পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম সভ্যতা হচ্ছে মেসোপটেমিয়া সভ্যতা। মধ্যপ্রাচ্যের ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদী-বিধৌত অতি উর্বর উপত্যকায় এ দুটি নদীর মধ্যবর্তী দোয়াব অঞ্চলের নাম মেসোপটেমিয়া (বর্তমান ইরাক)। এখানে খ্রিস্টপূর্বং ৩৫০০০ এবং ৩০০০ অব্দের মধ্যে এক অতি উন্নত সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছে। এ সভ্যতা অবিমিশ্র কিছু ছিল না। সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয় ও অ্যাসেরীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিরও অপরিমেয় অবদান রয়েছে এর সামগ্রিক বিকাশ ও পরিপুষ্টি সাধনে। মেসোপটেমিয়ার বসতি স্থাপনকারী আদি অধিবাসীদের প্রধান খাদ্য ছিল গম। খেজুর গাঝকে তারা অভিহিত করত ‘জীবনদায়িনী বৃক্ষ’ বলে। খেজুর থেকে তারা তৈরি করত ময়দা ও মধু। প্রথমদিকে জলাভূমির আগাছা দিয়ে তৈরি করা হতো কুঁড়ে ঘর। পরে এ কাজে ব্যবহার করা হতে থাকে এঁটেল মাটির ইট। এ সভ্যতার শুরুতে যেমন খাল খনন, বাঁধ নির্মাণ, পানি সেচ ও পানি সঞ্চয়সহ সুবিন্যাস্ত পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার প্রসার ঘটে, তেমনি জমিকর্ষণ কাজে কোদালের ব্যবহার শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে ব্যবস্থার প্রসার ঘটে, তেমনি জমিকর্ষণ কাজে কোদালের ব্যবহার শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে এ সভ্যতা ছিল কৃষি ও পশুচারণভিত্তিক। শহর এলাকায় বসবাস করত কারিগরি শ্রেণীর লোকজন। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দের মধ্যে তারা তামা, সোনা, ব্রোঞ্জ ও পরে লোহার ব্যবহার আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়। ফলে কৃষিকাজ ও হস্তশিল্পে ব্যাপক বিকাশ ঘটে। গড়ে ওঠে দাস, স্বাধীন চাষী, কারিগরি ও ধনী দাসমালিকদের সমবায়ে ছোট-বড় বহু নগর ও রাষ্ট্র। খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে মিশরে হায়ারোগ্লিফিক বা চিত্রলিপি নামে এক উন্নত লিখন পদ্ধতির উদ্ভব হয়। শর বা নলখাগড়া জাতীয় গাছের মজ্জা থেকে তৈরি প্যাপিরাস নামের এক ধরনের কাগজের উপরে তারা লেখার কাজ সম্পন্ন করত। ফসলের পরিমান নিরূপণ করতে গিয়ে প্রাচীন মিশরে জন্ম হয় গণিত শাস্ত্রের। খাল খনন, ভূমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের পরিমাণ, পিরামিডের পাথরের আয়তন ও কোণের পরিমাপ করতে গিয়ে উদ্ভব ঘটে জ্যামিতির। ক্যারেন্ডার তৈরি করার প্রথম কৃতিত্বও তাদের। তারাই প্রথম ৩৬৫ দিনে বছর গণনা শুরু করেন। ফারাওদের মৃতদেহ পঁচনের হাত থেকে রক্ষার জন্য মিশরীয়রা মমি (পিরামিড) তৈরি করে। পিরামিডগুলো আজ অবধি স্বমহিমায় দাড়িয়ে আছে। তাদের সবচেয়ে বড় পিরামিডের নাম হল ফারাও খুফুর পিরামিড। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, মেসোপটেমিয়াই মানবসভ্যতার আদি লীলাভূমি।