শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলা এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। এই অঞ্চলে আগত পর্যটকদের বসবাসরত নাগরিকদের চেয়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। কারণ, ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চলে বসবাসরতদের ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে অন্যদের তুলনায় কিছুটা বেশি প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। ম্যালেরিয়া জ্বর সারাক্ষণ থাকে না। একবার ছেড়ে যায় আরেকবার আসে। সে কারণে শিশুদের ক্ষেত্রে এই জ্বর নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। শিশুর মা অনেক সময় বুঝতে পারেন না, তিনি যে সময় শিশুর কাছে ছিলেন না, সে সময় জ্বর এসেছিল। ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চলে বসবাস করলেও ছয় বছর বয়সী শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে কোনো স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা দৃশ্যমান হয় না। রিদউয়ানুর রহমান অধ্যাপক, মেডিসিন, ম্যালেরিয়া গবেষক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১২ কারো ম্যালেরিয়া জ্বর হয়েছে কিনা কি কি উপসর্গ দেখে বুঝবো ? ম্যালেরিয়া মূলত প্লাজমোডিয়াম, ওভালে অথবা ম্যালেরিয়ার যেকোনো একটি জীবানু বহনকারী মশার দংশন থেকে এ রোগ হয়। ম্যালেরিয়ার লক্ষণ: ম্যালেরিয়ার সাধারণ লক্ষণ হল শীত লাগা এবং কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা। এটা বড়দের মধ্যেই অধিকহারে দেখা যায়। বাচ্চাদের অনেক সময় জ্বরের সঙ্গে পেটের গোলমাল, শ্বাসজনিত অসুবিধা ইত্যাদি দেখা যায়। ছয় মাসথেকে পাঁচ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা ভাবটি লক্ষ্য করা যায় না। এর পরিবর্তে খিটখিটে ভাব, ঝিমুনি, খাওয়ার অনীহা, বমি, মাথাব্যথা, খুব বেশী জ্বর প্রভৃতি দেখা দিয়ে থাকে। পাঁচ বছরের বেশী বয়সীরা ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হলে প্রথমে শীত ও কাঁপুনি অনুভব করে, তারপর জ্বর ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। সেই সঙ্গে প্রচন্ড মাথাব্যথা ও তারপর ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লে রোগী খুব দুর্বল বোধ করে। ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া ভয়াবহ আর জটিল আকার ধারণ করতে পারে শুরু থেকেই। খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট, রক্তস্বল্পতা, প্রস্রাব কমে যাওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, কোমায় আচ্ছন্ন হওয়া ইত্যাদি জটিলতার লক্ষণ। প্রাথমিক বিপদ সংকেত ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে: পানি অথবা খাবারের প্রতি খুব বেশী অনীহা, ঘন ঘন বমি হওয়া, খিঁচুনি ও ঝিমুনিভাব দেখা দিলে বা অজ্ঞান হয়ে পড়লে এবং রোগীর মাঝে অত্যধিক ক্লান্তি দেখা দিলে। রোগ নির্ণয়ের উপায় রক্ত পরীক্ষার মধ্যে ম্যালেরিয়ার জীবাণু খুঁজে বের করা রোগ নির্ণয়ের সর্বেোত্তম উপায়। ম্যালেরিয়া সন্দেহ করলে যে কোন সময়ই রোগীর রক্ত পরীক্ষা করা যাবে। তবে তা অবশ্যই ওষুধ শুরু করার আগে। যদি প্রথম পরীক্ষায় কিছু না পাওয়া যায়, তবে পরপর তিনদিন পরীক্ষা করা উচিত। মাইক্রোস্কোপ ছাড়াও এখন ম্যালেরিয়ার এন্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। এ ধরনের পরীক্ষায় কম সময় লাগে। ২০১৪ সালে ৯৭টি দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, আর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে ৩.৩ বিলিয়ন মানুষ। বিশ্বব্যাপী ম্যালেরিয়া সংক্রমণে মৃত্যুর ৯০ শতাংশই হয়েছে আফ্রিকায়। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু হার ৫৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে সেখানে। গত এক যুগে আক্রান্তের সংখ্যা তিন চতুর্থাংশে নেমে এসেছে। ২০১৩ সালে আজারবাইজান ও শ্রীলঙ্কা ম্যালেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও আর্জেন্টিনা, আর্মেনিয়া, মিশর, ইরাক, কিরগিজিস্তান, মরক্কো ও ওমান ম্যালেরিয়া সংক্রমণের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। বলা হয়ে থাকে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভাল। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে সহজেই ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করা যায়। যেমন:  মশারী ব্যবহার করা এবং ঘরের দেয়ালে কীটনাশক ঔষধ ছিটানো।  বাড়ির আশেপাশে কোন ঝোপ জঙ্গল থাকলে তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।  ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় বেড়াতে যাওয়ার দুই-তিন মাস আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজন হলে ঔষধ খেতে হবে।  সেখান থেকে ফেরার চার সপ্তার পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিষেধক ঔষধ সেবন করতে হবে। কিছু ঔষধ গ্রহণ করে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা করা যায়। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ গ্রহণ করতে হবে। মুখে বা শিরাপথে ঔষধ গ্রহণ, যেমন-ক্লোরোকুইন, কুইনিন সালফেট, হাইড্রোক্সি ক্লোরোকুইন, মেফ্লোকুইন, সালফাডক্সিন এবং পাইরিমেথামাইন এর জন্যে গ্রহন করা যায়। সুত্র : বেশতো.কম