বনি আদমের জন্য কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্ন* হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) নবী করিম (সা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, (কিয়ামতের দিন) মানুষের পা একবিন্দু নড়তে পারবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত তার নিকট এই পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা না হবে- ১. নিজের জীবনকাল সে কোন কাজে অতিবাহিত করেছে? ২. যৌবনের শক্তি-সামর্থ কোথায় ব্যয় করেছে? ৩. ধন-সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছে? ৪. কোথায় তা ব্যয় করেছে? ৫. এবং সে (দ্বীনের) যতটুকু জ্ঞানার্জন করেছে সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে?


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

সূনান আত তিরমিজী অধ্যায়ঃ ৩৫/ কিয়ামাত ও মর্মস্পর্শী বিষয়, হাদিস নম্বরঃ (২৪১৬) সহীহাহ (৯৪৬), তা’লীকুর রাগীব (১/৭৬), বাওযুন নায়ীর (৬৪৮) হাদিসের মানঃ সহিহ।

কেয়ামতের দিন কোনো আদম সন্তানের পা একটুও নড়াতে পারবে না যতক্ষণ না পাঁচটি ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে,
তার জীবনকাল কিভাবে অতিবাহিত করেছে।
যৌবনের সময় নিজেকে কি কাজে নিয়োজিত রেখেছে।
অর্জিত ধন-সম্পদ কোথায় থেকে এসেছে।
এবং তা কোন কাজে ব্যয় করেছে।
যে জ্ঞানার্জন করেছে, সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে।

উল্লেখিত হাদিসের ৫টি বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য হলো-

=> জীবনকালমানুষের জীবন মহান আল্লাহর তাআলার দান। আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর হুকুম পালনের জন্যই এ জীবন দান করেছেন। সে কারণেই মানুষের উচিত রঙ-তামাশায় জীবনকাল অতিবাহিত না করে আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা।

=>যৌবনকালদীর্ঘ জীবনে মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো যৌবনকাল। যৌবনের তাড়নায় মানুষ যা ইচ্ছা তাই করার কমবেশি ক্ষমতা রাখে। আর এ কারণে যৌবনের ইবাদত ও হুকুম পালন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়

যারা বুদ্ধিমান তারা যৌবনে আল্লাহর নির্দেশ পালন করে। যৌবনে আল্লাহ হুকুম পালনকারী যুবক বার্ধক্যে আল্লাহর হুকুম পালনে অক্ষম হয়ে পড়লেও আল্লাহ তাআলা যৌবনের ইবাদত তথা হুকুম পালনের মতো প্রতিদান দিয়ে দেবেন।

আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলা বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বান্দার যৌবনের কর্মকাণ্ডের হিসাব গ্রহণ করবেন। সুতরাং বান্দার উচিত যৌবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়কে আল্লাহর রাস্তায় কুরবানি করা।

=>আয়ের ব্যপারে সতর্কতা অবলম্বনআল্লাহ তাআলা মানুষকে হালাল পথে উপার্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যায় পন্থায় সম্পদ অর্জনকে হারাম করেছেন। এ নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও মানুষ অন্যায় পথে সম্পদ আহরণ করে থাকে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা বিচার দিবসে সম্পদের আয়ের উৎসের হিসাব গ্রহণ করবেন।

কেননা মানুষ লোভের বশবতী হয়ে হালালের বিবেচনা না করেই হারাম উপায়ে অর্থ উপার্জন করতে থাকে। সুতরাং যাদের মাঝে হালাল-হারামের এ জবাবদিহিতা কাজ করবে, তারা নিঃসন্দেহে সফলতা লাভ করবে। আর এমন কোনো ব্যক্তি নেই যাকে বিচার ফয়সালার দিন আয়ের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে না।

=>ব্যয়ের খাতমানুষের সম্পদও মহান আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। মানুষ তার এ নেয়ামত সম্পদ কোন পথে খরচ করেছে সে হিসাবও গ্রহণ করবেন স্বয়ং আল্লাহ। কেননা সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাআলা।সুতরাং আল্লাহ যাকে সম্পদ দান করেছেন, তাকে এ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের নেয়ামতও দান করবেন। যারা এর সুষ্ঠু ব্যবহার না করে অন্যায় পথে খরচ করবে তাদেরকে আল্লাহ কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। কোনো বনি আদম সম্পদের হিসাব দেয়া ছাড়া এক কদমও যেতে পারবে না।

=>জ্ঞানানুযায়ী আমলজ্ঞানার্জন করা ফরজ ইবাদত। জ্ঞানার্জন করার পর সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করাও ফরজ। যারা সত্যের জ্ঞান অর্জন করা সত্ত্বেও সঠিক পথে চলবে না তারা জালেম বা অত্যাচারী। আর এ অত্যাচারী ব্যক্তিকে তার আমলের হিসাব যথাযথভাবে দিতে হবে।

সুতরাং প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত উপরোল্লেখিত হাদিস অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করা। যেহেতু হিসাব নিকাশের দিন কাউকেও এ পাঁচটি বিষয়ের হিসাবের ব্যাপারে ছাড় দেয়া হবে বলে বিশ্বনবি ঘোষণা দিয়েছেন। সেহেতু প্রত্যেকের উচিত উল্লেখিত বিষয়ে জবাবদিহিতার মানসিকতায় নিজেদের তৈরি করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের আলোকে এ পাঁচটি বিষয়ের প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ করে জবাবদিহিতার মানসিকতায় জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

হাদিসটির ব্যাখ্যা :
১. মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদতের জন্য, যেমন কুরআনে বলা হয়েছে
অর্থ: “আমি মানুষ ও জ্বীনকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য।”
ইবাদত করতে প্রতিটি মানুষ অথবা জ্বীনকে জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর দাসত্ব বা গোলামী করার কথা বলা হয়েছে। কারণ ইয়াবুদুন শব্দটি আবদুন শব্দ হতে নির্গত আর আব্দুন শব্দের অর্থ হলো গোলাম বা দাস। কাজেই দাসত্ব বা গোলামী জীবনের কোন একটি সময় বা মুহুর্ত পর্যন্ত সীমিত নয় বরং সমস্ত জীবন ব্যাপী এ দায়িত্ব।
অন্যত্র বলা হয়েছে
অর্থ: “তোমরা কি মনে করেছ আমরা তোমরাদেরকে অকারনেই সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদেরকে কখনই আমার নিকট ফিরে আসতে হবে না। (মুমিনুন-১১৫)
তাই দেখা যায় পৃথিবীর প্রতিটি চাকচিক্য ময় বস্তু মানুষের পরীক্ষার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এ পরীক্ষার সফলতা বা ব্যর্থতার কেন্দ্র করেই শুরু হবে পরকালের জীবন। সত্যি কথা বলতে কি ছোট্র একটি প্রশ্নের উত্তর সমস্ত জীবন ব্যাপী বিস্তৃত।
২. প্রতিটি বস্তুরই একটি উৎকৃষ্ট অংশ থাকে আর জীবনের উৎকৃষ্ট অংশ হচ্ছে যৌবন কাল। নিম্নে চারটি গুণের পরিপূর্ণ সমাবেশ ঘটে এই যৌবনে।
১. চিন্তা শক্তি
২. ইচ্ছা শক্তি
৩. মনন শক্তি
৪. কর্ম শক্তি
অতএব দেখা যাচ্ছে ভাল অথবা মন্দ যে কাজই করা হোকনা কেন যৌবন ই তার প্রধান উদ্যোক্তা। কারন মানুষ চুরি, ডাকাতি, জুলুম, নির্যাতন, অহংকার ইত্যাদি সব কিছুই করে যৌবন কালে দেখা যায়। যৌবনের দুধর্ষ এক লোক বার্ধক্যের কষাঘাতে নেহায়েত গোবেচারায় রুপান্তরিত হয়। কারন বার্ধক্য মানুষকে নিরীহ করে দেয়। তাই বার্ধক্য যেমন অন্যায় অত্যাচারের পথ রুদ্ধ করে দেয় তদ্রুপ যতো সৎ নিয়ত এবং প্রচেষ্টাই থাকে না কেন বার্ধক্য আসার পর কোন একটি ভাল কাজ ও সুচারু রুপে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়, এখানে বার্ধক্য তার প্রধান অন্তরায়। এজন্য যৌবন এত গুরুত্বপূর্ণ।


হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউস (র.) হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে 
তিরমিযী ৩৫ বাবু মাজা'আ ফি শানিল হিসাবি ওয়াল ক্বিসাসি, ২৩৪০ (হাদিসটির মান সহিহ)


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ