শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

আপনি সুইসাইড করবেন, লাফ দিলেন ১০০ তলা ভবনের ছাদ থেকে। কী ঘটবে? যাই ঘটুক, তবে এর চেয়ে ফালতু ব্যপার আর হতে পারে না। আপনি ৯৯ তলা পর্যন্ত পড়তেই আপনার মনে হবে রান্না ঘরে গ্যাসের চুলা জ্বলছে, চুলাটা বন্ধ করে রাখা উচিত ছিল, বড় ধরনের যেকোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এরপর ৯৮ তলা, ৯৭ তলা, ৯৬ তলা, ৯৫ তলা, ৯৪, ৯৩, ৯২, ৯১… আপনি পড়তেই থাকলেন, তলা কমতেই থাকল; তবে চিন্তা বাড়তেই থাকবে। হঠাৎ করে মনে পড়বে, মা মনে হয় মোবাইল ফোনে ফোন দিচ্ছে, আপনি কচুর লতি আর চিংড়ি মাছ খেতে চেয়েছিলেন, আপনার বাবা নিশ্চিত বাজারের ব্যাগে ভরে লতি চিংড়ি নিয়ে আসছে। সমস্যা হচ্ছে, এই লতি চিংড়ি রান্না হবে না। কারণ খানিক বাদেই আপনার সুইসাইডের খবর তাদের কাছে পৌঁছে যাবে, বাড়ি জুড়ে প্রবল মাতম শুরু হবে, রাতে ডাইনিং টেবিলে লতি-চিংড়ির বদলে থাকবে কান্না। কারো সাথে ঝগড়া করে মরতে যাচ্ছেন? একটু থামুন প্লিজ, মোবাইল ফোনটা খুলে দেখুন, সে আপনাকে মেসেজ পাঠিয়েছে, ‘আর কখনোই এমন করব না!’। কী? আফসোস হচ্ছে? লাফটা আর খানিক সময় পরে দেয়া উচিত ছিল? মেসেজটা দেখে? সরি, এখন আর কিচ্ছু করার নেই। সত্যি সত্যি কেউ ভয়াবহ ধরনের প্রতারণা করেছে? পৃথিবীর উপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে? মৃত্যু ছাড়া আর কোন উপায় নেই? এক্সকিউজ মি, আপনি কি জানেন, আপনি এতদিন ভুল মানুষটিকে বিশ্বাস করেছিলেন, পৃথিবীর গভীরতম বিশ্বাস নিয়ে অন্য কেউ অপেক্ষায় আছে। সেই মানুষটির সাথে আপনার দেখা হতে পারতো, আপনার ভুল ধারণাগুলো ভেঙে যেতে পারতো। কিন্তু, তার দেখা পেতে হলে তো আপনাকে বাঁচতে হতো। না বুঝে শুনে লাফ তো দিলেন। এখন আফসোস করে কী লাভ? জীবনে কিছুই করতে পারেননি? কিছুই না? ভালো গান গাইতে পারেননি, ভালো ছাত্র হতে পারেননি, পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পাননি, ভালো চাকুরি পাননি, কাজের অফার পাননি, আরও কত কত কত কিছু পাননি… ওকে, তাহলে বেঁচে থেকে আর লাভ কী? লাফ দিয়েছেন ভালো করেছেন, মরেন। মরে চিৎপটাং হয়ে থাকুন। জগতের একটা জঞ্জাল কমুক! কী? কষ্ট পেলেন? আপনি মরে যাচ্ছেন, কই, দুটো ভালো কথা বলব, কষ্টের কথা বলব, তা না বলে কীসব যা তা বলছি! ওকে, তাহলে চিৎপটাং হয়ে পরে যাওয়ার আগে আরেকটি কথা বলে নেই… রবিন উইলিয়ামসের নাম শুনেছেন? এই তো কয়েকদিন আগে মারা গিয়েছেন। ভদ্রলোক হলিউডের অভিনেতা, ছোটখাট অভিনেতা না। অস্কার পাওয়া অভিনেতা। বলা হয় পৃথিবীর সর্বকালের সেরা কমেডি অভিনেতাদের মধ্যে একজন তিনি। উনার খ্যতি ছিল, অর্থ ছিল, সুন্দরী স্ত্রী ছিল, সম্মান ছিল। কী কী থাকা সম্ভব একজন মানুষের? তার সবই ছিল। মানুষটার বয়স কত হয়েছিল আপনি জানেন? ৬৩ বছর! মানুষটা সুইসাইড করেছেন! সুইসাইড করে মারা গিয়েছেন। আচ্ছা, আপনিও সুইসাইড করছেন, রবিন উইলিয়ামসও সুইসাইড করল, তাহলে? হিসেবটা কেমন গোলমাল হয়ে গেল না? আপনি না পাওয়ার জন্য সুইসাইড করছেন? তাহলে তিনি? তিনি কেন করলেন? – ডিপ্রেশনে? – ওহ, নাউ গট দ্যা পয়েন্ট। আচ্ছা, ডিপ্রেশনটা কী? আপনি কি জানেন, ডিপ্রেশনটা কী? – যা চাই, তা না পাওয়া… – উহু, যা চাই, তা না পাওয়াটা ডিপ্রেশন না, ডিপ্রেশন হল স্বপ্নহীনতা। তারাই সুইসাইড করে, যাদের স্বপ্নগুলো আর বেঁচে থাকে না। তা সে যতই পাক, কিংবা না পাক। স্বপ্নহীন মানুষরাই সুইসাইড করে। বেঁচে থাকে স্বপ্নবাজরা। বিশ্বাস হল না? কেন? এই যে পড়ছেন, আর মাত্র কয়েক তলা পরেই মাটিতে আছড়ে পড়বেন। মাথার মগজগুলো ছিটকে পড়বে। রক্তে ভেসে যাবে ছিন্ন ভিন্ন মাংস পিণ্ড, কিন্তু উপরের কথাগুলো শুনে এখন বাঁচতে ইচ্ছে করছে না? করছে? কেন করছে জানেন? কারণ, এতক্ষণে একটু একটু করে স্বপ্নরা ফিরে আসছে বুকের ভেতর, একটু একটু করে স্বপ্নরা ফিরে আসছে; কিন্তু বড্ড দেরি করে ফেলেছেন মশাই। লাফটা দেবার আগে আরও খানিক ভাবা দরকার ছিল। আরও একটুখানি। এতো অল্পতেই স্বপ্ন বেচে দিলে হবে? হবে না রে পাগলা। এতো অল্পতেই স্বপ্ন বেচে দিলে হবে না। প্রতুল মুখার্জির নাম শুনেছেন? শোনেননি? উনার একটা গান আছে, গানটা শুনবেন- ‘আলু বেচো, ছোলা বেচো, বেচো বাকড়খানি, বেচো না, বেচো না বন্ধু, তোমার চোখের মণি… ঝিঙে বেচো পাঁচ সিকে তে, হাজার টাকায় সোনা, বন্ধু তোমার লাল টুকটুকে স্বপ্ন বেচো না…’ আর সব কিছু বেচে দিন, শুধু এই স্বপ্নটা না। শুধু এই লাল টুকটুকে স্বপ্নগুলো না।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ