শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

“অজ্ঞতা থেকে ভীতি তৈরি হয়, ভীতি ঘৃণার সৃষ্টি করে আর ঘৃণা থেকে আসে হিংস্রতা। এটাই নিয়ম।” – ইবনে রুশদ অষ্টম শতক পর্যন্ত আরবে গ্রীক দর্শনকে সন্দেহের চোখে দেখা হতো। দর্শন ধর্মের সাথে সংঘাতপূর্ণ বলেই ভাবা হতো। তবে মুতাজিলা (যারা দর্শনকে ধর্মের সাথে সংঘাতপূর্ণ ভাবতো না) ধর্মতত্ত্বের প্রবর্তনে গ্রীক দর্শন কিছুটা হলেও গ্রহণযোগ্যতা খুঁজে পায়। কিন্তু ইমাম আবু আল হাসান আল আশ’আরী প্রবর্তিত ‘আশ’আরী’ তত্ত্ব নতুন করে দর্শন বিরোধিতা শুরু করে এবং সবধরনের যুক্তি-তর্ক আর প্রশ্ন করার ব্যাপারটিকে তারা ‘অবিশ্বাস’ বলে আখ্যায়িত করতে থাকে। ইবনে রুশদ এমনই এক প্রতিকূল পরিবেশে নিজের দর্শন রচনা করে গেছেন। তিনি অবশ্যই কুরআনকে সত্য গ্রন্থ হিসেবে স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলেছেন যে কুরআনের অনেক কিছুই গভীর অর্থবহ, যা বুঝতে হলে দর্শনের প্রয়োজন। তিনি যে রাজবংশের হয়ে রাজনীতি করেছেন, সে বংশের উদার পৃষ্ঠপোষকতাই তাকে তার দর্শন নিয়ে এগোতে সহায়তা করেছে। তবে ক্রমশ বাড়তে থাকা উদারবাদী দর্শন বিরোধী আন্দোলনের মুখে তাকে নির্বাসিত হতে হয়েছিল। ভাগ্যক্রমে নির্বাসনের পূর্বেই রুশদ তার শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘ডিসিসিভ ট্রিটিজ’ রচনা করে ফেলেছিলেন। “যারা চিন্তা ও গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে।”- সূরা আল ইমরা; আয়াত-১৯১ “অতএব, চক্ষুষ্মানরা শিক্ষা গ্রহণ করো।”- সূরা আল হাশর; আয়াত- ২ ইবনে রুশদ তার ডিসিসিভ ট্রিটিজে দর্শন কেন গুরুত্বপূর্ণ, সে আলোচনা শুরু করেছেন পবিত্র কুরআন থেকে উপরোক্ত দুটি আয়াত দিয়ে। তার মতে, দার্শনিক আর আইনজীবীরা একই পন্থা অবলম্বন করে। আইনজীবীরা নির্দিষ্ট কিছু ধারা পূর্বেই শিখে রাখেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো ব্যবহার করেন। তেমনিভাবে দার্শনিকদের সৃষ্টি ও অন্যান্য আধ্যাত্মিক দর্শন মূলত ধর্ম থেকেই আসে। ধর্মগ্রন্থই মানুষকে চিন্তা করতে বলে এবং সে চিন্তার সীমাও ঠিক করে দেয়। অন্যদিকে জ্ঞানের বিস্তৃতির চিরাচরিত প্রথাই হচ্ছে এই যে, একজন পণ্ডিতের জ্ঞানচর্চা থেকেই তার পরবর্তী প্রজন্ম সত্য মিথ্যার আলোকে, জ্ঞান আহরণ, পরিবর্ধন এবং বর্জন করবে। যদি কারো দর্শন সত্য হয়, তাহলে তার ধর্ম ভিন্ন হলেও সে দর্শন গ্রহণ করা উচিৎ। ঠিক যেমনি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে গেলে যেসব দ্রব্য ব্যবহার করা হয়, তা সর্বদা স্বীয় ধর্মের লোকদের দ্বারা তৈরি না-ও হতে পারে। তাই দর্শন আর ধর্ম কখনোই সাংঘর্ষিক নয়।