শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে কিনা সেটার প্রমাণের পিছনে সবাই ছুটে। কিন্তু স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই এই কথাটা যৌক্তিক কিনা সেটা কেউ দেখে না। আচ্ছা এবার আসল কথায় আসি, আমরা যৌক্তিকভাবে স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে প্রমাণ কর‍তে পারি না, আবার যৌক্তিকভাবে এটাও প্রমাণ করতে পারি না যে স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই। তো এখন কি? যৌক্তিক ব্যক্তি হিসাবে অজ্ঞেয়বাদী হয়ে থাকতে হবে? আচ্ছা এবার উনো রিভার্স কার্ড দিই। স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করার জন্য স্বয়ং স্রষ্টাই অনেক নিদর্শন রেখে দিয়েছেন, যা থেকে প্রত্যেক বিবেকবান ব্যক্তি উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। পক্ষান্তরে স্রষ্টায় অবিশ্বাস করার মতো কোনো সলিড যুক্তি নেই। এই ক্ষেত্রে যুক্তি ঘুরিয়ে পেচিয়ে একই। সেটা হলো - স্রষ্টাকে দেখা যায় না, শোনা যায় না, অনুভব করা যায় না। সুতরাং স্রষ্টায় বিশ্বাস আনা স্রেফ অন্ধবিশ্বাস । যদিও এটা খুবই হাস্যকর একটা যুক্তি। একটা উদাহরণ দিই তাহলে। আচ্ছা অক্সিজেন আবিষ্কৃত হয়েছে ১৭৭২ সালে। অক্সিজেনকেও কিন্তু আমরা দেখি না, শুনিও না, ঘ্রাণও নেই। আমরা এখন ল্যাবে পরীক্ষা করে অক্সিজেনের অস্তিত্ব বের করতে পারি, কিন্তু ১৭৭২ সালের আগে? তবে কি এতকাল ধরে অক্সিজেন প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত মানুষ নিশ্বাস নিতো না!? অবশ্যই নিতো। কোনোকিছু প্রমাণিত নয় মানে এই না যে সেটার অস্তিত্ব নেই। তো এবার একটু স্রষ্টা কি কি নিদর্শন দেখিয়েছেন সেটা সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। আমি এখানে কুরআন নিয়ে আলোচনা করছি, কারণ প্রথমত, আমি একজন মুসলিম, দ্বিতীয়ত, কুরআন আব্রাহামিক রিলিজিয়নের সর্বশেষ গ্রন্থ হিসাবে গণ্য। আমি লেটেস্ট জিনিস দিয়ে বিচার করতেই পছন্দ করবো। এখানে আমি মূল কন্সেপ্টকে ৩ ভাগে ভাগ করছি। ১ম ভাগ —বৈপরীত্য বা কন্ট্রাডিকশনঃ কোনো কিছু মানবরচিত মানে সেটাতে ভুল থাকবেই, যত কমই হোক। কিন্তু কুরআন এমন একটা গ্রন্থ যেটাতে বিন্দুমাত্র কন্ট্রাডিকশন নেই, এটা কিন্তু আমার কথা না, যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্মের কম্পারেটিভ রিলিজিয়ন বিশেষজ্ঞরাই এটা দাবি করেছেন। বরং কুরআনের ভুল ধরতে গিয়ে কুরআন পড়া শুরু করে মুসলিম হয়ে গিয়েছে এমন ঘটনাও আছে। আমি এটা দাবি করতেই পারি কুরআনে কোনো কন্ট্রাডিকশন নেই, স্রষ্টার রচিত না হলে এটাতে অবশ্যই সমস্যা থাকতো। ২য় ভাগ —ভাষাগত অলৌকিকতাঃ যারা ইসলামের ইতিহাস পড়েছেন তারা একটা ব্যাপার অবশ্যই খেয়াল করেছেন। সেটা হলো মুহাম্মদ(সা) এর কুরআন তিলাওয়াত শুনেই কাফিররা কাবু হয়ে যেত, ওনার মুখে হাত চেপে ধরে পড়া বন্ধ করাতে চেয়েছে এমনও হয়েছে। কি এমন শক্তি, ক্ষমতা ছিল কুরআনের? এটাই ভাষাগত অলৌকিকতা। সমগ্র আরব তখন সাহিত্যের শীর্ষে ছিল, সেই আরবের বিখ্যাত কবিরাও কুরআনের সাথে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে নি, এখন তো আরো পারে না। আরবি ভাষা জানে এমন কেউ কুরআন পড়লে সে সহজেই বুঝতে পারবে যে এই মাস্টারপিস কোনো মানুষের পক্ষে বানানো সম্ভব না। ৩য় ভাগ — বিজ্ঞানঃ কুরআনের মধ্যে আয়াত আছে মোট ৬৬৬৬ অথবা ৬২৩৬ টি। এর মধ্যে ১০০০ টার বেশি আছে বিজ্ঞান সম্পর্কে। যার ৮০% নির্ভুল প্রমাণ হয়েছে, আর বাকি ২০% প্রমাণ করার মতো যোগ্যতা এখনো বিজ্ঞানের হয় নি। তো এবার আপনিই বলুন, কুরআনের এই ভবিষ্যৎ বাণী যুগে যুগে সত্য প্রমাণিত হয়ে আসছে সেটা কিভাবে? আশা করি বলবেন না যে মুহাম্মদ(সা) টাইম মেশিনে চড়ে এসে এগুলা সব শিখে তারপর কুরআনে যোগ করেছেন! আর যদি বলে থাকেন মুসলিমরা এগুলা যুগে যুগে যোগ করেছে, তাহলে বলতে হয় প্রথমত এটা মুসলিমদের চরিত্র নয়, দ্বিতীয়ত ইতিহাস সাক্ষী আছে। তো কুরআন মানবরচিত হলে অবশ্যই এসব জলন্ত নিদর্শন দেখাতে পারতো না। পরিশেষে যদি ভেবে থাকেন কুরআনকে এতটা গুরুত্ব দিচ্ছি কেন স্রষ্টার অস্তিত্ব বুঝতে, এর উত্তর হলো কুরআনের একটা নাম হলো আল ফুরকান যার অর্থ সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। তো শুরুতে ব্যাপারটা এমন ছিল যে স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষেও কিছু নেই, বিপক্ষেও কিছু নেই। কিন্তু এখন সেটা উল্টে গিয়েছে৷ এবাদে হাদিসের কথা তো এখানে বললামই না, একজন বিবেকবান মানুষের জন্য স্রষ্টায় বিশ্বাস স্থাপনের জন্য এই নিদর্শনগুলোই যথেষ্ট বলে আমি মনে করি। তবে যদি তাও সন্দেহ পোষণ করেন, তবে কুরআনের সেই চিরচারিত চ্যালেঞ্জ আমিও ছুড়ে দিচ্ছি। কুরআনের যেকোনো সূরার যেকোনো একটা আয়াতের সমকক্ষ একটা আয়াত বানিয়ে দেখান, অবশ্য এই চ্যালেঞ্জ আজ পর্যন্ত কেউ গ্রহণ করার সাহস দেখায়নি।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ