খাদ্য লবণ ও বালির মিশ্রন থেকে উপাদানগুলো পৃথক করার পদ্ধতিঃ-
তত্ত্বঃ লবণ বা খাদ্য লবণ(সোডিয়াম ক্লোরাইড NaCl) হচ্ছে একটি আয়নিক যৌগ। এটি পানিতে সমপূর্ণ দ্রবীভূত হয়ে ধাতব পজেটিভ আয়ন ও অধাতব নেগেটিভ আয়ন প্রদান করে।
অন্যদিকে বালি একটি অর্ধধাতব সিলিকন অক্সিজেনের পলিমার। এটি কঠিন ও পানিতে অদ্রবণীয়।
কাজেই লবণ ও বালির মিশ্রনে পানি ঢাললে লবন দ্রবীভূত হবে কিন্তু বালি হবেনা। এভাবে বালি পৃথক করা যাবে। এবার দ্রবনকে বাষ্পীভূত করলে লবণও ফিরে পাওয়া যাবে।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিঃ দুটি বীকার, পানি, স্টান্ড ও ধারক, ত্রিপদী স্টান্ড, বুনসেন বার্নার, দিয়াশলাই, ফিল্টার পেপার, থিসেল ফানেল ইত্যাদি
উপাদানঃ লবন ও বালির মিশ্রন।
কার্যপ্রণালীঃ-
১। প্রথমে একটি বীকারে মিশ্রণ নিয়ে তাতে পরিষ্কার পানি দিয়ে নাড়ন কাঠি দিয়ে নেড়ে দ্রবন করি। লবন আয়নিক যৌগ হওয়ায় সহজে পানিতে দ্রবীভূত হবে। এভাবে লবন ও পানির দ্রবন তৈরি হবে। কিন্তু বালি আয়নিক না হওয়ায় দ্রবীভূত হবেনা কিন্তু পানিকে ঘোলা করে ফেলবে।
২। এবার বীকারটিকে ৩০ মিনিট রেখে দেই। দেখা যাবে বালি আসতে আসতে তিথিয়ে বিকারের তলায় জমা হয়ে পানি পরিস্কার হচ্ছে। প্রয়োজন হলে আরও কিছুক্ষন রাখা যেতে পারে যতক্ষন না উপরের পানি পরিস্কার দেখা যায়।
৩। এবার আরেকটি বীকার নিয়ে তার মুখে স্টান্ডের সাহায্যে ফানেল যুক্ত করি।
৪। একটি ফিল্টার কাগজ চার ভাজ করা তিন ভাজ রেখে এক ভাগ মুড়িয়ে ফানেলাকৃতি তৈরি করে ফানেলে এমন ভাবে বসাই যাতে ফানেলের গায়ের সাথে মিশে থাকে, প্রয়োজনে পানি দ্বারা ভিজিয়ে দিলে ফানেলের সাথে আটকে থাকবে।
৫। এবার মিশ্রন বিকার থেকে আসতে আসতে ফানেলে মিশ্রন ঢেলে পরিস্রাবন করি। পরিস্রাবন শেষে নিচের বীকারে পরিস্কার লবন ও পানির দ্রবন পাওয়া যাবে। এবং প্রথম পাত্রের তলায় অধিকাংশ বালি পাওয়া যাবে, এছাড়া ফিল্টার পেপারেও বালি পাওয়া যাবে। বালি গুলো একত্র করে শুকিয়ে নিলেই মূল শুষ্ক বালি পৃথক পাওয়া যাবে। এভাবে বালি পাওয়া যাবে।
৬। এবার পরিস্রুতসহ বীকার বা লবন পানির দ্রবনের বীকারকে একটি ত্রিপদী স্টান্ডের উপর বসায়।
৭। বীকারের তলায় বুনসেন বার্নারে আগুন জালিয়ে দ্রবনটিকে উত্তপ্ত করতে থাকি যাতে পানি বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে যায়।
৮। এক সময় বাষ্পীভবনের ফলে সকল পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যাবে। কিন্তু লবণের গলণাংক ও স্ফুটনাংক অনেক বেশি হওয়ায় তা উড়ে যাবেনা এমনকি তাপে গলেও যাবেনা তাই কঠিন লবন হিসাবে বীকারের তলায় জমে থাকবে। এভাবে লবন ফিরে পাওয়া যাবে।
পর্যবেক্ষনঃ মিশ্রন পানির দ্রবন রেখে দিলে তলানি জমতে দেখা যাবে।
উপরের পানি পরিস্কার হতে শুরু করছে।
বাষ্পীভবনের শেষ দিকে বীকারের তলায় সাদা গুড়ায় ন্যায় বস্তু দেখা যায়।
সির্ধান্তঃ তলানি ও ফিল্টারে জমা কঠিন বস্তুটি শুষ্ক অবস্থায় বালির বৈশিষ্ট্য যুক্ত তাই বলা যায় এটি মিশ্রনের বালি।
এবং বাষ্পীভবন থেকে প্রাপ্ত কঠিন পদার্থ সাদ গুড়া বা অনিয়ত স্ফটিকের গুড়ার নয় কঠিন পদার্থ যা স্বাদে লবণাক্ত। কাজেই এটি মিশ্রনের লবন।
সতর্কতাঃ-
১। মিশ্রনে পরিস্কার বিশুদ্ধ পানি দিতে হবে।
২। বালিযুক্ত দ্রবনকে যথেষ্ট সময় রেখে তিথাতে হবে তাহলে ফলাফল ভাল হবে বেশি।
৩। সতর্কতার সাথে ফিল্টার সেটাপ ও ফিল্টার করতে হবে যাতে ফিল্টার কাগজ ছিড়ে না যায় এবং দ্রবন পানি ধীরে ধীরে ঢালতে হবে যাতে উপচে না পড়ে।
৪। বীকারে সতর্কতার সাথে তাপ দিতে হবে। বার্নার যাতে পড়ে না যায় বা বার্নারেল স্পিরিট যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৫। বাষ্পীভবনের সময় পাশে দাহ্য বস্তু যাতে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।