পরে এটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
RohanVesper

Call

স্কুল হিসেবে যাত্রা শুরু করে সময় আর যুগের চাহিদা মেটাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হওয়ার ঘটনা বিশ্বে বিরল। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এমন ঘটনার জন্ম দিয়েছে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’। ২০ অক্টোবর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিনটি উদযাপনে গত বছরের মতো এবারও বর্ণিল সাজে সাজবে ক্যাম্পাস। আয়োজন করা হবে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের। শিক্ষা-ইমান-শৃক্সখলা মূলমন্ত্র নিয়ে দেশের এই উচ্চ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ধারণ করছে প্রায় দেড়শ’ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য। এই সমৃদ্ধময় দীর্ঘ সময়ে এটি নেতৃত্ব দিয়েছে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র মুক্তিযু্দ্ধসহ আরও অনেক জাতীয় ঘটনায়। আর জন্ম দিয়েছে ভাষাসৈনিক রফিক, কবি সুফি মোতাহার হোসেন, সাঁতারু ব্রজেন দাস, অর্থনীতিবিদ ভবতোষ দত্ত, শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান, অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান, সাংবাদিক আবদুল হামিদ, গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনসহ আরও অনেক দেশবরণ্যে ব্যক্তিকে। শিক্ষায়তনটির যাত্রা শুরু ১৮৬৮ সালে জমিদার জগন্নাথ রায় চৌধুরীর হাত ধরে ‘জগন্নাথ স্কুল’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। প্রতিষ্ঠার পরপর ‘জগন্নাথ স্কুল’ সবার নজরে আসে। অল্প সময়ের মধ্যেই এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ফলশ্রুতিতে ১৮৮৪ সালে এটিকে কলেজে উন্নীত করেন জমিদার-পুত্র কিশোরীলাল রায় চৌধুরী। এরপর প্রতিষ্ঠানটির শুধুই সামনে এগিয়ে চলা। ভালো ফলাফল আর বৈশিষ্ট্যের গুণে এই উপমহাদেশের কলেজগুলোর মধ্যে বিশেষ স্থান দখল করে জগন্নাথ। কলেজ হিসেবে এর অর্জনকে আরও সাফল্যমণ্ডিত করতে ১৮৮৭ সালে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে তৎকালীন শিক্ষা বিভাগ। শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে কলেজ থেকে স্কুল শাখাকে পৃথক করা হয়। স্কুল শাখাটির নামকরণ করা হয় কিশোরীলাল জুবিলী স্কুল। বর্তমানে যা কে. এল জুবিলী স্কুল নামে অধিক পরিচিত। ১৯২০ সালে জগন্নাথ কলেজের সব সম্পত্তি, দায়দেনা স্থানীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত হয়। পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে কলেজটিতে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করা হয়। তখন এটি ‘জগন্নাথ ইন্টারমিডিয়েট কলেজ’ নামে পরিচিতি পায়। এ ঘটনার ২৮ বছর পর অর্থাৎ ১৯৪৯ সালে কলেজটিতে আবারও স্নাতক পাঠ্যক্রম আরম্ভ হয়। ১৯৬৮ সালে জগন্নাথ কলেজ সরকারি কলেজে পরিণত হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে এখানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়। কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ হয় ১৯৮২ সালে। এরপর থেকে কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হতে থাকে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জগন্নাথকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে শতবর্ষী বটগাছ। গাছটির ঠিক সামনে রয়েছে সদ্য নির্মিত আধুনিক একাডেমী ভবন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, চিকিৎসাকেন্দ্র, ব্যবসা অনুষদসহ আরও বেশ কয়েকটি বিভাগ এই ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানটির ২১ হাজার শিক্ষার্থীকে তথ্য-প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করার লক্ষ্যে এই ভবনে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ইন্টারনেট সুবিধা। সাততলাবিশিষ্ট ভবনটির সামনে রয়েছে দেশের একমাত্র গুচ্ছ ভাস্কর্য। ভাস্কর রাসা ও তার কয়েকজন সহকর্মী নির্মিত এই ভাস্কর্যটির একপাশে চিত্রিত হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্ব। আর অপর পাশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম বর্বরতা তথা গণহত্যা। ভাস্কর্য থেকে সামনে এগুলেই চোখে পড়বে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার। এর উত্তরদিকে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাশ ভবন। এই ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটরিয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর দক্ষিণ দিকে রয়েছে পুরাতন বিজনেস স্টাডিজ ভবন। অবকাশ ভবনের পাশে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ। আর মসজিদের ঠিক সামনে গড়ে উঠেছে কলা ও সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদ ভবন। পুরাতন বিজনেস স্টাডিজ ভবন থেকে রাস্তা ধরে সামনে এগুলেই পাওয়া যাবে ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন। সাদা রংয়ের প্রশাসনিক ভবনের পেছনে রয়েছে বিজ্ঞান অনুষদ চত্বর ও ছোট্ট শিক্ষক ডরমেটরি ভবন। আর এই ভবনটির সীমানায় ১১.১১ একর আয়তনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শেষ হয়েছে।