শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

পৃথিবীর দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ চ্যানেল টানেল

ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের সংযোগকারী টানেলটির কাজ শেষ হয় ১৯৯৪ সালে। ৩১ মাইল দীর্ঘ টানেলটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে বিশ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। টানেল নিয়ে লিখেছেন মোস্তাক চৌধুরী
অনেক বছর ধরেই ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডকে সংযোগকারী এ টানেলটি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। বেশ কয়েকবার এটি তৈরির উদ্যোগও নেয়া হয় কিন্তু বিভিন্ন যান্ত্রিক ও রাজনৈতিক প্রতিকূলতার কারণে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এটি তৈরির সময় বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটার কারণে প্রকৌশলীরা এ টানেলের মূল দুটি টিউবকে একটি ছোট টানেল দিয়ে যুক্ত করেছেন। যাতে পরে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সহজে বের হয়ে আসা যায়। ইংল্যান্ডের টেমস নদীর সড়ঙ্গ পথের কথা অনেকেই জানি আমরা। ফ্রান্সের সঙ্গে ইংল্যান্ডের যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে টেমস নদীর সুড়ঙ্গটি। আরো একটি সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে ইংল্যান্ড আর ফ্রান্সের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার জন্য। এ সুড়ঙ্গটির নাম ‘চ্যানেল-টানেল’।
বিশ্বের এটিই দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গ। সুবিখ্যাত ইংলিশ চ্যানেলের অন্তর্ভুক্ত চ্যানেল টানেল আটলান্ট্রিক মহাসাগরেরও অন্তর্ভুক্ত। এর দৈর্ঘ ৫০৫ কিলোমিটার আর এটি প্রশস্থ ৩.৩ মিটার। এই চ্যানেলে রয়েছে রেল যাতায়াতের ব্যবস্থা। ৫০.৫ কিলোমিটারের অর্ধেক রয়েছে ইংল্যান্ডের ভেতরে এবং অবশিষ্টাংশ ফ্রান্সের ভেতরে।  
বিশ্বখ্যাত চ্যানেল টানেলের নকশা করেছে সিটিজিএফএম নামের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র“প। ১৯৭৫ সালে প্রথম এমন একটি সুড়ঙ্গপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে সে সময় নানা সমস্যার কারণে বাস্তবায়ন নিয়ে উভয় পক্ষই একমত হতে পারেননি। অবশেষে ১৯৮৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চ্যানেল টানেল নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। সমুদ্রের নিচ দিয়ে চলে যাওয়ার কারণে বাইরে থেকে বোঝা যায় না পানির নিচ দিয়ে কত দীর্ঘ একটি সুড়ঙ্গ চলে গেছে। ১৯৯২ সালে ১৬১ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন যাত্রীবাহী ট্রেন ইংলিশ চ্যানেলের নিচ দিয়ে প্রথম বারের মতো ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ডে পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইউরো টানেলের রেলপথের যাত্রা। এটি চ্যানেল টানেল নামেও পরিচিত।  
১৯৮৬ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মিঁকেতরা এক যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে ৫০ কিলোমিটার প্রশস্ত ইউরো চ্যানেলের নিচ দিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তর রেল সুড়ঙ্গ ইউরো টানেল নির্মাণের অনুমোদন দেন। এ সুড়ঙ্গ পথে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য দুটি মূল টানেল সমবেত তিনটি টানেল রয়েছে। তৃতীয় টানেলটি সার্ভিস ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহƒত হয়।  ট্রেনগুলো চলে বিদ্যুৎশক্তিতে এবং এ টানেল অতিক্রম করতে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। মাটির তলদেশ থেকে ১৩০ ফুট মাটির নিচে সমুদ্রতলের উপরিভাগ থেকে সর্বোচ্চ ৩২০ ফুট নিচ দিয়ে এ টানেলটি নির্মিত।
চ্যানেল টানেল নির্মাণ করার পর থেকে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে এক নবযুগের সূচনা হয়েছে বলে উভয় দেশের অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় দশ হাজার টন মালামাল আনা-নেয়া করা হয় এ পথ দিয়ে। ১৯৯৪ সালের ৬ মে সর্বসাধারণের দর্শনের জন্য চ্যানেল ট্যানেলকে উš§ুক্ত করা হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু মানুষ দীর্ঘতম এ সুড়ঙ্গ পথটি দেখার জন্য সেখানে ভীড় করছে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ