শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেন ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত নাইটহুড উপাধি বর্জন করেন? পাঞ্জাবের অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়েছিল ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিল। এই হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক ছিল ইংরেজ বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডায়ার। তিনি তখন পাঞ্জাবের সামরিক শাসক। হিন্দু, মুসলমান ও শিখরা সম্মিলিতভাবে ইংরেজবিরোধী আন্দোলন শুরু করে।

 এক পর্যায়ে আন্দোলন থামাতে পাঞ্জাবে সামরিক শাসন জারি করে ব্রিটিশ শাসক। সামরিক আইনের প্রজ্ঞাপনে চার জনের অধিক লোক একত্রে সমাগম নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এই আদেশ তেমন প্রচার করা হয়নি বা জনগণ অবহিত ছিল না। ফলে জালিয়ানওয়ালাবাগে সেদিন উপস্থিত হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ। এদের বেশিরভাগই এসেছিলেন শহরের বাইরে থেকে। যারা ওই সামরিক প্রজ্ঞাপন সম্পর্কে বিন্দুমাত্র অবহিত ছিলেন না। প্রায় পাঁচ হাজার সংগ্রামী জনতা বিকাল পাঁচটায় জালিয়ানওয়ালাবাগে জনসভায় বক্তৃতা শুনছিলেন। এ সময় মঞ্চে অর্থাৎ উঁচু একটি বেদীর উপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন এক বক্তা। তখনই বিগ্রেডিয়ার ডায়ার বেশ কিছু সৈন্য নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন এবং বাগের প্রবেশদ্বারের দুদিকে সৈন্য মোতায়েন করেন। কোনো রকম উস্কানিমূলক বক্তৃতা অথবা জনতার আক্রমণ ছাড়াই পাঁচ হাজার লোকের সমাবেশে ডায়ার গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। বিরতি ছাড়া দশ মিনিটেরও বেশি সময় গুলি চালানো হয় নিরীহ, নিরস্ত্র জনতার উপর। উঁচু দেয়াল ঘেরা বাগ থেকে জনতা সেদিন প্রাণরক্ষার জন্য পথ খুঁজে পায়নি। ডায়ারের সৈন্যরা সেদিন কোনো রকম সতর্কতা ছাড়াই জনতার উপর ১৬৫০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছিল। এ ঘটনায় নিহত হয়েছিল প্রায় পাঁচশ দেশপ্রেমিক জনতা। এতো মানুষ হত্যার পরেও ডায়ার অনুশোচনা করেনি। ভুল বিবেচনার দায়ে (A grave error of judgement) দোষী সাব্যস্ত করে সভ্য(!) ইংরেজ সরকার তাকে তিরস্কার করেছিল মাত্র। ধিক্ এই সভ্যতাকে! বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষ জালিয়ানওয়ালাবাগের এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। এই অমানবিক হত্যাকাণ্ডে রাশিয়ার তৎকালিন নেতা লেনিন এত বেশি বিচলিত হয়েছিলেন যে তিনি কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তৃতায় তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। ভারতবর্ষের বাইরে যখন এভাবে এই ঘটনার জন্য প্রতিবাদ সংঘটিত হচ্ছিল তখন স্বাভাবিকভাবেই এ উপমহাদেশের মানুষ নীরব ছিলেন না। তারাও এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন। আর এই তালিকায় সবার ওপরে ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম।

Meaning

Call

১৯১৩ সালে নোবেল গ্রহণ করার পর, ১৯১৫ সালের ৩ জুন সাহিত্য প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ইংরেজরা ' নাইটহুড ' সম্মানে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯১৯ সালের ৩১ মে তিনি ত্যাগ করেন সেই উপাধি। কারণ, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড মেনে নিতে পারেননি কবিগুরু। ঘটনা ঘটার পর তিনি জানতে পারেন এবং নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিবাদ জানানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তিনি।