শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

আপনি কি একটি নির্দিষ্ট সময় পর প্রয়োজনীয় তারিখ, প্রিয় কোনো গানের কলি ভুলে যান কিংবা কিছু সময় আগে রাখা আপনার ড্রয়ারের চাবিটি তন্ন তন্ন করে খোঁজার পরও চাবির কথা মনে করতে পারেন না? অবাক হওয়ার কিছুই নেই। এমন ধরনের সমস্যায় অনেকেই পড়ে থাকেন যারা কোনোভাবেই মনে করতে পারেন না একটু আগে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা। এটি কেন হয়ে থাকে তা কি কখনও জানার চেষ্টা করেছেন? মনে না থাকার বিষয়টি অনেকটা নির্ভর করে আমাদের নিত্যদিনের খাদ্যাভ্যাসের উপরে। এ সম্পর্কে ক্লিনিক্যাল গবেষক নীল বার্নাড তার “মস্তিষ্কের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য” বইতে বলেন যে, দুর্ভাগ্যবশত আমাদের মস্তিস্ক হল ভঙ্গুর। তিনি স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার জন্য মস্তিষ্কের এই ভঙ্গুর অবস্থাকেই দায়ী করেন। তবে আশার কথা হচ্ছে এই যে, তিনি মস্তিষ্কের এই ভঙ্গুর অবস্থার উন্নয়নের জন্য ৭ প্রকারের খাদ্যের কথা উল্লেখ করেছেন তার বইতে। আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় হয়ত হরেক রকম খাবারের উপস্থিতি থাকে। কিন্তু এগুলোর সঠিক পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আপনি অনেক ক্ষেত্রেই সচেতন থাকেন না। আসুন জেনে নেই এমনই ৭ টি পুষ্টিকর খাদ্যের নাম যা আপনার মস্তিষ্কের ভৌত গঠনে কার্যকরী ভুমিকা রাখে। ১. ব্লুবেরি : ব্লুবেরির বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ অন্যান্য খাদ্য উপাদান আছে যা আপনার মস্তিষ্কের গঠনে নেতৃত্ব দেয় বলে ব্যাখ্যা করেন নীল বার্নাড। সিনসিনাটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় যে, নিয়মিত ব্লুবেরি খেলে মস্তিষ্কের আয়ত্ত করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। পাশাপাশি নারীদের মেধার বিকাশ ঘটাতেও সক্ষম এই ব্লুবেরি এবং স্ট্রবেরি। ২. আঙুর : বিদেশী ফলের মধ্যে জনপ্রিয় একটি ফল হচ্ছে আঙুর। সিনসিনাটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত একই গবেষণায় দেখা যায় যে, আঙুরের রস আয়ত্ত করার ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বল্পক্ষণ স্থায়ী মেমরির মত জটিল সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ভুমিকা রাখে বলেও জানান নীল বার্নাড । তাই তিনি সকালের নাস্তা, বিকেলের হালকা জলখাবার কিংবা সালাদ হিসেবে আঙুর ব্যবহারের কথা বলেন। ৩. মিষ্টি আলু : সবজি হিসেবে অনেকেই মিষ্টি আলু খেয়ে থাকেন। জাপানের ওকিনাওয়াদের খাদ্য তালিকায়ও একে উপরের সারিতে স্থান দেওয়া হয়, যা তাদের বুদ্ধিমান ও দীর্ঘজীবী হতে সহায়ক ভুমিকা রাখে। মাটির নিচে জন্মানো এই সবজি অনেকটা কমলা রঙের হয়ে থাকে, যাতে থাকে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন। এছাড়াও এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সাইড যা আমাদের মস্তিষ্কের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। ৪। কোকো : পুষ্টি বিজ্ঞানী জয় বায়র বলেন, এক কাপ গরম কোকো পাউডার আপনাকে সহজেই চাঙ্গা করে তুলতে পারে পাশাপাশি আপনার মস্তিস্ককে সচল ও কর্মক্ষম রাখতে অনবদ্য ভুমিকা রাখে। কোকো শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সাইড ধারণ করে যা ধমনীকে নমনীয় করার মাধ্যমে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কের জন্য অনেক বেশি উপকারী। ৫. স্যামন মাছ : আপনার মস্তিষ্কের শতকরা ৬০ ভাগই ফ্যাট বা ফ্যাটি এসিড। ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্কে ওমেগা ৩ উৎপন্ন করে যা ডিএইচএ এসিড হিসেবে পরিচিত। স্যামন মাছ হচ্ছে মস্তিষ্কের জন্য জরুরি এই ফ্যাটের অন্যতম উৎস। ডিএইচএ অক্সিডেটিড এবং প্রদাহজনিত ক্ষতি থেকে মস্তিষ্ককে রক্ষা করে। তাছাড়া নিউরনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলোর কার্যক্ষমতা বেড়ে যায় ফলস্বরূপ আপনি হয়ে উঠবেন আরও বুদ্ধিদৃপ্ত। ৬. কাজু বাদাম : নীল বার্নাড বলেন, কাজুবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই যা অ্যান্টি অক্সাইড তৈরিতে ভূমিকা রাখে। তিনি নেদারল্যান্ডে দশ বছর ধরে ৫,৪০০ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের উপর পরিচালিত একটি গবেষণাপত্র থেকে উল্লেখ করেন যে, অ্যালজেইমের ও ডিমনেশিয়াসহ আরও অন্যান্য রোগের ঝুঁকি ২৫% কমে যায় যারা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় কাজু বাদাম রাখেন। প্রতি আউন্স কাজু বাদামে ৭.৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই এবং প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে তাই প্রতিদিন ন্যূনতম এক আউন্স বা এক মুঠো কাজু বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেন নীল। ৭. পালং শাক : যারা নিয়মিত এ জাতীয় শাক খেয়ে থাকেন তারা উন্নত মাংসপেশির অধিকারি হয়ে থাকেন। কিন্তু ব্যারন বলেন, এ জাতীয় সবুজ শাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি থাকে, যা আপনার মস্তিষ্কের সুরক্ষা ও উন্নয়নে অবদান রাখে। তিন বছরব্যাপী নেদারল্যান্ডে পরিচালিত এক গবেষণায় এমনই তথ্য পাওয়া যায়। অতএব, শরীরের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ মস্তিষ্কের সুরক্ষা ও বিকাশের জন্য উপরে বর্ণিত ৭ টি খাদ্য আপানার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ