যখন ঢাকার চারদিকে পরিবেষ্টিত ফাঁস নজিরবিহীন গতিতে ঘড়ির কাঁটার মতো নিখুঁতভাবে সংকুচিত হয়ে আসছে, তখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এ এম মানেকশ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চল কমান্ডের উদ্দেশে প্রচারিত এক রেডিও বার্তায় পাকিস্তানি বাহিনীর অবশ্যম্ভাবী আত্মসমর্পণের কথা পুনরায় ব্যক্ত করেন। এর ফলে পাকিস্তানি বহু কমান্ডার এবং সৈন্যের মনে ব্যাপকভাবে ভীতির সঞ্চার হয়। একটি মাত্র ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয় রাজধানী ঢাকায়, যেখানে লে. জেনারেল নিয়াজি অহমিকার সঙ্গে বললেন, ‘আমার মৃতদেহের ওপরেই কেবল ঢাকার পতন হতে পারে।’ এ ঘোষণা পাকিস্তানিদের নিজেদের বাসভূমে প্রচারণা অভিযানের মূল্য বহন করে। বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর দ্বিতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি হচ্ছেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। তিনি পাকিস্তানি সৈন্যদের নিরাপদ অপসারণের ব্যবস্থা করার জন্য জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানান। কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া খান তা বাতিল করে দেন। লে. জেনারেল নিয়াজি হচ্ছেন পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বা প্রেসিডেন্টের প্রতিভূ মাত্র। তিনি শুধু জেনারেল ইয়াহিয়ারই প্রতিধ্বনি করেন। তাঁর আশপাশে কিংবা বাংলাদেশের সর্বত্র যা ঘটে চলেছে, সে সম্পর্কে তিনি নির্বিকার।
১৬ ডিসেম্বরে সূর্য উদিত হয় দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রসঙ্গ নিয়ে। ১৫ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর বোমাবর্ষণ সাময়িকভাবে বন্ধ করার জন্য লে. জেনারেল নিয়াজি স্বাক্ষরিত প্রস্তাবের সময়সীমা হচ্ছে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত। তদনুযায়ী একটি রেডিও-তরঙ্গ ব্যান্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লে. জেনারেল নিয়াজিকে আত্মসমর্পণ করা বা না করা সম্পর্কে তাঁর সিদ্ধান্ত ওই ব্যান্ডে প্রচার করার শর্তারোপ করা হয়। অবরুদ্ধ পাকিস্তান পূর্বাঞ্চল কমান্ড চূড়ান্ত সময়সীমা আরও ৬ ঘণ্টা বাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করলে জেনারেল মানেকশ তাঁর সম্মতি সকাল ১০টার সময় বেতারযোগে অবহিত করেন।