Call

অনেক সময় পুরুষের স্তন অস্বাভাবিক বড় হয়ে যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে গাইনেকোমাস্টিয়া। শারীরিক এই পরিবর্তন যেমন অস্বস্তিকর, অনেকের জন্য তেমনি আবার দুশ্চিন্তারও কারণ। বিশেষ করে কিশোরদের জন্য এ সমস্যা বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, সতীর্থদের কাছে বুলিংয়েরও শিকার হতে দেখা যায়।

অনেক সময় স্থূলতার কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে চর্বি জমে, চর্বি জমে স্তনও তখন বড় দেখায়। একে বলা হয় ‘ছদ্ম-গাইনেকোমাস্টিয়া’। তবে গাইনোমাস্টিয়ার ক্ষেত্রে চর্বি নয়, স্তন গ্রন্থি বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি এক বা দুই স্তনেই হতে পারে।

গাইনেকোমাস্টিয়া নবজাতক, বয়ঃসন্ধিকাল ও বয়স্ক পুরুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এদের মধ্যে বয়ঃসন্ধিকালীন গাইনেকোমাস্টিয়া বেশি উদ্বেগের কারণ। সাধারণভাবে শতকরা ৭৫ শতাংশ পুরুষের বয়ঃসন্ধিকালে খুব অল্প সময়ের জন্য স্তন বড় হওয়ার মতো পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে ১০ বছর বয়সে দেখা গেলেও মূলত ১৩-১৪ বছর বয়সে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ছেলের মধ্যে এমনটা পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত এটি দুই বছরের মধ্যেই কমে যায়। বয়ঃসন্ধিকালীন হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে এমনটা হয়। তবে এই পরিবর্তন যদি বেশি দিন স্থায়ী হয় বা স্তন অনেক বড় হতে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


বয়ঃসন্ধিকালীন গাইনেকোমাস্টিয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। তবে ধারণা করা হয় শরীরে ইস্ট্রোজেন ও এন্ড্রোজেন নামের দুটি সেক্স হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা হলে নারী হরমোন ইস্ট্রোজেন বেড়ে যায় অথবা পুরুষ হরমোন বা এন্ড্রোজেনের মাত্রা কমে যায়। পাশাপাশি আরও কিছু হরমোন যেমন ইনসুলিন, গ্রোথ হরমোন, থাইরক্সিন, গ্লুকোকর্টিকয়েড ও প্রলেকটিন হরমোনজনিত সমস্যা স্তন বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত।

স্থূল শিশুদের গাইনেকোমাস্টিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এর সঙ্গে জন্মগত ও পারিবারিক কিছু কারণও দায়ী। পাশাপাশি যেসব রোগ শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বাড়ায় বা এন্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দেয়, বিশেষ করে অণ্ডকোষ, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি, ফুসফুস বা লিভারের রোগে আক্রান্ত হলে এবং কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় গাইনেকোমাস্টিয়া দেখা দিতে পারে। তাই গাইনেকোমাস্টিয়ার ঝুঁকি কমাতে কিশোরদের ওষুধ সেবনের ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেসব ওষুধ প্রলেকটিন হরমোনের মাত্রা বাড়ায়, তার মধ্যে ডমপেরিডন এবং কিছু মানসিক রোগের ওষুধ উল্লেখযোগ্য।

১০ বছর বয়সের আগেই গাইনেকোমাস্টিয়া দেখা দিলে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। এ ছাড়া স্তনের চামড়া দেবে গেলে, স্তনবৃন্ত ভেতরে ঢুকে গেলে বা স্তন থেকে কোনো ধরনের রস বের হলে জরুরি ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কারণ অনুসন্ধানের জন্য উপসর্গ অনুযায়ী পরীক্ষা করতে হবে। তবে সাধারণ বয়ঃসন্ধিকালীন গাইনেকোমাস্টিয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বড় বা ব্যথা না হলে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাই ভালো। অতিরিক্ত ওজন থাকলে কমাতে হবে। কোনো ওষুধের কারণে হলে সেটা বন্ধ করা যায় কি না দেখতে হবে। দুই বছরের মধ্যে না কমলে বা অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসার সুযোগ আছে। বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন, অনেক দিন হয়ে গেলে, ওষুধে কাজ না হলে বা স্তন অতিরিক্ত বড় হলে শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।