শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

নামকরণ  সূরাটির দ্বিতীয় আয়াতের (. . . ) অংশ থেকে এর নাম গৃহীত হয়েছে । অর্থাৎ এটি সেই সূরা যার মধ্যে ‘আল হাশর’শব্দের উল্লেখ আছে । নাযিল হওয়ার সময়-কাল  বুখারী ও মুসলিম হাদীস গ্রন্থদ্বয়ে সা’ঈদ ইবনে জুবাইর থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে সূরা হাশর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ সূরা আনফাল যেমন বদর যুদ্ধ সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল তেমনি সূরা হাশর বনী নযীর যুদ্ধ সম্পর্কে নাযিল হয়েছে । হযরত সা’ঈদ ইবনে যুবাইরের দ্বিতীয় বর্ণনায় ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বক্তব্য এরূপ(. . . ) অর্থাৎএরূপ বলো যে, এটা সূরা নাযীর । মুজাহিদ, কাতাদা, যুহরী, ইবনে যায়েদ , ইয়াযীদ ইবনে রূমান, মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক এবং অন্যদের থেকেও একথাটিও বর্ণিত হয়েছে । তাদের সবার ঐকমত্যভিত্তিক বর্ণনা হলো, এ সূরাতে যেসব আহলে কিতাবের বহিষ্কারের উল্লেখ আছে তারা বনী নযীর গোত্রেরই লোক । ইয়াযীদ ইবনে রূমান, মুজাহিদ এবং মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাকের বক্তব্য হলো, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গোটা সূরাটিই বনী নাযীর যুদ্ধ সম্পর্কে নাযিল হয়েছে । এখন প্রশ্ন হলো, এ যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়েছিল? এ সম্পর্কে ইমাম যুহরী উরওয়া ইবনে যুবায়েরের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্না করেছেন যে, এ যুদ্ধ বদর যুদ্ধের ছয় মাস পরে সংঘটিত হয়েছিল । কিন্তু ইবনে সা’দ, ইবনে হিশাম এবং বালাযুরী একে হিজরী চতুর্থ সনের রবিউল আউয়াল মাসের ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন । আর এটিই সঠিক মত । কারণ সমস্ত বর্ণনা এ বিষয়ে একমত যে, এ যুদ্ধ ‘বি’রে মা’উনা’র দুঃখজনক ঘটনার পরে সংঘঠিত হয়েছিল । এ বিষয়টিও ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, ‘বি’রে মা’উনা’র মর্মান্তিক ঘটনা ওহুদ যুদ্ধের পরে ঘটেছিল- আগে নয় । ঐতিহাসিক পটভূমি  এ সূরার বিষয়বস্তু ভালভাবে বুঝতে হলে মদীনা ও হিজাযের ইহুদীদের ইতিহাসের প্রতি একবার দৃষ্টিপাত করা প্রয়োজন । তা নাহলে নবী (সা) তাদের বিভিন্ন গোত্রের সাথে যে আচরণ করেছিলেন তার প্রকৃত কারণসমূহ কি ছিল কেউ তা সঠিকভাবে জানতে পারবে না । আরবের ইহুদীদের নির্ভরযোগ্য কোন ইতিহাস দুনিয়ায় নেই । তারা নিজেরাও পুস্তক বা শিলালিপি, আকারে এমন কোন লিখিত বিষয় রেখে যায়নি যা তাদের অতীত ইতিহাসের ওপর আলোকপাত করতে পারে । তাছাড়া আরবের বাইরের ইহুদী ঐতিহাসিক কিংবা লেখকগণও তাদের কোন উল্লেখ করেননি । এর কারণ হিসেবে বলা হয়, আরব উপদ্বীপে এসে তারা তাদের স্বজাতির অন্য সব জাতি -গোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল । তাই দুনিয়ার ইহুদীরা তাদেরকে স্বজাতীয় লোক বলে মনেই করতো না । কারণ তারা ইহুদী সভ্যতা-সংস্কৃতি , ভাষা এমনকি নাম পর্যন্ত পরিত্যাগ করে আরবী ভাবধারা গ্রহণ করেছিল । হিজাযের প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনাদির মধ্যে যেসব শিলালিপি পাওয়া গিয়েছে তাতে খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীর পূর্বে ইহুদীদের কোন নাম নিশানা বা উল্লেখ পাওয়া যায় না । এতে শুধুমাত্র কয়েকজন ইহুদীর নাম পাওয়া যায় । এ কারণে আরব ইহুদীদের ইতিহাসের বেশীর ভাগ আরবদের মধ্যে প্রচলিত মৌখিক বর্ণনার ওপরে নির্ভরশীল । এরও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইহুদীদের নিজেদেরই প্রচারিত । হিজাযের ইহুদীরা দাবী করতো যে, তারা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের জীবনকালের শেষদিকে সর্বপ্রথম এখানে এসে বসতি স্থাপন করে । এই কাহিনী বর্ণনা করে তারা বলতো , হযরত মূসা (আ) আমালেকাদের বহিস্কারের উদ্দেশ্যে তাঁর একটি সেনাদলকে ইয়াসরিব অঞ্চল দিয়ে পাঠিয়েছিলেন । তিনি তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, ঐ জাতির কোন ব্যক্তিকেই যেন জীবিত রাখা না হয় । বনী ইসরাঈলদের এই সেনাদল নবীর নির্দেশ মোতাবেক কাজ করল । তবে, আমালেকাদের বাদশার একটি সুদর্শন যুবক ছেলে ছিল । তারা তাকে হত্যা করল না । বরং সাথে নিয়ে ফিলিস্তিনে ফিরে গেল । এর পূর্বেই হযরত মূসা (আ) ইনতিকাল করেছিলেন । তাঁর স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তিবর্গ এতে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করলেন । তারা বললেনঃ একজন আমালেকীকেও জীবিত রাখা নবীর নির্দেশ এবং মূসার শরীয়াতের বিধি-বিধানের স্পষ্ট লংঘন । তাই তারা উক্ত সেনাদলকে তাদের জামায়াত থেকে বহিষ্কার করে । বাধ্য হয়ে দলটিকে ইয়াসরিবে ফিরে এসে এখানেই বসবাস করতে হয় । (কিতাবুল আগানী, ১৯তম খণ্ড , পৃষ্ঠা-৯৪ ) এভাবে ইহুদীরা যেন দাবী করছিল যে, খৃষ্টাপূর্ব ১২শ’বছর পূর্বে থেকেই তারা এখানে বসবাস করে আসছে । কিন্তু বাস্তবে এর পেছনে কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই । সম্ভবত এ কাহীনি তারা এ জন্য গড়ে নিয়েছিল যাতে আরবের অধিবাসীদের কাছে তারা নিজেদের সুপ্রাচীন ও অভিজাত হওয়া প্রমাণ করতে পারে । ইহুদীদের নিজেদের বর্ণনা অনুসারে খৃস্টপূর্ব ৫৮৭ সনে বাস্তুভিটা ত্যাগ করে আরেকবার এদেশে তাদের আগমন ঘটেছিল । এই সময় বাবেলের বাদশাহ ‘বখতে নাসসার’ বায়তুল মাকদাস ধ্বংস করে ইহুদীদেরকে সারা পৃথিবীতে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল । আরবের ইহুদীরা বলতো, সেই সময় আমাদের কিছু সংখ্যক গোত্র এসে ওয়াদিউল কুরা, তায়মা, এবং ইয়াসরিবে বসতি স্থাপন করেছিল । (ফুতূহুল বুলদান, আল বালাযুরী) কিন্তু এর পেছনেও কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই । অসম্ভব নয় যে, এর মাধ্যমেও তারা তাদের প্রাচীনত্ব প্রমাণ করতে চায় ।

সূরাটির দ্বিতীয় আয়াতের (. . . ) অংশ থেকে এর নাম গৃহীত হয়েছে । অর্থাৎ এটি সেই সূরা যার মধ্যে ‘আল হাশর’শব্দের উল্লেখ আছে । নামকরণ নাযিল হওয়ার সময়-কাল বুখারী ও মুসলিম হাদীস গ্রন্থদ্বয়ে সা’ঈদ ইবনে জুবাইর থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে সূরা হাশর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ সূরা আনফাল যেমন বদর যুদ্ধ সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল তেমনি সূরা হাশর বনী নযীর যুদ্ধ সম্পর্কে নাযিল হয়েছে । হযরত সা’ঈদ ইবনে যুবাইরের দ্বিতীয় বর্ণনায় ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বক্তব্য এরূপ(. . . ) অর্থাৎএরূপ বলো যে, এটা সূরা নাযীর । মুজাহিদ, কাতাদা, যুহরী, ইবনে যায়েদ , ইয়াযীদ ইবনে রূমান, মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক এবং অন্যদের থেকেও একথাটিও বর্ণিত হয়েছে । তাদের সবার ঐকমত্যভিত্তিক বর্ণনা হলো, এ সূরাতে যেসব আহলে কিতাবের বহিষ্কারের উল্লেখ আছে তারা বনী নযীর গোত্রেরই লোক । ইয়াযীদ ইবনে রূমান, মুজাহিদ এবং মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাকের বক্তব্য হলো, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গোটা সূরাটিই বনী নাযীর যুদ্ধ সম্পর্কে নাযিল হয়েছে । এখন প্রশ্ন হলো, এ যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়েছিল? এ সম্পর্কে ইমাম যুহরী উরওয়া ইবনে যুবায়েরের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্না করেছেন যে, এ যুদ্ধ বদর যুদ্ধের ছয় মাস পরে সংঘটিত হয়েছিল । কিন্তু ইবনে সা’দ, ইবনে হিশাম এবং বালাযুরী একে হিজরী চতুর্থ সনের রবিউল আউয়াল মাসের ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন । আর এটিই সঠিক মত । কারণ সমস্ত বর্ণনা এ বিষয়ে একমত যে, এ যুদ্ধ ‘বি’রে মা’উনা’র দুঃখজনক ঘটনার পরে সংঘঠিত হয়েছিল । এ বিষয়টিও ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, ‘বি’রে মা’উনা’র মর্মান্তিক ঘটনা ওহুদ যুদ্ধের পরে ঘটেছিল- আগে নয় ।