গরম যে হারে বাড়ছে, তাতে রাতে ভালোভাবে ঘুমানোটা বেশ কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে গরম এড়িয়ে কীভাবে সহজেই ঘুমিয়ে পড়া যায় সে বিষয়ে ১০টি উপায়ের কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাজ্যের লাফবারাহ ইউনিভার্সিটির ক্লিনিক্যাল স্লিপ রিসার্চ ইউনিটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক কেভিন মরগান এবং স্লিপ কাউন্সিলের লিসা আর্টিস এ বিষয়ে যেসব পরামর্শ দিয়েছেন তা তুলে ধরা হলো- দিবানিদ্রা নয় : গরম আবহাওয়ায় দিনের বেলা এমনিতেই সব সময়ই কেমন যেন আলসেমি ভাব থাকে। এর কারণ হচ্ছে, দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ঠিক রাখতেই আমাদের বেশি শক্তি খরচ করতে হয়। কিন্তু রাতের বেলা যদি ভালোভাবে ঘুম না হয় তা হলে দিনের বেলা মোটেও একটু ঘুমিয়ে নেয়ার কথা ভাবা যাবে না। গরম আবহাওয়ায় বেশি সময় ধরে ঘুম হয় না। বরং ওই সময়টুকু রাতের জন্য রেখে দেয়াটাই ভালো। সময় : গরম আবহাওয়ার কারণে প্রতিদিনের অভ্যাসে বদলের প্রবণতা তৈরি হতে পারে। তবে এটা করা যাবে না। কারণ দৈনন্দিন অভ্যাস বদলালে সেটি ঘুমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। সে জন্যই নিয়মিত সময়ে ঘুমাতে যেতে হবে। আর ঘুমাতে যাওয়ার আগে যে কাজগুলো আপনি করে অভ্যস্ত সেগুলো নিয়ম করেই করতে হবে। শোয়ার ঘর ঠাণ্ডা রাখতে হবে : রাতে যাতে শোয়ার ঘরটি ঠাণ্ডা থাকে তার জন্য ছোটখাটো কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন- দিনের বেলা সূর্যের আলো সরাসরি যাতে ঘরে ঢুকতে না পারে তার জন্য পর্দাগুলো টেনে রাখা যেতে পারে। বাড়ির যে দিকটায় সবচেয়ে বেশি রোদ পড়ে, সেদিকের জানালা বন্ধ রাখা যেতে পারে। এতে করে বাইরে গরম বাতাস ঘরের ভেতর ঢুকতে পারবে না। ঘুমাতে যাওয়ার আগে জানালা গুলো খুলে দিতে হবে যাতে ঠাণ্ডা বাতাস ঘরে ঢুকতে পারে। বিছানা : বিছানায় ঘুমানোর জিনিসপত্র যেমন অতিরিক্ত বালিশ, কাঁথা এগুলো যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। পাতলা সুতি কাপড় বিছানার চাদর হিসেবে ব্যবহার করলে তা শরীরের ঘাম দ্রুত শুষে নেয়। তবে গরমে ঘরের পরিবেশ গরম থাকলে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা নিচে নেমে যায়। যার কারণে মাঝেমধ্যে শীত লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে পাতলা কাঁথা রাখা যেতে পারে। পাখার ব্যবহার : গরম আবহাওয়ায় ছোট একটি পাখাও বেশ কাজে আসতে পারে। বিশেষ করে যখন ঘাম হয়। পাখার বাতাস ঘাম দ্রুত ঘাম শুকিয়ে যেতে সাহায্য করে, যা দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। যদি হাতের কাছে পাখা না থাকে তা হলে বিকল্প হিসেবে পানি গরম রাখার ব্যাগে গরম পানির পরিবর্তে ঠাণ্ডা পানি রেখে সেটি ব্যবহার করা যেতে পারে। শুনতে অদ্ভুত হলেও গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে কাজ করে ভেজা মোজা। যে মোজাটি পরবেন সেটি আগে থেকেই ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে নিয়ে তার পর পরুন। এতে আপনার ত্বক ও শরীরের তাপমাত্রা নিচে নেমে আসবে। বেশি করে পানি পান করুন : সারা দিন ঘন ঘন পানি পান করুন। তবে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক সাথে বেশি পরিমাণে পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন। একদিকে আপনি যেমন তৃষ্ণার্ত হয়ে ঘুম থেকে জাগতে চাইবেন না, ঠিক সেভাবে বেশি পরিমাণে পানি পান করে নিশ্চয়ই রাতে বেশ কয়েক বার বাথরুমে যাওয়া এড়াতে চাইবেন আপনি। কোমল পানীয়ের বিষয়ে সতর্ক থাকুন : কোমল পানীয় পান করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ কিছু কিছু কোমল পানীয়তে বেশি মাত্রায় ক্যাফেইন থাকে। এতে মানুষের মূল স্নায়ুতন্ত্রে উদ্দীপনা সৃষ্টি করার কারণে ঘুম আসে না। সেই সঙ্গে অতিমাত্রায় অ্যালকোহল পান করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। অনেকেই গরম আবহাওয়ার কারণে বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল পান করে থাকেন, যা ঠিক নয়। কারণ অ্যালকোহল ঘুম পাড়িয়ে দিতে সাহায্য করলেও শেষ রাতে ঘুম ভাঙার প্রবণতা তৈরি করে এবং সর্বোপরি ঘুমের মান কমিয়ে দেয়। শান্ত থাকুন : ঘুম হচ্ছে না বলে উত্তেজিত হয়ে পড়লে ঘুম আরও দূরে চলে যাবে। তার চেয়ে এ ধরনের পরিস্থিতিতে শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। বই পড়া, লেখা এমনকি মোজা ভাঁজ করার মতো কাজও এ সময়ে শান্ত থাকতে সহায়তা করতে পারে। তবে কোনোভাবেই মোবাইল ফোন ব্যবহার বা ভিডিও গেম খেলা যাবে না। কারণ নীল আলো ঘুমের সহায়ক নয় এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ড উত্তেজক হিসেবে কাজ করে। আর ঘুম আসলে সঙ্গে সঙ্গে বিছানায় চলে যেতে হবে। শিশুদের দিকে খেয়াল রাখুন : বলা হয় যে, সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ঘুম হয় শিশুদের। তবে পরিবারের মধ্যে ছোট কিছুর পরিবর্তনও তাদের মধ্যে নিদ্রাহীনতা তৈরি করতে পারে। তাই তাদের ঘুমাতে যাওয়ার এবং গোসল করার সময় ও অভ্যাসের দিকে খেয়াল রাখুন। গরমের কারণে খুব বেশি ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করানো যাবে না তাদের। কারণ এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে শরীরের তাপমাত্রায় পরিবর্তন আনে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে কুসুম গরম পানিতে গোসল খুব ভালো ঘুমে সহায়ক। শিশুরা যেহেতু বলতে পারে না তাই শিশু ঘুমালে তার কপাল, পিঠ এবং পেটে হাত দিয়ে দেখতে হবে যে সে অতিরিক্ত গরম অনুভব করছে কিনা। ঘুম নিয়ে দুশ্চিন্তা বন্ধ করুন : বেশিরভাগ মানুষেরই ঠিকঠাকভাবে কাজ করতে হলে প্রতি রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার হয়। কিন্তু ঘুম না হলে এটি নিয়ে দুশ্চিন্তা করে লাভ হবে না। মনে রাখতে হবে যে, পর পর এক-দুই রাত ঠিকভাবে ঘুম না হলেও বেশ ভালোভাবেই দৈনন্দিন কাজ করতে পারে মানুষ। এর কারণে দিনে দু-একবার হাই তুলতে হলেও তা আসলে স্বাস্থ্যের ওপর তেমন প্রভাব ফেলে না।তথ্যসূত্র : বিবিসি