শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

১৯৭৬ সালে একুশে পদক, ১৯৮৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী বাংলাদেশের এই অন্যতম বিজ্ঞানীর জন্ম ১৯০০ সালের ১ ডিসেম্বর। তিনি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের মাড়গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেন। তার শিক্ষাজীবনের শুরু এমই স্কুলে। পরে কলকাতা উডবার্ন ও কলকাতা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন তিনি। সেখান থেকেই ১৯১৮ সালে মেট্রিক পাশ করেন। পরে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়া অবস্থায় রসায়নের নানা দিক নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯২৫ সালে রসায়নে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এমএসসি পাশ করেন। যার পুরস্কারস্বরুপ স্বর্ণপদকও পান তিনি। এরপর আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরির আবেদন করার পর তাতে নিয়োগ পেলেও একই সময় বৃত্তি পেয়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেখানে তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রায় সারাদিন ধরে গবেষণার কাজে মুগ্ধ হয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উইলিয়াম হেনরী পার্কিন জুনিয়র তাকে অক্সফোর্ডের ল্যাবরেটরিতে গবেষণা চালানো ও উচ্চ বেতনের প্রস্তাব করেন। কিন্তু দেশ সেবার প্রয়োজনে তিনি দেশে ফিরে যান। যদিও দেশে ফেরার ঠিক আগ মুহুর্তে তিনি লন্ডন ইম্পিরিয়াল কলেজ অবসায়েন্স এন্ড টেকনোলজি থেকে ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৩১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজের শিক্ষক হিসেবেই শুরু হয় তার কর্মজীবনের। ১৯৩৬ সালে এ কলেজের বিভাগীয় প্রধান, ১৯৪২ এ ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ও ১৯৪৬ সালে আবার প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তিনি চলে আসেন পূর্ব পাকিস্তানে এবং জনশিক্ষা পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তিনি পাকিস্তান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োজিত হন। ১৯৫২-১৯৫৫ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগারসমূহের পরিচালক ছিলেন। বাংলাদেশে স্বাধীনতা লাভের পরে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য যে শিক্ষাকমিশন গঠন করা হয় এবং তাকে এর সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষাকমিশন রিপোর্ট প্রণীত হয়। বলা হয়ে থাকে এই শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট যদি পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন করা যেত তাহলে হয়তো বর্তমান শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজমান অনেক সমস্যাই দূর করা যেত। ড. কুদরাত ই খুদার গবেষণা মূল ক্ষেত্র ছিল জৈব রসায়ন। তিনি পাট, কয়লা, লবণ ও বিভিন্ন ভেষজ ওষুধ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি চিকিৎসা কাজে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন দেশীয় ভেষজ গাছ, লতা-পাতার নির্জাস বৈজ্ঞানিকভাবে সংগ্রহ করতেন। সহকর্মীদের সঙ্গে তার ১৮টি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পেটেন্ট রয়েছে। পাট কাঠি থেকে উদ্ভাবিত পারটেক্সকে তার সেরা আবিষ্কারগুলোর একটি ধরা হয়। এছাড়া পাটকাঠি থেকে কাগজ এবং রস ও গুড় থেকে মল্ট ভিনেগার আবিষ্কার উল্লেখযোগ্য। দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন বিখ্যাত গবেষণামূলক পত্রিকায় তার রচিত প্রায় ১০২টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ