অন্যদিকে পরবর্তী জীবনে বাড়তি দায়িত্ব নেবার জন্য। সুতরাং একথা স্পষ্ট যে, ছাত্র থাকা অবস্থায় আপনার আর্থিক যে ধরনের অভ্যাস ছিল তার সাথে চাকুরী জীবনে নানান পার্থক্য আপনার কাছে দৃশ্যমান হবে। পূর্ববর্তী অভ্যাস অনুযায়ী চললে চাকুরী জীবনে অনেক সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে। কারন এসময়ে আপনার ‘লাইফ-স্টাইল’ পুরোপুরি ভাবে পাল্টে যাবে। এক্ষেত্রে অনভিজ্ঞতাও দৈনন্দিন জীবনে আয়-ব্যয় এর সামঞ্জস্য রাখতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রবাদে প্রচলিত আছে, ‘আয় বুঝে ব্যয় করুন’। ছাত্র জীবনে কোন প্রকার পরিকল্পনা ছাড়াই হয়ত টাকা-পয়সা খরচ করতেন। কিংবা আপনার খরচের পরিকল্পনা ছিল আপনাকে ঘিরেই মানে ‘আত্মকেন্দ্রিক’। কিন্তু চাকরী জীবনে সেই পুরোনো অভ্যাস নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আপনার অর্জিত অর্থের যথাযথ পরিকল্পনা ও বণ্টন না করার ফলে সে অর্থ অপ্রতুল মনে হয়। কিন্তু, কর্মজীবন শুরুর পর আপনি যদি কিছু অভ্যাসের পরিবর্তন আনতে পারেন তবে এ ধরনের সমস্যাগুলোকে এড়াতে পারবেন। এ ধরনের ৫ টি অভ্যাসের কথা তুলে ধরছি যা মেনে চলতে পারলে আপনি আর্থিকভাবে লাভবান হবেনঃ  ১. সঞ্চয় করার অভ্যাস গড়ে তুলুন আপনার জীবনের ক্রান্তিকালীন সময়ে একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠতে পারে সঞ্চয়। আপনার ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই আপনাকে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সঞ্চয় করা দূরদর্শিতার লক্ষণ,যা জ্ঞানী মানুষেরা বেছে নেয়। মানুষের জীবনে নানান ঝুঁকি ও বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। সঞ্চয়ই সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারে। তাই চাকরি জীবনে প্রবেশের সাথে সাথে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলুন। উপার্জিত অর্থ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমাতে শুরু করুন, দেখবেন সেই জমানো অর্থই আপনার ভবিষ্যতে বন্ধুর মত সাহায্য করবে।  ২. বাজেট তৈরি করুন আপনার উপার্জিত অর্থকে যথাযথভাবে বণ্টন করতে হলে পরিকল্পনা করা খুবই জরুরী। আর এই পরিকল্পনার জন্য বাজেট তৈরি হতে পারে একটি কার্যকারী উপায়। তাই চাকুরিতে যোগদানের সাথে সাথে বাজেট তৈরির দিকে নজর দিন। এতে করে আপনার অতিরিক্ত ব্যয় কমানো সম্ভব হবে এবং মিতব্যয়ী হতে পারবেন। তাই মাসের শুরুতেই আপনার আয়ের উপর ভিত্তি করে বাজেট তৈরি করে ফেলুন। এতে আপনার লক্ষ্য নির্ধারন হয়ে যাবে যে, আপনি কোন খাতে কতটুকু ব্যয় করতে পারবেন। তা না হলে দেখবেন আয় যথেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও পর্যাপ্ত হচ্ছে না।  ৩. ঋণ করা থেকে বিরত থাকুন ঋণ আপনার দৈনন্দিন অর্থনৈতিক জীবনে বিষফোঁড়ার মতো হয়ে দাঁড়ায়। যা আপনার জীবনে খুবই বাজে প্রভাব ফেলে। চাকুরি জীবনে প্রথমেই যদি ঋণের দিকে ঝুঁকে পড়েন তাহলে আয়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে পারবেন না। অতিরিক্ত ঋণ আপনার দায় বৃদ্ধি করে। সে দায় আপনার আয়ের মধ্যে প্রভাব ফেলে। আর যার ফলে আপনার আয় আপনার কাছে যথেষ্ট মনে হবে না। এছাড়াও মাত্রাতিরিক্ত ঋণ আপনার ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। তাই আপনার উপার্জিত অর্থ দিয়েই আপনাকে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। কীভাবে জীবন ধারণ করলে ঋণের মুখোমুখি হতে হবে না। আর কখনও যদি ঋণের দায়ে পড়তেই হয় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব পরিশোধ করার ব্যবস্থা করুন। ৪. মিতব্যয়ী হোন মনে রাখবেন, চাকুরি জীবনে আপনি কারও মুখাপেক্ষী নন, বরং অন্যদের প্রতি আপনাকে আরো বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। অর্থাৎ নিজের সাথে সাথে কাছের মানুষগুলোর দায়িত্বও নিতে হবে আপনাকে। পূর্ববর্তী জীবনে মিতব্যয়ীতার অভ্যাস না থাকলেও চাকরি পরবর্তী জীবনে মিতব্যয়ী হতেই হবে। মিতব্যয়ী মানে এই নয় যে আপনাকে কৃপণ হতে হবে। বরং আপনার ব্যয়ের প্রতি আরও সচেতন হতে হবে। আপনার মৌলিক চাহিদা মেটাবার পর আপনার অত্যাবশ্যকীয় চাহিদা গুলো পূরনের চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার অহেতুক খরচগুলো কমে আসবে এবং মাস শেষে দেখবেন আপনার আয়কে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারছেন। সেই সাথে পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগীতা করতে পারছেন।  ৫. পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ চালিয়ে যান পরিকল্পনা তৈরি তো হলো। শুধু পরিকল্পনা করলেই কাজ শেষ? অবশ্যই না! কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পোঁছার জন্য সে মোতাবেক কাজ চালিয়ে যেতে হবে। আপনার অনুমিত সকল উপায় চর্চায় মনোনিবেশ করতে হবে। আপনার প্রতিটি অর্জনে ঠিক কতটুকু অর্জিত হল তা কিন্ত একমাত্র পরিকল্পনার সাথে মিলিয়েই জানা সম্ভব। মাসের শুরুতেই পরিকল্পনা করে ফেলুন কীভাবে জীবন-যাপন করলে আয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্যয় করতে পারবেন। যদি আপনি আপনার পরিকল্পিত নিয়মগুলকে আভ্যাসে পরিণত না করতে পারেন তবে তার দীর্ঘমেয়াদী কোন সুফল পাবেন না। তাই আপনাকে ধৈর্য ধারণ করার পাশাপাশি নিয়মগুলো চর্চা করতে হবে। হয়ত আপনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা আপানাকে অভ্যাস থেকে বিচ্যুত করতে পারে। কিন্তু সেই চাপকে প্রতিহত করে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে। তাহলেই চাকুরীতে প্রবেশের পর আর্থিক বণ্টন সম্পর্কিত কোন ঝামেলায় পড়তে হবে না।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ