কল্কি হবেন একজন অবতার যিনি কলিযুগে মানব সমাজের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হবেন। তিনি কি এসেছেন কেই বা এই কল্কি?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call
কালের গর্ভে পূর্ববর্তী নবী রসূলগণের উপর অবতীর্ণ সহীফা, কিতাব, অমীয় বাণীগুলো নানান বিকৃতির স্বীকার হলেও বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত বিকৃত ধর্মগ্রন্থগুলোতে উল্লেখিত মহাসত্যের সন্ধান পাওয়া যায়। বিকৃত ধর্মগ্রন্থগুলো ছাড়াও মানুষের কল্পনাপ্রসূত স্বহস্তে লিখিত ধর্মগ্রন্থগুলোতেও মহাসত্য আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা ও তাঁর প্রেরিত রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নবুওয়াতের প্রমাণ পাওয়া যায়।
বলাবাহূল্য, কোন গ্রন্থ, বই কিংবা কিতাবে কিঞ্চিৎ সত্য বচন বা উক্তি পাওয়া ঐ গ্রন্থ বা বইয়ের সঠিকত্বের প্রমাণ বহন করে না। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) নিদর্শন ও মানব রচিত ধর্মগ্রন্থগুলোতে পাওয়া যাওয়া, মহান আল্লাহ তাআলারই অসীম কুদরতের নিদর্শন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে বলেন, 'আর তাঁরই কাছে আছে অদৃশ্যের কুঞ্জি। তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। স্থলে ও জলে যা কিছু আছে, সে সম্পর্কে তিনি অবহিত। তাঁর অবগতি ব্যাতিত বৃক্ষ হতে একটি পাতাও ঝড়ে পড়ে না এবং ভূ-পৃষ্ঠের অন্ধকারের মধ্যে একটি দানাও পড়ে না, এমনিভাবে কোন সরস ও নিরস বস্তুও পতিত হয় না। এমন কোন জিনিস নেই যা এই উন্মুক্ত কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই।' (সূরা আন'আম, আয়াত ৫৯)। যদিও এ মহাসত্য তাদের ধর্মগ্রন্থে লেখার ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য ছিল না কিন্ত তাদের বিবেক ও দৃষ্টিশক্তির অগোচরে তারা তা লিপবদ্ধ করে নিয়েছে-যা তারা কখনোই উপলব্ধি করতে পারেনি।

'পুরান' একটি হিন্দুধর্ম সংক্রান্ত অজস্র ঐতিহ্যবাহী কথামালার একটি বৃহৎ রুপ। 
'কল্কি অবতার অউর মুহম্মদ সাহিব' ভারতীয় হিন্দু পন্ডিত বেদ প্রকাশ উপাধ্যায় কর্তৃক ১৯৬০ সালে প্রণিত (সরস্বত বেদান্ত প্রকাশ সংঘের তত্বাবধানে প্রকাশিত হয়, যা বাংলায় অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক গবেষণাপূর্বক সম্প্রসারিত ও বাংলায় অনুদিত হয়। মুসলিম মহলে বইটি ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত হলেও বইটি ইংরেজি, মালায়লাম, উর্দু, আরবী,তামিলসহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অনুদিত হয়। বেদ ও পুরানে বর্ণিত সূত্রানুসারে কল্কি অবতার ও নবী মুহাম্মদের মাঝে সাদৃশ্য উপস্থাপন করাই ছিল বইটির মূল বিষয়বস্তু)। 

কল্কি পুরানে আছে, 'শাম্ভলে বিষ্ণুয শস্যে গৃহে প্রাদুর্ভবামাহম' (কল্কি পুরান, ২য় অধ্যায়, শ্লোক-৪)। অর্থাৎ 'কলির কালে বিষ্ণু দাসের গৃহে, সম্ভল শহরে কল্কি অবতারের জন্ম হবে।' বিষ্ণু শব্দের আরবী অনুবাদ হচ্ছে 'আল্লাহ' আর দাসের আরবী 'আব্দ'। অর্থাৎ 'আব্দুল্লাহর ঘরে সেই মহাপুরুষ জন্ম নিবেন। তাছাড়া এখানে 'সম্ভল' যে শব্দ এসেছে তার আরবী হচ্ছে 'আমান' অর্থাৎ 'শান্তি'। আর একসাথে অর্থ করলে দাঁড়ায়, 'দারুল আমান'। পবিত্র মক্কা নগরীর আরেক নাম হচ্ছে 'দারুল আমান' বা শান্তির শহর।


কল্কি পুরানে আছে 'চতুর্ভি ভ্রাতৃভির্দেব! করিষ্যামি কলিক্ষয়ম' (কল্কি পুরান, ২য় অধ্যায়, শ্লোক-১৫)। অর্থাৎ 'তার ভ্রাতৃতুল্য চারজন সহকর্মী হবেন, তাদের সহযোগে তিনি কলি (জাহেলিয়াত) ক্ষয় করবেন।'

এমন আরও অনেক শ্লোক বেদ ও পুরানে রয়েছে। সংক্ষিপ্ত আলোচনার নিমিত্তে সেসব শ্লোক উল্লেখ করা থেকে বিরত থেকে সামনে এগোচ্ছি।

উপরিউক্ত শ্লোক দু'টি স্পষ্টত নির্দেশ করে সমগ্র বিশ্বে জগতের জন্য রহমত স্বরুপ মহান আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা কর্তৃক প্রেরিত হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে। আর ্তিনি এসেছেন ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র মক্কা নগরীতে। তার নাম 'আবু আল-কাশিম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মোত্তালিব ইবনে হাশিম। 

সনাতন ধর্ম অনুযায়ী কলি যুগের সময়কাল হল ৪,৩২,০০০ বছর, যা পন্ডিতদের গবেষণা অনুযায়ী খৃষ্টপূর্ব ৩,১০২ অব্দ থেকে শুর হয়েছে এবং এখন কেবল ৫,০০০ বছর চলছে। সেই হিসাব অনুযায়ী, কল্কি অবতারের জন্ম গ্রহণ করতে এখনো অনেক দেরি। পন্ডিত শ্রী যুক্তেশ্বর গিরি দাবি করেন, এই দীর্ঘ ৪,৩২,০০০ বছর সময় কালের মাঝেও অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সময়কালের চক্র বিদ্যমান।
তবে পন্ডিত বেদ প্রকাশ উপাধ্যায় এবং অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের এসব যুক্তি অগ্রাহ্য করেছেন।

ধন্যবাদ
তথ্যসূত্রঃ ১. তাফসিরে ইবনে কাসীর। ২. উইকিপিডিয়া। ৩. দৈনিক ইনকিলাব (ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮)। ৪. দৈনিক সংগ্রাম (নভেম্বর ২১, ২০১৮)। ৫. কল্কি অবতার এবং মুহাম্মদ সাহেব, অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। ৬. অন্যান্য আরও বেশ কিছু আর্টিকেলস এর সহযোগীতা নেয়া হয়েছে (তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি)।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ