শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

হ্যাঁ, এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসের প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। কুরআনে কারীমে শহীদগণকে জিন্দা বলা হয়েছে। আর উক্ত আয়াতের ইশারাতুন নছ তথা ইবারতের ইঙ্গীতবহ হালাত দ্বারা নবীগণও কবরে জিন্দা থাকা প্রমাণিত হয়ে যায়। কারণ শহীদগণ এ মর্যাদা লাভ করেছেন নবীদের বদৌলতে। সুতরাং শহীদগণ যদি এমন মর্যাদাই অধিষ্ঠিত হয়ে যান, তাহলে নবীগণতো অবশ্যই সে মর্যাদায় আরো উন্নতভাবেই অধিষ্ঠিত হবেন। যেমন কুরআনে কারীমের আয়াতের মাঝে পিতা-মাতাকে উফ বলতে নিষেধ করা হয়েছে। উক্ত আয়াতের ইশারাতুন নছ দ্বারা পিতা মাতা কষ্ট পায় সে সকল কাজই করা নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। অথচ কুরআনের আয়াতে বলা হয়েছে শুধু উফ বলতে। তেমনি শহীদের জিন্দা থাকার আয়াতের ইশারাতুন নছ দ্বারা নবীদের কবরে জিন্দা হবার বিষয়টি প্রমাণিত হয়ে যায়। আর হাদীসে এ বিষয়টি পরিস্কার ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। যেমন- হাদীসে ইরশাদ হচ্ছে- হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- 3425 – حَدَّثَنَا أَبُو الْجَهْمِ الْأَزْرَقُ بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَبِي بُكَيْرٍ، حَدَّثَنَا الْمُسْتَلِمُ بْنُ سَعِيدٍ، عَنِ الْحَجَّاجِ، عَنْ ثَابِتٍ الْبُنَانِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّونَ [حكم حسين سليم أسد] : إسناده صحيح হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, নবীগণ তাদের কবরে জীবিত। তারা সেখানে নামায পড়েন। মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৩৪২৫} মুহাদ্দিসীনদের ঐক্যমত্বে এ হাদীসটি সহীহ। তারপরও মুহাদ্দিসীনে কেরামের কিছু বক্তব্য উদ্ধৃত করে দিচ্ছি আরো অন্যান্য সূত্রে বর্ণিত উক্ত হাদীসটির বিষয়ে। ১ আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেন আবী ইয়ালার বর্ণীত হাদীসের সনদটির রাবীগণ সিকা। {মাযমাউজ যাওয়ায়েদ-৮/২১৪} ২ আল্লামা সূয়ুতী রহঃ বলেন, হাদীসটি হাসান। {আলজামেউস সাগীর, বর্ণনা নং-৩০৮৯} ৩ শায়েখ আলবানী রহঃ বলেন, হাদীসটি সহীহ। {সহীহুল জামে, বর্ণনা নং-২৭৯০} ৪ তিনি আরো বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। {আততাওয়াসসুল, বর্ণনা নং-৫৯} এছাড়া তিনি আরো যেসব কিতাবে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন- সিলসিলাতুস সহীহাহ, বর্ণনা নং-৬২১ আহকামুল জানায়েজ, বর্ণনা নং-২৭২ ৫ আল্লামা শাওকানী রহঃ বলেন, এ হাদীস সাবিত তথা প্রমাণিত। {নাইলুল আওতার-৩/৩০৫} উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা একথা দিবালোকের ন্যায় পরিস্কার হয়ে গেল যে, নবীগণ কবরে জীবিত এবং তারা সেখানে নামায আদায় করছেন মর্মে হাদীসটি সন্দেহাতীতভাবে সহীহ। হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত আরো একটি পরিস্কার হাদীসও এর প্রমাণবাহী। عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” أَتَيْتُ – وَفِي رِوَايَةِ هَدَّابٍ: مَرَرْتُ – عَلَى مُوسَى لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عِنْدَ الْكَثِيبِ الْأَحْمَرِ، وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ “ হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আমি মেরাজের রাতে কাসীবে আহমার স্থান অতিক্রমকালে দেখতে পাই হযরত মুসা আঃ তার কবরে নামায পড়ছেন। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৩৭৫} আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহঃ “ইনবাউল আজকিয়া বিহায়াতিল আম্বিয়া” নামে হায়াতুন নবী সাঃ এর উপর একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন। শুধু তাই নয়, হযরত ইমাম বায়হাকী রহঃ “হায়াতুল আম্বিয়া বা’দা ওয়াফাতিহিম” নামে স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন। যেখানে তারা পরিস্কার ভাষায় হায়াতুল আম্বিয়া প্রমাণ করেছেন। আরো যেসব ব্যক্তিত্বগণ নবীগণ কবরে জীবিত হবার বিষয়টি তাতের গ্রন্থে এনেছেন- ১ ইমাম বায়হাকী রহঃ {হায়াতুল আম্বিয়া-৭৭} ২ জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহঃ {আলহাওয়ী লিলফাতাওয়া-২/১৩৯} ৩ ইমাম কুরতুবী রহঃ {আলমুফহিম লিমা আশকালা মিন তালখীসি কিতাবি মুসলিম-৬/১৯২} ৪ আব্দুল আজীজ বিন বাজ, আব্দুল্লাহ গাদয়ান, সালেহ আলফাউজান, বকর আবু জায়েদ। {লাজনাতুত দায়িমা, আলমাজমুআতুস সানিয়া-১/১৭৫} ৫ আল্লামা সাখাবী রহঃ {আলকাউলুল বাদী-১২৫} ৬ শরহে রিয়াজুল সালেহীন লিআল্লামা মুহাম্মদ বিন আলান আশশাফেয়ী আলআশআরী-৪/১৯২ ৭ মাজাহিরে হক-১/২৪৫ ৮ রশীদ আহমাদ গঙ্গুহী রহঃ। ফাতাওয়া রশীদিয়া-১/১০০। ৯ মোল্লা আলী কারী রহঃ {শরহে শিফা-২/১৪২} মিরকাতুল মাফাতীহ-২/২০৯} ১০ আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহঃ {ফাতোয়া শামী-৩/৩৬৬, রাসায়েলে ইবনে আবেদীন২/২০৩} ১১ আল্লামা আইনী রহঃ ও বলেন নবীগণ কবরে জীবিত। দেখুন {উমদাতুল কারী শরহে বুখারী-৭/৬০০} ১২ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ {ফাতহুল বারী-৭/২২, ৪/ ১৩ আল্লামা শাউকানী- নাইলুল আওতার-৩/২১০-২১১} ১৪ শায়েখ আব্দুল ওয়াহহাব নজদী- {রিসালাযে শায়েখ নজদী-৪১৫} ১৫ কথিত আহলে হাদীস ওয়াহীদুজ্জামান হায়দ্রাবাদী-লুগাতুল কুরআন-৪০, ৫ নং টিকা। ১৬ কথিত আহলে হাদীস মাওলানা নজীর হুসাইন দেহলবী-ফাতাওয়া নজীরিয়া-২/৫৫ সহ আরো অনেক গ্রন্থেই নবীগণ কবরে জীবিত অবস্থায় নামায পড়ার বিষয়টি উদ্ধৃত হয়েছে। যা পরিস্কার প্রমাণ করে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সর্বসম্মত ঐক্যমত্বের বিষয় হল নবীগণ কবরে জীবিত আছেন। সুতরাং আমাদের নবী সাঃ হায়াতুন্নবী।

তুমি (রাসুল) তো মরনশীল এবং তারাও (অন্য মানুষ) মরণশীল [সুরা যুমার - ৩০] ভুপৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবই নশ্বর (মরণশীল) [সুরা আর রাহমান - ২৬] - আমি তোমার পুর্বেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি (পরেও করিনি)। অর্থাৎ তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চীরজীবি থাকবে? [সুরা আম্বিয়া- ৩৪] ইতিহাস থেকে জানি তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন ,তাই অবশ্যই তিনি মৃত, দুনিয়ার তীবনে তিনি বেঁচে নেই।  “মুহাম্মদ একজন রসূল ছাড়া আর কিছুই ছিলেন না। তাঁর আগেও অনেক রসূল গত হয়েছেন। এখন যদি তিনি মারা যান অথবা নিহত হন তাহলে কি তোমরা [তোমাদের দীন থেকে] পেছনে ফিরে যাবে? আর যে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে সে আল্লাহর কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। আর আল্লাহ শোকরকারীদের পুরস্কৃত করবেন।”(আল-কুরআন, ৩:১৪৪) অর্থাৎ রসূল(সাঃ) এর ওফাত হয়েছে। তিনি আমাদের মাঝে কোনোভাবেই ,কোনো রূপেই উপস্থিত নেই। তবে কবরের জীবনে তিনি জীবিত এবং সেখান থেকে  তিনি সালাম গ্রহণ করতে পারেন । এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই।  “নবীগণ মহান আল্লাহর নিকট জীবিত, যদিও তারা দুনিয়াবাসীদের দিক দিয়ে মৃতের রূপে আছেন, কার-, প্রমাণিত আছে যে, শহীদগণ আল্লাহর নিকট জীবিত; আর নবীগণ নিঃসন্দেহে শহীদগণের চেয়ে অধিক মর্যাদাবান।” (ফাতহুল বারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৪৪৪ পৃষ্ঠা) হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- 3425 – حَدَّثَنَا أَبُو الْجَهْمِ الْأَزْرَقُ بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَبِي بُكَيْرٍ، حَدَّثَنَا الْمُسْتَلِمُ بْنُ سَعِيدٍ، عَنِ الْحَجَّاجِ، عَنْ ثَابِتٍ الْبُنَانِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّونَ [حكم حسين سليم أسد] : إسناده صحيح হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, নবীগণ তাদের কবরে জীবিত। তারা সেখানে নামায পড়েন। মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৩৪২৫} সুতারাং নবীগণ কবরে সশরীরে জীবিত সুতরাং একদিকে যেমনিভাবে নবীগণের ইন্তিকাল বা ওফাতের ওপর ঈমান রাখা অপরিহার্য, তেমনি এর সাথে সাথে এ ঈমান পোষণ করাও কর্তব্য যে, নবীগণ বরযাখী জগতে বা কবরে সশরীরে জীবিত আছেন এবং তাঁরা তাঁদের সেই বারযাখী জীবনে জীবিত মানুষের ন্যায় বিশেষ বৈশিষ্ট্য লাভ করছেন-যা অপর সাধারণ মৃত ব্যক্তির নেই। এবার মোর্দা কথা হলো হজরত মুহাম্মদ সঃ দুনিয়ার জীবনে জীবিত নেই এবং কবরের জীবনে স্বশরীরে জীবিত। অনেকের এই ধারণা তিনি দুনিয়ার জীবনে ও জীবিত। মিলাদ মাহফিলে তিনি স্বশরীরে আগমন করেন, এটি ভুল ধারণা। আর কবরে জীবনে জীবিত যদি হয় হায়াতিন্নবী, তাহলে তিনি হায়াতুন্নবী। এ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই।