শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

Call

না, চার মাজহাব রাসূল (স:) এর বলে যাওয়া কোন কিছু নয়।

আসুন একটু বিস্তারিত জানি...

একটি হাদিসের মধ্যে রাসূল (স:) বলেছেন যে, ‘আমার পরে তোমাদের মধ্যে যদি কেউ জীবিত থাকে, অচিরেই সে দেখতে পাবে অনেক মতপার্থক্য।’

তাহলে এটা পরিষ্কার যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, একটি সময় আসবে যে সময়ে রাসূলের (সা.) তিরোধানের পর মানুষের মধ্যে অনেক মতপার্থক্য বিরাজ করবে। এ মতপার্থক্য ইসলাম নিয়ে, অন্য বিষয় নিয়ে নয়। ইসলাম নিয়ে, ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধান নিয়ে। ইসলামে যে বিধিবিধান আছে, সেগুলো নিয়ে অনেক মতপার্থক্য বিরাজ করবে।

যখন এই মতপার্থক্য শুরু হলো, সেই মতপার্থক্যের ক্ষেত্রে ওলামায়ে কেরাম দেখেছেন যে, সুন্নাহর বক্তব্যের মধ্যে জাল হাদিস, ভুল হাদিস, মিথ্যা হাদিস, অগ্রহণযোগ্য হাদিস, বিচ্ছিন্ন হাদিসের মধ্যে প্রবেশ করেছে এবং মানুষ সেগুলো গ্রহণ করে নিচ্ছে। ফলে যেটি হয়েছে, ওলামায়ে কেরাম সুন্নাহর ক্ষেত্রে, সুন্নাহর বক্তব্যের ক্ষেত্রে, সুন্নাহর বর্ণনার ক্ষেত্রে এবং সুন্নাহর যে লিখিত বর্ণনা আছে সেগুলোর ক্ষেত্রে আরো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করার জন্য গবেষণার আশ্রয় নিয়েছেন। এই গবেষণার পরবর্তী যে আকার সেটি হচ্ছে মূলত ওলামায়ে কেরামের মতামত, গবেষণার পর তাঁরা একটি মতামত দিয়েছেন আর সেটাকেই বলা হয় মাজহাব। এটা গবেষণারই একটি অংশ এবং গবেষণার পরেই এটা ওলামায়ে কেরামের ব্যক্তিগত মত। এটি কোনো দ্বীন নয় এবং এটা কোনো ইসলামের বিধান নয়।

এটি রাসূল (স:) এর সময় তো ছিলই না, বরং ইমামরাও মাযহাব সৃষ্টি করেননি। ভারতবর্ষের বিখ্যাত হাদীসশাস্ত্রবিদ ও হানাফীদের শিক্ষাগুরু যাকে হানাফীরা ভারতবর্ষের ‘ইমাম বুখারী’ বলে থাকেন সেই শাহ আলিউল্লাহ মুহাদ্দিসদেহেলভী (রহ) বলেছেন "তোমরা জেনে রাখো যে, ৪০০ হিজরীর আগে লোকেরা কোন একটি বিশেষ মাযহাবের উপর জমে ছিল না" (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ; ১৫২ পৃষ্ঠা)। অর্থাৎ ৪০০ হিজরীর আগে নিজেকে হানাফী, শাফেরী বা মালেকী বলে পরিচয় দিতো না। আর চারশো হিজরীর অনেক আগে ইমামরা ইন্তেকাল করেন।

তাহলে এটা পরিষ্কার যে চার মাজহাব রাসূল (স:) এর বলে যাওয়া কোন কিছু নয়।

তথ্যসূত্র:
১. http://www.shodalap.org/faridsworld07/8071
২. http://www.ntvbd.com/religion-and-life/22042/%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A7%80-%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%9C%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%81-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AC-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

এটা বলা মুশকিল যে, সেই ৭৩ ফের্কার অন্তর্গত কিনা? তবে এটা ঠিক, ইমামরা মাযহাব সৃষ্টি করেননি। ভারতবর্ষের বিখ্যাত হাদীসশাস্ত্রবিদ ও হানাফীদের শিক্ষাগুরু যাকে হানাফীরা ভারতবর্ষের ‘ইমাম বুখারী’ বলে থাকেন সেই শাহ আলিউল্লাহ মুহাদ্দিসদেহেলভী (রহ) বলেছেন – ‘ই’লাম আন্না না-সা-কা-নু ক্কারলাল মিআতির রা- বিআতি গাইরা মুজমিয়ীনা আলাত্-তাকলীদিল খা-লিস লিমায় হাবিন্ ওয়া-হিদিন্ বি-আইনিহী’ অর্থাৎ তোমরা জেনে রাখো যে, ৪০০ হিজরীর আগে লোকেরা কোন একটি বিশেষ মাযহাবের উপর জমে ছিল না’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ; ১৫২ পৃষ্ঠা)। অর্থাৎ ৪০০ হিজরীর আগে নিজেকে হানাফী, শাফেরী বা মালেকী বলে পরিচয় দিতো না। আর চারশো হিজরীর অনেক আগে ইমামরা ইন্তেকাল করেন। ইমামদের জন্ম ও মৃত্যুর সময়কালটা একবার জানা যাক তাহলে ব্যাপারটা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে। #ইমামের নাম জন্ম মৃত্যুঃ ১. আবু হানীফা (রহ) ৮০ হিজরী ১৫০ হিজরী ২. ইমাম মালেক (রহ) ৯৩ হিজরী ১৭৯ হিজরী ৩. ইমাম শাকেরী (রহ) ১৫০ হিজরী ২০৪ হিজরী ৪. আহমদ বিন হাম্বাল (রহ) ১৬৪ হিজরী ২৪১ হিজরী। বিশিষ্ট হানাফী বিদ্বান শাহ ওলিউল্লাহ দেহেলভী (রহ) এর কথা যদি মেনে নেওয়া যায় যে ৪০০ হিজরীর আগে কোনো মাযহাব ছিল না, এবং ৪০০ হিজরীর পরে মানুষেরা মাযহাব সৃষ্টি করেছে, তার মানে এটা দাঁড়ায় যে আবু হানীফার ইন্তেকালের ২৫০ বছর পর হানাফী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। ইমাম মালেকের ইন্তেকালের ২২১ বছর পর মালেকী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। ইমাম শাফেরীর ইন্তেকালের ১৯৬ বছর পরে শাফেরী মাযহাব এবং ইমাম আহমাদের ইন্তেকালের ১৫৯ বছর পর হাম্বলী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ ইমামদের জীবিত অবস্থায় মাযহাব সৃষ্টি হয়নি। তাঁদের মৃত্যুর অনেকদিন পরে মাযহাবের উদ্ভব হয়েছে। আর একবার চিন্তা করে দেখুন মাযহাব বা দল সৃষ্টি করাতে কোরআন ও হাদিসে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মহামান্য ইমামরা ছিলেন কোরআন হাদীসের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসারী এবং ধর্মপ্রান মুসলিম। তাঁরা কি কোরআন হাদীসকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মাযহাব তৈরি করবেন যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, এটা কখনো হতে পারে? যারা বলে ইমামরা মাযহাব সৃষ্টি করেছেন তারা হয় মুর্খ নয় বেইমান। তারা ইমামদের প্রতি অপবাদ দেয়। #তাহলে প্রশ্ন হল, মাযহাব সৃষ্টি হল কিভাবে? ফারসীতে একটি প্রবাদ আছে ‘মান তোরা হাজী গো ইয়াম তু মোরা হাজী বোগো’ অর্থাৎ একজন লোক আর একজনকে বলছে, ভাই! যদিও তুমি হাজী নও তথাপি আমি তোমাকে হাজী সাহেব বলছি এবং যদিও আমি হাজী নই তুমি আমাকে হাজী সাহেব বলো। এভাবে একে অপরকেহাজী সাহেব বলে ডাকার ফলে আমরা দু-জনেই হাজী সাহেব হয়ে যাবো। এভাবেই আবু হানীফার অনুসারীদের অথবা তাঁর ফতোয়া মান্যে ওয়ালাদের অন্যেরা হানাফী একইভাবে ইমাম মালেকের ফতোয়া মাননে ওয়ালাদের মালেকী বলে ডাকাডাকির ফলে মাযহাবের সৃষ্টি হয়েছে। আজ যা বিরাট আকার ধারন করেছে। আবু হানীফা (রহ) বা তাঁর শিষ্যরা কখনো বলেননি আমাদের ফতোয়া যারা মানবা তারা নিজেদের পরিচয় হানাফী বলে দিবা। অথবা ইমাম মালেক বা শাফেয়ীও বলে যাননি যে আমার অনুসারীরা নিজেকে মালেকী বা শাফেয়ী বলে পরিচয় দিবা। ইমামরা তো বটেই এমনকি ইমামদের শাগরেদরা কিংবা তাঁর শাগরেদদের শাগরেদরাও মাযহাব সৃষ্টি করতে বলেননি। যখন আমাদের মহামতি ইমামরা মাযহাব সৃষ্টি করেননি এবং করতেও বলেননি তখন উনাদের নামে মাযহাব সৃষ্টি করার অধিকার কে দিল? আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন!

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ