শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

হাশরের ময়দানে মানুষের পাশাপাশি সকল পশু-পাখি‌ ও জীব-জন্তুও পুনরুত্থিত হবে এবং দুনিয়াতে যে সব পশু-পাখী অন্য পশু-পাখীর উপর অন্যায়ভাবে আক্রমণ করেছিলো বা একে অপরের প্রতি জুলুম করেছিলো সে দিন মহান আল্লাহ তাদের থেকে কেসাস বা সমপরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যবস্থা করবেন। তারপর আল্লাহর হুকুমে সেগুলো পুনরায় মাটিতে মিশে যাবে। অর্থাৎ সেখানেই তাদের যবনিকা ঘটবে। এরপর তাদের জান্নাত বা জাহান্নামে যাওয়ার আর কোনও প্রশ্ন থাকবে না। পক্ষান্তরে মানুষের পাপ-পুণ্য হিসাব-নিকাশ ও পারস্পারিক জুলুম-অবিচারের বিচারকার্য সম্পন্ন হওয়ার পর তাদেরকে চির সুখের নীড় জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে অথবা মর্মন্তুদ শাস্তির স্থান জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। কুরআন-হাদিস এবং সাহাবী ও মুসলিম মনিষীদের মতামতের আলোকে এটাই সঠিক কথা।  আল্লাহ তাআলা বলেন, وَإِذَا الْوُحُوشُ حُشِرَتْ আর যখন বন্য পশুদেরকে (হাশরের মাঠে) সমবেত করা হবে।” (সূরা তাকবীর: ৫) কাতাদা রহ. এ আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে বলেন, هذه الخلائق موافية يوم القيامة، فيقضي الله فيها ما يشاء এ সকল সৃষ্টি জীবকে কিয়ামতের দিন মানুষের সাথে পুনরুত্থিত করার পর আল্লাহ তাআলা যেভাবে চান সেভাবে তাদের মাঝে বিচার-ফয়সালা করবেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

হজরত আবু বারযা আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দার দুটি পা ততক্ষণ পর্যন্ত নড়াতে পারবে না; যতক্ষণ না তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে যে, তোমার জিন্দিগি কোথায় ব্যয় করেছ? জ্ঞানানুসারে কি আমল করেছ? সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছ আর কিসে খরচ করেছ এবং তোমার শরীরকে কী কাজে নিঃশেষ করেছ?’ (তিরমিজি, দারেমি) হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, হাশরের ময়দানে প্রত্যেক বনি আদমকেই আল্লাহ তাআলার দরবারে তার কর্মের হিসাব দিতে হবে। হাশরের ময়দানে হিসাব-নিকাশ হবে দু ধরনের।প্রথমত : যাদের হিসাব সহজ হবে, তাদের হিসাব-নিকাশ পেশ করা হবে। হাদিসে এসেছে-হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামতের দিন যে কারো হিসাব নেয়া হবে; সে ধ্বংস হবে।’ আমি (আয়েশা) বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহা! আল্লাহ তাআলা কি এরশাদ করেন নাই, ‘আর যার ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে তার হিসাব-নিকাশ সহজ হবে।’ (সুরা ইনশিকাক : আয়াত ৭-৮)রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘এতো শুধু (আমলনামা) পেশ মাত্র; কারণ কিয়ামতের দিন যে কারো হিসাব পর্যবেক্ষণ করা হবে সে নির্ঘাত আজাবে নিপতিত হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)দ্বিতীয়ত : যাদের হিসাব-নিকাশ শক্তভাবে নেয়া হবেছোট-বড় সব ব্যাপারেই প্রত্যেককে জিজ্ঞাসা করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে যদি সত্য বলে তাহলে ভালই। আর যদি মিথ্যা বলার বা গোপন করার চেষ্টা করে, তবে হিসাব-নিকাশের দিন তার মুখে মোহর মেরে দেয়া হবে এবং তার অঙ্গ-প্রতঙ্গকে কথা বলার জন্য বলা হবে।আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেব; তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।’ (সুরা ইয়াসিন : আয়াত ৬৫)কিয়ামতের দিনে সব মানুষের হিসাব হবে। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদেরকে এর আওতামুক্ত রেখেছেন; তারা ব্যতীত। যেমন-এ উম্মতের সত্তর হাজার মানুষ রয়েছে। যারা বিনা হিসাব-নিকাশ ও আজাব ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে। কাফেদের হিসাব এবং কর্মসমূহ পেশ করা হবে তাদেরকে তিরস্কার করার জন্য। তাদের আজাব বিভিন্ন ধরনের হবে।সুতরাং যার পাপ বেশী হবে, তার শাস্তিও বেশি হবে। আর যার পাপ কম হবে তার শাস্তি কম হবে। আর যার পূণ্য থাকবে তার আজাব হালকা করা হবে কিন্তু জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম উম্মতে মুহাম্মাদীর হিসাব-নিকাশই অনুষ্ঠিত হবে। আল্লাহর হকের মধ্যে সর্ব প্রথম নামাজের হিসাব নেয়া হবে।যদি নামাজের সঠিক হয় তবে বাকি সব আমল তার ঠিক হবে। আর যদি নামাজ বিনষ্ট হয় তাহলে বাকি সবআমলই তার বিনষ্ট হবে। আর বান্দার হকের মধ্য হতে সর্বপ্রথম মানুষের বিচারহবে খুনের অপরাধের।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ