আমাদের দেশে যে জলপাই পাওয়া যায় সেটা জলপাই, অলিভ নয়। সেটা দিয়ে টক, আচার ইত্যাদি বানানো সম্ভব কিন্তু তার থেকে তেল পাওয়া যায় না। জলপাই এর বিজ্ঞানসম্মত নাম এলেওকার্পাস সেরাটাস, এবং এটি গোটা উপমহাদেশে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। তামিলে ভেরাক্কাই (ক্কাই মানে ফল, অর্থাৎ ভেরা গাছের ফল) সিংহলিতে ভেরালু, মালায়লমে কারা, মণিপুরিতে চোরফোন, অসমীয়াতে জলফাই ও বাঙলায় জলপাই। ইংরেজিতে এটিকে স্যেলন অলিভ (Ceylon Olive) বলে। এবং সম্ভবত এই নাম ও অলিভ সদৃশ আকারই জলপাই- অলিভ বিভ্রান্তির কারণ। এবার আসি অলিভ থেকে অলিভ অয়েল বের করার কথায়। অলিভ এর প্রত্যেকটা কোষ একটা করে ক্ষুদ্র তৈলাধার। অর্থাৎ অলিভ অয়েল বের করার সময় ওই প্রতিটি কোষপ্রাচীর ভেঙ্গে তেলটুকু বের করে আনতে হয়। অলিভ পিষে তেল বের করা হয়, কিন্তু তাতে খেয়াল রাখতে হয় ফল এর অন্যান্য অংশ তাতে মিশে না যায়। মিশে গেলে তেল এর গুণমান খারাপ হয়ে যায়। অলিভকে প্রথমে খানিকটা পিষে নিয়ে দুটি ভারি পাথরের মাঝে রেখে দেওয়া হয়। যাঁতার মতো ভাবুন আর কি। তখন ওই প্রতিটি কোষে যে ক্ষুদ্র তৈলবিন্দুগুলি আছে সেগুলি জুড়ে একটা বড়সড় তেল এর ফোঁটা তৈরি করে এবং বাইরে বেরিয়ে আসে। সাধারণত থেকে তেল বের করতে গেলে সময় লাগে ৩০ - ৪০ মিনিট, কিন্তু বেশী সময় ধরে রেখে দিলে অলিভের মধ্যে থাকা অলিভ উৎসেচক তেলকে জারিত করে ফেলে। তখনও আবার সেই তেল এর মান কমে যায়। অলিভ এর তেল মোটামুটি কতটা জারিত হয়েছে তার উপরে নির্ভর করে অলিভ তেলকে কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়। যথা এক্সট্রা ভার্জিন, ভার্জিন, রিফাইন্ড, পোমেস, ল্যাম্পনেড। এদের মধ্যে প্রথম ৩ রকম তেল খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যায়। পোমেস তেল গায়ে মাখার কাজে (কখনো কখনো খাদ্য হিসেবেও) ও ল্যাম্পনেড আলো জ্বালানোর কাজে ব্যবহৃত হতো (এখন আর হয় না)। অলিভ থেকে তেল বের করার জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হল ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সেটাও অলিভ গাছ থেকে তুলে আনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করতে হয়। যত তাড়াতাড়ি করা যাবে ততই ভালো। তাপমাত্রার এই কড়াকড়ির জন্য ভারতে খুব অল্প কিছু জায়গা ব্যতীত অলিভ চাষ ও তেল নিষ্কাশন সম্ভবই নয়। সেই একই কারণে কাঁচা জলপাই আমদানি করে ভারতে তেল নিষ্কাশনও সম্ভব নয়। মোদ্দা কথা, না, জলপাই থেকে অলিভ অয়েল হয় না, জলপাই তেল হতে পারে। ভূমধ্যসাগরীয় অলিভ থেকেই অলিভ তেল হয়। পুনশ্চ ১। ভারতীয় বা বাঙালি খাদ্যাভ্যাসে (ভাজাভুজি, ঝোল, ঝাল, অম্বল) অলিভ অয়েল এর ব্যবহার অপ্রয়োজনীয় ও কখনো কখনো ক্ষতিকারক। অলিভ অয়েল মূলতঃ সালাদ ইত্যাদিতে ড্রেসিং এর কাজে ব্যবহার করা উচিৎ, তাতে তেল এর খাদ্যগুণ বজায় থাকে। দাম এর দিক থেকেও অলিভ অয়েল ভারতে সহজলভ্য তেলগুলির তুলনায় ৪-৫ গুণ বেশী দামী। তাই ভারতে যে সব তেল পাওয়া যায়, যেমন সরষে, তিল সেগুলিই খাবারে ব্যবহার করা যুক্তিযুক্ত।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ