Call

ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পাঠ করার ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে।মতভেদ রয়েছে। ইমামের পিছনে মুক্তাদীর উপর সূরা ফাতিহা পাঠ করা বা না করার ব্যাপারে আলেমদের তিনটি প্রসিদ্ধ মত রয়েছে। নিম্নে দলীল সহকারে এই মত তিনটির বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হল, এবং শেষে অধিক প্রাধান্যযুক্ত মতটি উল্লেখ করা হলঃ প্রথম মতঃ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺍﻷﻭﻝ ইমাম, মুক্তাদী ও একাকী ব্যক্তি সবার জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব। এই মতের লোকেরা নিম্নের হাদীছগুলোকে দলীল হিসেবে পেশ করেন। ১) রাসূল (সাঃ) বলেনঃ ﻻَ ﺻَﻼَﺓَ ﻟِﻤَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﻘْﺮَﺃْ ﺑِﻔَﺎﺗِﺤَﺔِ ﺍﻟْﻜِﺘﺎَﺏِ যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়বে না তার ছালাত হবে না। (ছহীহ] বুখারী, অধ্যায়ঃ আযান, অনুচ্ছেদঃ ইমাম ও একাকী ব্যক্তির ক্বেরাত পাঠ করা ওয়াজিব। হা/ ৭১৪। মুসলিম, অধ্যায়ঃ নামায, অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব। হা/ ৫৯৫) ২) অপর বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করবে অথচ তাতে উম্মুল কুরআন সূরা ফাতিহা পাঠ করবে না তার ছালাত অসম্পূর্ণ। রাসূলুল্লাহ। ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম কথাটি তিনবার বলেছেন। (মুসলিম) ৩) উবাদাহ বিন ছামিত (রাঃ) বলেনঃ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﺼﺒﺢ ﻓﺜﻘﻠﺖ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﻘﺮﺍﺀﺓ , ﻓﻠﻤﺎ ﺍﻧﺼﺮﻑ ﻗﺎﻝ ﺇﻧﻲ ﺃﺭﺍﻛﻢ ﺗﻘﺮﺅﻭﻥ ﻭﺭﺍﺀ ﺇﻣﺎﻣﻜﻢ ، ﻗﻠﻨﺎ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻱ ﻭﺍﻟﻠﻪ. ﻗﺎﻝ ﻻ ﺗﻔﻌﻠﻮﺍ ﺇﻻ ﺑﺄﻡ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ، ﻓﺈﻧﻪ ﻻ ﺻﻼﺓ ﻟﻤﻦ ﻟﻢ ﻳﻘﺮﺃ ﺑﻬﺎ নবী (সাঃ) একদা ফজরের নামায পড়লেন। তখন তাঁর উপর কিরাআত পাঠ করা কষ্টকর হয়ে গেল। নামায শেষে তিনি বললেনঃ আমি দেখছি তোমরা তোমাদের ইমামের পিছনে কিরাআত পাঠ করে থাক। আমরা বললামঃ হ্যাঁ আল্লাহর কসম! সে আল্লাহর রাসূল! (আমরা তা পাঠ করি)। তিনি তখন বললেনঃ তোমরা এরূপ করো না। তবে উম্মুল কুরআন তথা সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। কেননা যে ব্যক্তি তা পাঠ করবে না, তার নামায হবে না। (আবু দাউদ, নাসাঈ এবং অন্যান্য) এটি ইমাম শাফেয়ী (রঃ) এবং অন্যান্যেদর মত। দ্বিতীয় মতঃ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺍﻟﺜﺎﻧﻲ উঁচু আওয়াজ হোক বা নীচু আওয়াজ হোক কোন অবস্থাতেই মুক্তাদীর জন্য সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব নয়। এটি ইমাম আবু হানীফা (রঃ)এর মত। এই মতের সমর্থকদের দলীল এই হাদীছ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻪُ ﺇِﻣَﺎﻡٌ ﻓَﻘِﺮَﺍﺀَﺓُ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡِ ﻟَﻪُ ﻗِﺮَﺍﺀَﺓٌ “যার ইমাম রয়েছে, তার ইমামের ক্বিরাতই তার ক্বিরাত (হিসেবে যথেষ্ট)।” এ হাদীছের সনদ যঈফ (দুর্বল)। আরো কয়েকটি সূত্রে হাদীছটি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামহতে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু কোনটিই ছহীহ্ নয়। তৃতীয় মতঃ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺍﻟﺜﺎﻟﺚ নীচু আওয়াজ বিশিষ্ট ছালাতে সূরা ফাতিহা পড়া মুক্তাদির উপর ওয়াজিব, কিন্তু উঁচু আওয়াজ বিশিষ্ট ছালাতে নয়। দলীল: ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺟُﻌِﻞَ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡُ ﻟِﻴُﺆْﺗَﻢَّ ﺑِﻪِ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻛَﺒَّﺮَ ﻓَﻜَﺒِّﺮُﻭﺍ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗَﺮَﺃَ ﻓَﺄَﻧْﺼِﺘُﻮﺍ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻝَ ﺳَﻤِﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﻤَﻦْ ﺣَﻤِﺪَﻩُ ﻓَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ “ইমামকে তো নির্ধারণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করার জন্য। যখন তিনি তাকবীর দিবেন, তোমরাও তাকবীর দিবে। যখন তিনি ক্বেরাত পড়বেন তোমরা চুপ থাকবে। তিনি সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ্ বললে, তোমরা বলবে রাব্বানা লাকাল্ হামদ। (দেখুনঃ বুখারী, অধ্যায়ঃ আযান, অনুচ্ছেদঃ তাকবীর দেয়া ওয়াজিব ও নামায শুরু করা। হা/৬২৯। মুসলিম, অধ্যায়ঃ নামায, অনুচ্ছেদঃ মুক্তাদির ইমামের অনুসরণ করা। হা/ ৬২৫। হাদীছটির বাক্য নাসাঈ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। অধ্যায়ঃ নামায শুরু করা, অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ ( ﻭﺇﺫﺍ ﻗﺮﺉ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ..) এর ব্যাখ্যা। হা/ ৯১২) এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ইমাম যখন পড়ে তখন চুপ থাকতে হবে। সুতরাং যুহর ও আসর নামাযে ইমাম যেহেতু নিরবে কিরাআত পড়েন এবং মুক্তাদীগণ যেহেতু ইমামের কিরাআত শুনতে পান না, তাই তাদের কিরাআত পড়তে কোন বাঁধা নেই। প্রাধান্য প্রাপ্ত মতঃ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺍﻟﺮﺍﺟﺢ সকল মতের পক্ষের দলীল-প্রমাণ একত্রিত করলে দেখা যায় প্রথম মতটিই অধিক প্রাধান্যযোগ্য। ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻋﻠﻢ আল্লাহই ভাল জানেন।