স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে শিশু- কিশোর পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছিল। এর একটি উজ্জ্বল স্মারকের নাম ‘কিশোর বাংলা’। একাধারে সংবাদপত্র, সাপ্তাহিকী ও কিশোর সাহিত্য সাময়িকী ছিল এটি। গল্প-প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ছড়া-কবিতা-ফিচার কী ছিল না এতে? কিন্তু পরিতাপ, অবিস্মরণীয় ও স্মৃতিময় সেই ট্যাবলয়েড সাপ্তাহিকীকে বাঁচানো যায়নি। আজকের বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যের সব খ্যাতিমান আজও ‘কিশোর বাংলা’র কথা ভেবে আক্রান্ত হন নস্টালজিয়ায়। পত্রিকাটি পরিচালনার প্রসঙ্গ এলে নূরুল ইসলাম পাটোয়ারী, সৈয়দ মোহাম্মদ পারভেজ, সানাউল্লাহ নূরী, আহমদ জামান চৌধুরী, ড. মাহবুব হাসানসহ বহু নিবেদিতপ্রাণের কথা মনে পড়ে। ঢাকার বাইরে রাজশাহী থেকে প্রকাশিত অথচ গুণে-মানে ঢাকার পত্রিকার চেয়ে একটুও খাটো তো ছিলই না, বরং রাজশাহীর বহু পত্রিকাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল মাহমুদ আনোয়ার হোসেন সম্পাদিত ‘রংধুন’। কাছাকাছি সময়ে ঢাকা থেকে ‘কিশোর জগত’ বেরিয়েছিল মোখতার আহমেদের সম্পাদনায়। সত্যিকারের আধুনিক ও মানসম্পন্ন পত্রিকা প্রকাশের প্রয়াস থেকে সৃষ্টি হয়েছিল এগুলো। ঢাকার ‘কিশোর পত্রিকা’ ও ‘কিশোর তারকালোক’-এর নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয়তা আজ স্মৃতি। আজও স্মৃতিপটে ভাসে ‘ছোটদের কাগজ’, ‘দুরন্ত’ ও ‘মৌলিক’ ছোটদের পত্রিকা। ‘ধান শালিকের দেশ’, ‘শিশু’, ‘নবারুণ’ ও ‘সবুজ পাতা’ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চলছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ‘শিশু’, তারপর ‘সবুজ পাতা’। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে প্রকাশিত হচ্ছে ‘সাতরং’। অনেক প্রতিকূলতাকে সঙ্গী করে গুণ-মানের দিকে নজর রেখে এগিয়ে যাচ্ছে ‘টইটম্বুর’ ও ‘কথন’-এর মতো পত্রিকা। আসলে বেসরকারি উদ্যোগে ছোটদের পত্রিকাগুলোর সিংহভাগের অবস্থাই সঙ্গিন।