শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত আল্লাহ তাআলা বলেন : ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺘْﻠُﻮﻥَ ﻛِﺘَﺎﺏَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺃَﻗَﺎﻣُﻮﺍ ﺍﻟﺼَّﻼﺓَ ﻭَﺃَﻧْﻔَﻘُﻮﺍ ﻣِﻤَّﺎ ﺭَﺯَﻗْﻨَﺎﻫُﻢْ ﺳِﺮّﺍً ﻭَﻋَﻼﻧِﻴَﺔً ﻳَﺮْﺟُﻮﻥَ ﺗِﺠَﺎﺭَﺓً ﻟَﻦْ ﺗَﺒُﻮﺭَ، ﻟِﻴُﻮَﻓِّﻴَﻬُﻢْ ﺃُﺟُﻮﺭَﻫُﻢْ ﻭَﻳَﺰِﻳﺪَﻫُﻢْ ﻣِﻦْ ﻓَﻀْﻠِﻪِ ﺇِﻧَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭٌ ﺷَﻜُﻮﺭٌ ‏( ﻓﺎﻃﺮ :২৯-৩০) “যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমার দেয়া রিজিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো অধিক দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।”[১] কুরআন তিলাওয়াত দু’প্রকার। যথা : ১. তিলাওয়াতে লাফজি বা আক্ষরিক পাঠ ২. তিলাওয়াতে হুকমি বা কার্যকর পাঠ। প্রথম প্রকার তিলাওয়াত : তিলাওয়াতে লাফজি তিলাওয়াতে লাফজি, অর্থাৎ কুরআনের অক্ষর ও শব্দ পাঠ করা। এ তিলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কে ওসমান রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ( ﺧَﻴْﺮُﻛُﻢْ ﻣَﻦْ ﺗَﻌَﻠَّﻢَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﻋَﻠَّﻤَﻪُ ) “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যিনি কুরআন মজিদ শিক্ষা করে ও অন্যকে শিক্ষা দেয়।”[২] উম্মুল মোমেনিন আয়েশা সিদ্দিকা রাদিআল্লাহু আনহার সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ) ﺍﻟْﻤَﺎﻫِﺮُ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺴَّﻔَﺮَﺓِ ﺍﻟْﻜِﺮَﺍﻡِ ﺍﻟْﺒَﺮَﺭَﺓِ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﻳَﺘَﺘَﻌْﺘَﻊُ ﻓِﻴﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺷَﺎﻕٌّ ﻟَﻪُ ﺃَﺟْﺮَﺍﻥِ - ﺃﺣﺪﻫﻤﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺘﻼﻭﺓ ﻭﺍﻟﺜﺎﻧﻲ ﻋﻠﻰ ﻣﺸﻘﺘﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻘﺎﺭﻱ ( “আল কুরআনে দক্ষ ও পণ্ডিত ব্যক্তি সম্মানিত পুণ্যবান ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। যে ব্যক্তি কুরআন আটকে আটকে তিলাওয়াত করে এবং তা তার জন্য কষ্টকর হয়, তার জন্য দু’টি প্রতিদান রয়েছে। প্রথমটি, তিলাওয়াতের প্রতিদান, দ্বিতীয়টি কষ্টের প্রতিদান।”[৩] আবু মুসা আশআরী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ( ﻣَﺜَﻞُ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻛَﻤَﺜَﻞِ ﺍﻟْﺄُﺗْﺮُﺟَّﺔِ ﺭِﻳﺤُﻬَﺎ ﻃَﻴِّﺐٌ ﻭَﻃَﻌْﻤُﻬَﺎ ﻃَﻴِّﺐٌ ﻭَﻣَﺜَﻞُ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻟَﺎ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻛَﻤَﺜَﻞِ ﺍﻟﺘَّﻤْﺮَﺓِ ﻟَﺎ ﺭِﻳﺢَ ﻟَﻬَﺎ ﻭَﻃَﻌْﻤُﻬَﺎ ﺣُﻠْﻮٌ ). “যে মোমিন কুরআন তিলাওয়াত করে তার দৃষ্টান্ত কমলালেবুর মত, যা সুস্বাদু ও সুঘ্রাণযুক্ত। আর যে মোমিন কুরআন তিলাওয়াত করে না, তার দৃষ্টান্ত খেজুরের ন্যায় যার ঘ্রাণ নেই, কিন্তু মিষ্টি।[৪] আবু উমামা বাহেলী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : ( ﺍﻗْﺮَﺀُﻭﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻳَﺄْﺗِﻲ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺷَﻔِﻴﻌًﺎ ﻟِﺄَﺻْﺤَﺎﺑِﻪِ). “তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর, কারণ, কুরআন কেয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।”[৫] উকবা বিন আমের রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ( ﺃَﻓَﻠَﺎ ﻳَﻐْﺪُﻭ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﻓَﻴَﻌْﻠَﻢُ ﺃَﻭْ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺁﻳَﺘَﻴْﻦِ ﻣِﻦْ ﻛِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻪُ ﻣِﻦْ ﻧَﺎﻗَﺘَﻴْﻦِ ﻭَﺛَﻠَﺎﺙٌ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻪُ ﻣِﻦْ ﺛَﻠَﺎﺙٍ ﻭَﺃَﺭْﺑَﻊٌ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻪُ ﻣِﻦْ ﺃَﺭْﺑَﻊٍ ﻭَﻣِﻦْ ﺃَﻋْﺪَﺍﺩِﻫِﻦَّ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﺈِﺑِﻞِ ). “তোমাদের মধ্যে হতে যে ব্যক্তি সকালে মসজিদে দু’টি আয়াত পাঠ করে বা শিখে, তাকে দু’টি উট সদকা করার সওয়াব দেয়া হবে। এভাবে যত বেশি আয়াত তিলাওয়াত করবে, ততবেশি উট সদকা করার সওয়াব প্রদান করা হবে।”[৬] আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ( ﻣَﺎ ﺍﺟْﺘَﻤَﻊَ ﻗَﻮْﻡٌ ﻓِﻲ ﺑَﻴْﺖٍ ﻣِﻦْ ﺑُﻴُﻮﺕِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﺘْﻠُﻮﻥَ ﻛِﺘَﺎﺏَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻳَﺘَﺪَﺍﺭَﺳُﻮﻧَﻪُ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺇِﻟَّﺎ ﻧَﺰَﻟَﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺍﻟﺴَّﻜِﻴﻨَﺔُ ﻭَﻏَﺸِﻴَﺘْﻬُﻢْ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔُ ﻭَﺣَﻔَّﺘْﻬُﻢْ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔُ ﻭَﺫَﻛَﺮَﻫُﻢْ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻴﻤَﻦْ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ). “যে কোন সম্প্রদায় আল্লাহর কোন ঘরে একত্রিত হয়ে কুরআন তিলাওয়াত করে এবং নিজদের মাঝে তা পঠন ও পাঠন করে, তাদের উপর শান্তি অবতীর্ণ হয়, আল্লাহর রহমত তাদের ঢেকে রাখে, ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে রাখে এবং আল্লাহ তাআলা নিকটস্থ ফেরেশতাদের সঙ্গে তাদের ব্যাপারে আলোচনা করেন।”[৭] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন : ( ﺗَﻌَﺎﻫَﺪُﻭﺍ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻓَﻮَﺍﻟَّﺬِﻱ ﻧَﻔْﺲُ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻟَﻬُﻮَ ﺃَﺷَﺪُّ ﺗَﻔَﻠُّﺘًﺎ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﺈِﺑِﻞِ ﻓِﻲ ﻋُﻘُﻠِﻬَﺎ ‏) . ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ “তোমরা কুরআনের যথাযথ যতœ নাও, তা মুখস্থ ও সংরক্ষণ কর। ঐ সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন, অবশ্যই উট তার রশি থেকে যেমন দ্রুত পালিয়ে যায়, তার চেয়েও আরো তীব্র বেগে পালানোর বস্তু এ কুরআন।”[৮] আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ( ﻣَﻦْ ﻗَﺮَﺃَ ﺣَﺮْﻓًﺎ ﻣِﻦْ ﻛِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻠَﻪُ ﺑِﻪِ ﺣَﺴَﻨَﺔٌ ﻭَﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺔُ ﺑِﻌَﺸْﺮِ ﺃَﻣْﺜَﺎﻟِﻬَﺎ ﻟَﺎ ﺃَﻗُﻮﻝُ ﺍﻟﻢ ﺣَﺮْﻑٌ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺃَﻟِﻒٌ ﺣَﺮْﻑٌ ﻭَﻟَﺎﻡٌ ﺣَﺮْﻑٌ ﻭَﻣِﻴﻢٌ ﺣَﺮْﻑٌ ‏) . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ “যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ।”[৯] এ হলো কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত। অল্প আমলে অধিক সওয়াব তার জন্যই যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সওয়াব আকাঙ্খা করে। সুতরাং যে কুরআনের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করে, কুরআনের যথাযথ তদারকি করে না এবং তা দ্বারা উপকৃত না হয়, সে ক্ষতিগ্রস্ত। হে আল্লাহ! আমাদের হেফাজত করুন এবং নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করার তওফিক দান করুন।প্রশ্নটি করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।