শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

‘হ্যালুসিনেশন’ নানা মানসিক রোগের একটা উপসর্গ। মানসিক রোগীরা তাদের কানে নানান ধরনের গায়েবি কথাবার্তা শোনার কথা বলে থাকেন। এটি আসলে হ্যালুসিনেশন। আমরা অনেক সময় ঘুম থেকে জাগার সময় আশপাশের কেউ যেন নাম ধরে ডাকছে এমন মনে করে থাকি। এটিও হ্যালুসিনেশন। এটি হতে অন্তত একটা ব্যাপার সুসপষ্ট- হ্যালুসিনেশন সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থাতেও ঘটতে পারে। এ নিয়ে পরবর্তীতে আলাপ করা যাবে। আগে হ্যালুসিনেশনের আসল পরিচিতি জানা যাক। সাধারণ ধর্ম আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয়ের একটা সাধারণ ধর্ম হলো এরা নির্দিষ্ট উদ্দীপকে উদ্দীপিত হয় ও আমাদের মনে কোনো বিশেষ অনুভূতি জাগায়। এক এক ইন্দ্রিয় এক এক অনুভূতি জাগায়। শ্রবণেন্দ্রিয় শব্দের অনুভূতি জাগায়, ত্বক সপর্শানুভূতি জাগায়, জিহ্বা স্বাদের অনুভূতি জাগায়, নাসিকা গন্ধের অনুভূতি জাগায়, চোখ দর্শনের অনুভূতি জাগায়। আমাদের সামনে যখন কোনো একটা দড়ি ঝুলতে থাকে তখন একে স্বাভাবিক অবস্থাতে দড়ি মনে হবে। যখন কেউ দড়িকে সাপ দেখেন তখন ইলিউশন বা দৃষ্টিভ্রম হয়। দড়ি এখানে একটা উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে থাকে। ইলিউশনে উদ্দীপকের দরকার হয়। কিন্তু হ্যালুসিনেশন একদম ভিন্ন প্রক্রিয়া। সামনে কোনো কিছুই নেই অথচ ব্যক্তি কিছু দেখতে পায়। রোগীরা অনেক ক্ষেত্রে বলে থাকে তার সামনে একটা কুকুর হাঁটছে। আশপাশের কেউ তো দেখছে না। রুম তো একদম আলোকিত। তাহলে রোগী কি মিথ্যা বানানো গল্প বলে যাচ্ছে? আসলে রোগীর চোখে হ্যালুসিনেশন ঘটছে। কিছু ঘটনা হ্যালুসিনেশন নানাভাবে ঘটতে পারে। যাদের পরিবারের কোনো সদস্য সিজোফ্রেনিয়ার মতো কোনো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত তাদের কতক আচরণ হতে এটি বুঝে নেয়া যায়- (১) রহিমা। বয়স ৩০ বছর। প্রচণ্ড কান্নাকাটি করছে। তার সাথে জিন-পরীরা কথা বলে যাচ্ছে। সে সবাইকে দেখতে পাচ্ছে। রোগী আসলে হিস্টিরিয়াতে আক্রান্ত। তার চোখের হ্যালুসিনেশন ঘটেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন। (২) করিম। ডাক্তাররা তার রোগ নির্ণয় করেছেন ‘সিজোফ্রেনিয়া’। সে সব সময় একা একা কথা বলতে থাকে। আসলে তার একা একা কথা বলাটা হ্যালুসিনেশনের একটা পরোক্ষ প্রকাশ। তার কানে প্রতিনিয়ত নানা গায়েবি আওয়াজ আসে। সে এসব বক্তাবিহীন সংলাপের উত্তর প্রতিনিয়ত দিয়েই চলেছে। তাই তো তার একা একা কথা বলা। (৩) অনেক মানসিক রোগী কানে তুলা দিয়ে থাকেন। কারণ তিনি কোনো এক অজানা জায়গা হতে ভেসে আসা কথাগুলো শুনতে চান না। তাই তো তার এ সতর্কতা অবলম্বন। কিন্তু তাতে কি শেষরক্ষা হবে? এমনও অনেক ঘটনার নজির দেখা গেছে যেখানে রোগী ধারাল কোনো যন্ত্র দিয়ে কানের পর্দা পর্যন্ত ছিঁড়ে দিয়েছে। এতে ফলাফল যা তা হলো রোগী তার কোলাহল বিশ্ব হতে মুক্তি পেয়ে গেলেও এমন এক জগতে তার প্রবেশ ঘটেছে যেখানে বাইরের কোনো শব্দ নেই, কেবল সে সব কথা। তাহলে হ্যালুসিনেশন! হ্যালুসিনেশন হলো এমনি একটি দশা-কোনো প্রকার উদ্দীপনা ব্যতিরেকে ব্যক্তি কোনো বিশেষ ইন্দ্রিয়ানুভূতি লাভ করে। এ অনুভূতির সঞ্চার স্বাভাবিক অনুভূতির মতোই ঘটে থাকে। যেমন ধরুন এক ব্যক্তি গায়েবি কথা শুনে থাকে মানে শ্রবণেন্দ্রিয়ের হ্যালুসিনেশন ঘটে থাকে। এ গায়েবি কথা খুব হাল্কাভাবে ঘটে থাকে এমন নয় কিন্তু। আশপাশের লোকজনের কথা সে যেমনভাবে শুনতে পায়, কানের গায়েবি কথাও ঠিক তেমনভাবে ঘটে থাকে। হ্যালুসিনেশন দেহের প্রতিটি ইন্দ্রিয়তে ঘটতে পারে। শোনার হ্যালুসিনেশন কানে গায়েবি আওয়াজ আসাকে বলা হয় শোনার হ্যালুসিনেশন। বেশির ভাগ মানসিক রোগের এটি ঘটে থাকে। রোগী কানে কথা শুনতে পায়। রোগ নির্ণয়ে কেবল এতটুকু তথ্য জানলেই যথেষ্ট নয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞগণ এ ক্ষেত্রে কানের গায়েবি আওয়াজের খুঁটিনাটি জিজ্ঞাসা করে থাকেন। কারণ কেবল হ্যালুসিনেশন হতে রোগ নিরূপণ করা যায় না। উল্লেখ্য, হ্যালুসিনেশন ছাড়াও রোগীর আরো নানা উপসর্গ থাকে। চোখের হ্যালুসিনেশন ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন। রোগী চোখের সামনে কোনো বস্তু দেখতে পায়। এতেও আবার আকারের পরিবর্তন ঘটতে পারে। কোনো বস্তুকে তার স্বাভাবিক আকারের চেয়েও ছোট অবয়বে দেখতে পারে। আবার অনেক বেশি বিবর্তিত হতে পারে। রোগী এ ক্ষেত্রে তার সামনে দৈত্যের কথা বলতে পারে। ত্বকের হ্যালুসিনেশন রোগী বলতে পারে তার ত্বকের ওপর দিয়ে বা নিচ দিয়ে শুয়ো পোকা চলাচল করছে। অপর একদল বলে থাকে কেউ যেন প্রতিদিন তার সঙ্গে সঙ্গম করে যাচ্ছে। তার শরীরের মাঝে কেউ যেন ইলেকট্রিক শক দিচ্ছে। এগুলো ত্বকের হ্যালুসিনেশন। জিহ্বা আর নাসিকার হ্যালুসিনেশন মনোরোগ গবেষকরা এ দুটোকে এক সাথে উল্লেখ করে থাকেন। কারণ এ দুটো নাকি এক সাথে ঘটে থাকে। জিহ্বার হ্যালুসিনেশনে রোগী কোনো এক অজানা জায়গা হতে খাবারের স্বাদ পেয়ে থাকে। নাসিকার হ্যালুসিনেশনে আশপাশের কেউ কোনো গন্ধ শুঁকছে না অথচ রোগী প্রতিনিয়ত বলে যাচ্ছে তার নাকে যেন কোথা হতে এক উৎকট গন্ধ আসছে।