আমরা জানি, দুই সমুদ্র মিলিত হয় কিন্তু মিশ্রিত হয় না, সত্যিই কি মিশ্রিত হয় না? জানতে চায়।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

হ্যা সত্যই মিলিত হয় না ।কোরানেও তাই বলা হয়েছে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, 'নিশ্চয় আকাশ-জমিন সৃষ্টি ও রাতদিন বিবর্তনের মাঝে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।' (সূরা আলে ইমরান : ১৯০)। সমুদ্রের মাঝেও রয়েছে অগণিত নেয়ামত আর আশ্চর্য সব নিদর্শন। তেমনি একটি মহা কুদরতি নিদর্শন হচ্ছে দুই সমুদ্রের সংযোগ। দুই সমুদ্রের পানি পরস্পর সম্মিলিত হয়েছে কিন্তু কী আশ্চর্য তা একাকার হয়ে মিশে যায়নি। একটি আরেকটি থেকে সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছে। উভয়ের মাঝে আছে অলঙ্ঘনীয় প্রাচীর। আল্লাহ তায়ালা এ কুদরতি নিদর্শন বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, 'তিনিই দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেছেন সমান্তরাল করে। একটি সুমিষ্ট ও তৃষ্ণা নিবারক এবং অন্যটি লোনা ও বিস্বাদ। আর উভয়ের মাঝে রেখেছেন এক অন্তরাল ও দুর্ভেদ্য প্রাচীর। (সূরা ফুরকান : ৫৩)। অন্যত্র এসেছে, 'তিনি পাশাপাশি দুই দরিয়া প্রবাহিত করেছেন। উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক অন্তরায় (প্রাচীর) যা তারা অতিক্রম করে না।' (সূরা রহমান : ১৯-২০)। কোরআনে বর্ণিত এ কুদরতি নিদর্শন যুগে যুগে প্রমাণিত হয়েছে। আধুনিককালে Marine Science I Oceanology তথা সমুদ্রবিজ্ঞান এর প্রমাণ পেয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন সমুদ্রে এর বাস্তব চিত্র দেখা গেছে। আটলান্টিক মহাসাগরকে ভূমধ্যসাগরের পানির সঙ্গে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। কিন্তু উভয়ের মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। ভূমধ্যসাগরের পানি অধিক লবণাক্ত, বিস্বাদ ও ঘন। ভূমধ্যসাগরের পানি জিব্রাল্টার সেল বা সাগরের তলের উঁচু ভূমির ওপর দিয়ে আটলান্টিক সাগরের ভেতরে শতাধিক কিলোমিটার প্রবেশ করেছে এবং তা এক হাজার মিটার গভীরে পৌঁছার পরও তার উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যে সামান্য পরিবর্তন হয়নি। অথচ উভয়ের মাঝে রয়েছে প্রবল খরস্রোত ও উত্তাল তরঙ্গ। কিন্তু পানি মিশছে না। যেন উভয়ের মাঝে পর্দা পড়ে আছে। এ অন্তরায় বর্ণনা প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এসেছে, 'বল কে দুই সমুদ্রের মাঝে অন্তরায় রেখেছেন? সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে কি কোনো উপাস্য আছে? মূলত তাদের অধিকাংশই জানে না।' (সূরা নামল : ৬১)। এভাবে আলাস্কা উপসাগরের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে দুই ধরনের পানির স্রোতরেখা। এ স্রোতরেখায় প্রবহমান পানি একটি আরেকটির সঙ্গে মিশে না। প্রশান্ত মহাসাসাগরের শাখা হচ্ছে আলাস্কা উপসাগর। বিজ্ঞানীদের মতে এ পানি না মিশার কারণ হচ্ছে তাতে দুই মহাসাগরের সংযোগ ঘটেছে। উপসাগরটির মাঝ বরাবর পানির প্রবাহ আলাদা হয়ে বয়ে যাচ্ছে। সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. মনির খাশুকজি এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি বাহরাইন উপসাগরের জলস্রোতে এরকম একটি স্থান দিয়ে অতিক্রম করেছিলাম। নৌকায় চলতে চলতে সেই বাঁধ (প্রাচীর) বরাবর গেলাম। খুব কাছে থেকে উভয় দিকের পানি মুখে দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলাম। পরীক্ষায় দেখা গেল, উভয় দিকের পানি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কী আশ্চর্য! একটার পানি লোনা, বিস্বাদ কিন্তু অপরটির পানি সুপেয়, মিষ্ট ও তৃষ্ণানিবারক। সমুদ্রের মাঝে এটা এক বিস্ময়কর কুদরত, যা মহান আল্লাহ তায়ালার অলৌকিক ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। আধুনিক কালের বিজ্ঞানীরা এতে বিস্ময়াবিষ্ট হয়েছেন। কোরআনের বিশুদ্ধতা অকপটে স্বীকার করেছেন। অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ফ্যান্সের প্রথিতযশা সমুদ্রবিজ্ঞানী জ্যাক ভি কোস্টা (Jack V Costa)। সমুদ্রের তলদেশের বিভিন্ন আবিষ্কারে তার অবদান অনস্বীকার্য। দুই সমুদ্রের মিলনদৃশ্য নিয়ে তিনি ব্যাপক গবেষণা করেছেন। তিনি তার রিসার্চে উপলব্ধি করেছিলেন যে, রোম সাগর ও আটলান্টিক মহাসাগর রাসায়নিক মিশ্রণের গুণাবলি ও মাত্রা দিক দিয়ে একটি আরেকটি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি এ বাস্তবতা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার জন্য জিব্রাল্টারের দুই সমুদ্রের সংযোগস্থলে গবেষণা চালালেন। তিনি দেখলেন, জিব্রাল্টারের উত্তর তীর (মারুকেশ) আর দক্ষিণ তীর (স্পেন) থেকে আশ্চর্যজনকভাবে একটি মিষ্টি পানির ঝরনা উথলে ওঠে। এ ঝরনাটি উভয় সমুদ্রের মধ্য দিয়ে ৪৫০ সূক্ষ্ম কোণে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হয়ে চিরুনির দাঁতের আকার ধারণ করে বাঁধের মতো কাজ করে। ফলে রোম সাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের পানি একটি আরেকটির সঙ্গে মিশে না। পরে তাকে আল কোরআনে বর্ণিত আয়াতটি শোনানো হলো। তিনি দেখলেন, কোরআনে বর্ণিত তথ্যের সঙ্গে তার গবেষণার সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। জ্যাক ভি কস্টা চিন্তা করলেন, ১৪০০ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর মতো নিরক্ষর মানুষ সমুদ্রের তলদেশ পর্যবেক্ষণ করে এসব তথ্য কোরআনে লিখতে পারেন না। তাহলে কোরআনে সমুদ্র বিজ্ঞানের এ মহা তথ্য কীভাবে এলো? নিশ্চয় আল কোরআন ঐশী সত্য গ্রন্থ। এটা কোনো মানব রচিত নয়। Jack V Costa মুসলমান হয়ে গেলেন। পবিত্র কোরআনের এমন অলৌকিকতা সর্বকালে প্রমাণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'নিশ্চয় আল কোরআন মীমাংসাকারী বাণী এবং এটি নিরর্থক নয়।' (সূরা আত তারিক : ১৩-১৪)। অর্থাৎ পবিত্র কোরআনের প্রতিটি বিষয় তাৎপর্যপূর্ণ এবং বাস্তবতার বিচারে সঠিক ও গুরুত্বপূর্ণ। দুই সমুদ্রের মিলন সম্পর্কিত বিষয়টি আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায় সঠিকত্বের স্বীকৃতি পেয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে 'মারাজাল বাহরাইন' শব্দ ব্যবহার করেছেন। 'মারাজা' শব্দের অর্থ হচ্ছে, স্বাধীনভাবে প্রবাহিত করা। ছেড়ে দেয়া। অর্থাৎ দুই সমুদ্রের পানি একই সঙ্গে প্রবাহিত হচ্ছে কিন্তু মাঝখানে আছে দুর্ভেদ্য প্রাচীর, যার ফলে তারা পরস্পর মিশ্রিত হতে পারছে না। প্রত্যক্ষদর্শী বিজ্ঞানীরা প্রাচীরের ব্যাপারটি স্পষ্ট লক্ষ করেছেন। পবিত্র কোরআনে 'বাঁধ বা অন্তরালের' কথা এসেছে। স্মর্তব্য যে, দুই সমুদ্রের মিলন দৃশ্য বাংলাদেশেও দেখা গেছে। নদীপথে চাঁদপুর যেতে 'রাজবাড়ী বহর' নামক স্থান পড়ে। এ স্থানে দেখা যায়, পদ্মা ও মেঘনার পানি পাশাপাশি প্রবাহিত হচ্ছে, কিন্তু কেউ কারও সঙ্গে মিশে যাচ্ছে না। পদ্মার পানি ঘোলাটে আর মেঘনার পানি কুচকুচে কালো। লক্ষ থেকে এ দৃশ্য স্পষ্ট দেখা যায়। পাঠক, অনুসন্ধানী হলে সেখানে গিয়ে বাস্তবে এ দৃশ্য দেখে আসতে পারেন। এছাড়াও বরিশালের 'বলেশ্বর নদী' থেকে দুইটি ধারা প্রবাহিত হয়েছে। এক ধারার পানি লোনা ও বিস্বাদ এবং অন্য ধারার পানি মিষ্ট ও সুস্বাদু। (তাফসিরে উসমানি : ৩/৩১৯)। বিষয়টি আমাদের সাধারণ মনে হলেও সমুদ্রবিজ্ঞানীদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ও আশ্চর্যজনক। পৃথিবীতে আল্লাহর কুদরতি নিদর্শনাবলির অন্ত নেই। পাহাড়-পর্বত, আকাশ-জমিন, নদ-নদী, চন্দ্র-সূর্য, তরুলতা ও পাখ-পাখালি সবই আল্লাহর কুদরতের সৃষ্টি। এগুলোর সৃষ্টি মানুষের কল্যাণার্থে। পাশাপাশি এতে উপদেশও নিহিত আছে। জ্ঞানীরা এসব দেখে আল্লাহর পরিচয় লাভ করে। ঈমান মজবুত করে।

http://bn.mtnews24.com/exclusive/34131/test.php
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ