শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

শুষ্ক কাশির জন্য বহুল প্রচলিত ঘরোয়া চিকিৎসা হচ্ছে মধু, যষ্টিমধু ও লবণ পানির গড়গড়া। এসব চিকিৎসা এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হচ্ছে। শুষ্ক কাশির কিছু ঘরোয়া চিকিৎসার পেছনে বৈজ্ঞানিক সমর্থনও রয়েছে। এগুলো স্বল্পমেয়াদে ব্যবহার নিরাপদ বিবেচনা করা হয়েছে। এখানে শুষ্ক কাশি দমনে কিছু ঘরোয়া করণীয় দেয়া হলো, কিন্তু তা সত্ত্বেও কাশি বাড়তে থাকলে ও এর পাশাপাশি অন্যকোনো মারাত্মক উপসর্গ দেখা দিলে মেডিক্যাল সেবা পেতে চেষ্টা করুন। মধু খান: যেকোনো কাশি সারাতে সবচেয়ে পুরোনো অন্যতম ঘরোয়া চিকিৎসা হলো মধু। এটি কেবল গলাতে সুরক্ষামূলক প্রলেপই দেয় না, এতে বিদ্যমান প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক উপাদান গলার অস্বস্তিও কমাতে পারে। মধুর জীবাণু-বিরোধী প্রতিক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণ দুর্বল হয়ে পড়ে। মধু শরীরের জন্য সহনশীল ও ছোট ছেলেমেয়েদের খাওয়ানো যাবে। কিন্তু এক বছরের কম বয়সি শিশুদের মধু খাওয়া উচিত নয়, এতে ইনফ্যান্ট বটুলিজম নামক মারাত্মক অসুস্থতা হতে পারে। মধু রক্ত শর্করার মাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে, তাই যারা গ্লুকোজের লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তারা বিকল্প উপায় বেছে নিতে পারেন। গরম পানির ভাপ নিন: শ্বাস টেনে গরম পানির বাষ্প গ্রহণ করলেও শুষ্ক কাশি প্রশমিত হবে। এর সঙ্গে মেন্থল মেশালে আরো ভালো হয়। এমনকি মেন্থল ছাড়াও শুধু গরম পানির ভাপে শুষ্ক ও উক্ত্যক্ত নাকের প্যাসেজ আর্দ্র হবে, গলা ব্যথা কমবে ও কাশির তীব্রতা হ্রাস পাবে। গরম পানিতে তুলসি যোগ করলেও ঠান্ডা, ফ্লু, ব্রনকাইটিস, সাইনুসাইটিস, অ্যাজমা ও অ্যালার্জি জনিত কাশির চিকিৎসায় কার্যকারিতা বাড়বে। গরম পানির ভাপ টানার সময় আর্দ্রতার মাত্রা বাড়াতে মাথার ওপর একটি তোয়ালে ধরে রাখুন। যষ্টিমধুর চা পান করুন: যষ্টিমধুর চা গলায় প্রশান্তিদায়ক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। গ্রোসারি শপে বা অনলাইনে যষ্টিমধুর চা পেতে পারেন, অথবা রঙ চায়ে এক চা-চামচ যষ্টিমধুর গুঁড়া মিশিয়ে পান করতে পারেন। যষ্টিমধুর চা নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত; তবে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে কিছু সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন- রক্তচাপ বৃদ্ধি, অনিয়মিত মাসিক, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, শরীরে পানি জমা ও যৌনশক্তি কমে যাওয়া। লবণ পানির কুলকুচা করুন: প্রায়সময় চিকিৎসকেরা রোগীদের গলার অস্বস্তি দূর করতে গরম পানির গড়গড়া করতে পরামর্শ দেন। লবণ পানি গলার অস্বস্তিকর তরল সরিয়ে ফোলা, কাশি ও অন্যান্য অস্বস্তি কমাতে ভূমিকা রাখে। আমেরিকান জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, সাধারণ লবণ পানির গড়গড়াতে শ্বাসতন্ত্রীয় সংক্রমণের উপসর্গ দুর্বল হয়েছে ও সংক্রমণের তীব্রতা প্রতিরোধ হয়েছে। হলুদ পানি পান করুন: হলুদের কারকুমিনে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কিছু ক্ষমতা রয়েছে। শতশত বছর ধরে আয়ুর্বেদিক মেডিসিন হিসেবে হলুদ ব্যবহৃত হচ্ছে, যা শ্বাসতন্ত্রের রোগকে দুর্বল করতে পারে বলে ধারণা করা হয়। কিছু গবেষণা সাজেস্ট করছে, হলুদ খেলে কাশি ও অ্যাজমার অন্যান্য উপসর্গ প্রশমিত হতে পারে। তবে ভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট শুষ্ক কাশি দমাতে হলুদ কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে তা নিশ্চিত হতে আরো গবেষণার দাবি রাখে। সাধারণত হলুদ চা শরীরের জন্য সহনশীল; কিন্তু এই চা অতিরিক্ত পান করলে পেট ব্যথা, ডায়রিয়া ও বমিভাব হতে পারে। আদা চা পান করুন: কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আদার একটি কেমিক্যাল কম্পাউন্ড কাশির উদ্রেককারী শ্বাসনালির অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে দমিয়ে রাখতে পারে। কেবল চা হিসেবে নয়, আদা পানির ভাপ টেনেও উপকার পেতে পারেন। মনে রাখবেন, অত্যধিক আদা খেলে পেট খারাপ, বুকজ্বালা ও ডায়রিয়া হতে পারে।